সিলেবাস শেষ করার নিশ্চয়তা চাই
আমাদের বাংলাদেশে গোড়া কেটে আগায় পানি দেওয়া হয়। সিলেবাস শেষ না করেই প্রাইভেট কোচিং বন্ধ করা নিয়ে টানাহ্যাচড়া। কোচিং বন্ধ করার আগে সিলেবাস শেষ করার নিশ্চয়তা চাই।
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যেই ক্লাস হয় তা দিয়ে সিলেবাস শেষ হয়না। এতে অনেকসময় শিক্ষকেরও গাফিলতি থাকে। শিক্ষার্থীরাও কিছু ক্ষেত্রে দায়ী।
কোনকোন শিক্ষক ইচ্ছে করে সিলেবাস শেষ করেন না। যাতে ওনার কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়। তাই সিলেবাস শেষ করার জন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের বাড়ীতে ছোটে।
কেউ কেউ আবার কোচিং সেন্টারগুলোতে ভীড় জমায়। এসব কোচিং সেন্টারে পড়তে গুণতে হয় মোটা অংকের টাকা।
কিন্তু আমারা কখনো এটা ভাবিনা যে তারা কেন কোচিংয়ে গেল। তারা কি ক্লাসে পড়েনা? পড়লে আবার কোচিংয়ে যেতে হয় কেন?
একটু মাথা খাটালেই উত্তরটা নিজেই পেয়ে যাবেন। দায়ে পড়েই প্রাইভেট কোচিং করতে হয়। কারণ, দিন শেষে রেজাল্ট খারাপ হলে এর পেছনের কারণ কেউ জানিতে চাইবেনা।
আমরা জাতি হিসেবে এমনই। আমরা শুধু ভালো হয়েছে কিনা জানতে চাই। ভালো হলে বাহবা দেই বা না দেই খারাপ হলে তিরস্কার করার মাপ আমাদের কাছে নেই।
তাই নির্মম তিরস্কারের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রাইভেট কোচিংয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিবাবকদের মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার
আমি একটা কেজি স্কুলের শিক্ষক। কিছু অভিবাবকের প্রশ্ন শুনলে মনে খুব দুঃক্ষ লাগে। তারা এসেই জিজ্ঞেস করে রোল নম্বর কত হয়েছে?
আচ্ছা আপনি রোল নম্বর দিয়ে কি করবেন? এটা জিজ্ঞেস করেন ফলাফল কিরকম হয়েছে? অথবা জিজ্ঞেস করেন গড়ে কত নম্বর পেয়েছে?
অভিবাবকদের এমন মানসিকতাও কোচিং সেন্টারের চাঙ্গা হওয়ার আরেকটি কারণ।
কেউ কেউ অন্যের বাচ্চার সাথে নিজের বাচ্চা তুলনা করেন। অন্যের বাচ্চার থেকে কম নম্বর ফেলেই বকা শুরু করেন।
এটা ঠিক যে অন্য বাচ্চাটা ভালো করেছে। কিন্তু আপনার বাচ্চা তো খুব একটা খারাপ করেনি। হয়তো ৫-১০ নম্বর কম পেয়েছে।
কিন্তু আমরা এটা যাচাই করিনা যে আমার বাচ্চা কি শিখলো। সে কি মুখস্থ করে পরীক্ষায় লিখে নম্বর বেশি ফেল। নাকি বাস্তবসম্মত ভাবে শিখেছে।
আমরা শুধু বুঝি বেশি নম্বর।
আমাদের কাছে নম্বরই সব, শিখা কোন বিষয় নয়। আমাদের দেখা দরকার বাচ্চা তার বইয়ের পড়াটাকে বাস্তবভাবে প্রয়োগ করতে পারে কিনা।
আমাদের অভিবাবকদের এমন মানসিকতার পরিবর্তন করলে কোচিং সেন্টারের প্রতি ঝোঁক কমে যেত।
আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা
আমার দেখা এক শিক্ষক ছিলেন। নাম বলবনা। তিনি নাম করা একটা সরকারি কলেজের প্রফেসর। তিনি ক্লাসে আমাদের গণিত করাতেন।
একটা অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ন ৫ টা অংক থাকলে ২ টা ক্লাসে করাতেন। আর বলে দিতেন বাকি ৩ টা প্রাইভেটে করাবো।
কেন? সরকার আপনাকে মাস শেষে বেতন দেয়না?
তাই সিলেবাস শেষ করার জন্য বাধ্য হয়েই তার কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়েছে। আবার অন্য কলেজের স্যারদের কাছে পড়লেও সেটা তিনি মানতেন না।
আরো দেখুনঃ SSC result
তিনি কৌশলে তার কাছে পড়ার জন্য বলতেন এবং চাপ প্রয়োগ করতেন। উল্লেখ্য, তিনি এসএসসি পরীক্ষার প্রাকটিক্যাল নম্বর দিতেন।
তাই ওনাকে খুশি রাখা বাঞ্চনীয় ছিল।
একজন শিক্ষকের মনোভাব এরকম হলে কি আর বলার আছে?
তাই এসব বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রাইভেট কোচিং বন্ধ করা হোক। এটা আমার জোর দাবি।
তবে প্রাইভেট কোচিং কেন করতে হয়? সেই কারণগুলো বের করুন। সেগুলোর আগে সমাধান করুন। আমাদের ক্লাসেই সিলেবাস শেষ করার নিশ্চয়তা দিন।
যেনতেন ভাবে নয়। শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বুঝিয়ে সিলেবাস শেষ করতে হবে।
দেখবেন প্রাইভেট কোচিং এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে।
সিলেবাস শেষের বিষয়টা নিয়ে আমি বিডিনিউজে একটা লেখা লিখেছিলাম। এখানে ক্লিক করে দেখে আসতে পারেন ।