যারা অনেক আগে জন্ম নিবন্ধন করেছেন তাদের জন্ম নিবন্ধন বাংলা ভাষায় করা হয়েছিল। অনেকেরই আবার সেগুলো টাইপিংয়ের পরিবর্তে হাতে লেখা। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কাজে এটি বাংলার পশাপাশি ইংরেজি থাকা বাধ্যতামূলক। তাই আজকে জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার নিয়ম কানুন নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি ঘরে বসেই আপনার জন্ম নিবন্ধন চেক করতে পারবেন, বাংলা থেকে ইংরেজি করতে পারবেন। একসাথে কত টাকা ফি লাগবে সেই বিষয়েও জানবেন। তো চলুন, কথা না বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করব কিভাবে জেনে নেওয়া যাক।
জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি কি?
যে সকল জন্ম নিবন্ধন বাংলা ভাষায় লেখা সেগুলোকে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি করার প্রক্রিয়াই হলো জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি।
জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি আছে কিনা যাচাই
সর্বপ্রথম আমাদের চেক করে নিতে হবে জন্ম নিবন্ধন সনদ ইংরেজি করা আছে কিনা। যদি না করা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা সেটিকে ইংরেজি করার আবেদন করব। জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম নিয়ে আমাদের আরেকটি আলাদা আর্টিকেল রয়েছে। সেটি পড়ে নিন।
তথ্য যাচাই করার পর যদি দেখেন কোন তথ্য যেমন আপনার নাম, মা-বাবার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি ইংরেজিতে নেই সেক্ষেত্রে আপনাকে ইংরেজি করার আবেদন করতে হবে। এটি খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। ঘরে বসেই কিভাবে আবেদন করবেন নিচে সে প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলো।
আর যদি আপনি আপনি কোন তথ্য না পান অর্থাৎ আপনার তথ্য যদি জন্ম নিবন্ধন ডাটাবেইসে খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা নেই। তাহলে আপনাকে সবার আগে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার আবেদন করতে হবে।
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন বাংলা থেকে ইংরেজি করবেন?
বিভিন্ন কাজে এখন বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে আপনার তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে বৈদেশিক কাজ কর্মে ইংরেজি ভাষা বাধ্যতামূলক। তাই নিচের থেকে জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার জন্য জন্ম সনদ সংশোধনের আবেদন করার নিয়মটি জেনে নিন।
লেখা পড়ে বুঝতে সমস্যা হলে নিচের ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। আশা করি, বুঝতে সুবিধা হবে।
ধাপ ১ঃ জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন
সর্বপ্রথম আপনাকে জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ওয়েবসাইটের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার সেকশন https://bdris.gov.bd/br/correction এ যেতে হবে। সেখানে একটি পেজ ওপেন হবে। কিছু নির্দেশনা দেওয়া থাকবে সেটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন।
বিঃদ্রঃ সর্বোচ্চ ৪ বার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ধাপ ২ঃ নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন বের করুন
নির্দেশনা সমূহ মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর একই পেজের নিচের দিকে ২ টি খালিঘর সেখতে পাবেন। ১ম ঘরে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও ২য় ঘরে আপনার ১৭ ডিজিটের জন্ম তারিখ দিয়ে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন।
অনুসন্ধান বটনে ক্লিক করার পর আপনার জন্ম নিবন্ধনের কিছু তথ্য দেখতে পাবেন। নিচের দিকে নির্বাচন করুন লেখায় ক্লিক করুন। এরপর কনফার্ম বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩ঃ নিবন্ধন কার্যালয়ের ঠিকানা বাছাই
এই ধ্যাপে আপনাকে নিবন্ধন কার্যালয় সিলেক্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ঠিকানা অনুযায়ী নিবন্ধন কার্যালয় সিলেক্ট করে নিন। এজন্য আপনার দেশ, বিভাগ, জেলা, সিটি কর্পোরেশন/ক্যান্টনমেন্ট/উপজেলা, পোরসভা/ইউনিয়ন সিলেক্ট করতে হবে।
সব তথ্য ঠিকঠাক থাকলে ‘পরবর্তী‘ লেখা বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪ঃ ইংরেজি তথ্যসমূহ যুক্ত করুন
এবার আপনার সকল তথ্য ইংরেজি করার পালা। এখানে আপনাকে একটু সতর্কতার সাথে সব তথ্য দিতে হবে। এজন্য বিষয়ের জায়গায় ‘নাম ইংরেজিতে‘ সিলেক্ট করুন।
চাহিত সংশোধিত তথ্য এর ঘরে আপনার ইংরেজি নামটি দিয়ে দিন। সংশোধনের কারণ এর জায়গায় ‘ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল‘ সিলেক্ট করুন।
এভাবে ‘আরো তথ্য সংযোজন করুন‘ বাটনে ক্লিক করে মা-বাবার নামসহ অন্যান্য বিষয় যেগুলো ইংরেজিতে নেই সেগুলো একই নিয়ে এক এক করে সংযোজন করুন।
ধাপ ৫ঃ জন্মস্থানের ঠিকানা ইংরেজিতে লিখুন
একই পেজের নিচের দিকে গেলে আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা চাইবে। এখানে বাংলা ও ইংরেজি উভয় প্রকার তথ্য দিতে হবে। সতর্কতার সাথে সেগুলো পূরণ করুন। ইংরেজি বানানের লেখার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন যাতে ভুল না হয়।
ধাপ ৬ঃ আবেদনকারীর তথ্য
জন্মস্থানের ঠিকানা দেওয়ার পরে একই পেজের নিচের দিকে গেলে আবেদনকারীর তথ্য চাওয়া হবে। সর্বপ্রথম জানতে চাওয়া হবে ‘আবেদনাধীন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক‘।
এক্ষেত্রে যেহেতু আপনার আবেদন আপনি করছেন তাই ‘নিজ‘ সিলেক্ট করে দিন। নিজ সিলেক্ট করলে আপনার বয়স ১৮ এর বেশি হলে আবেদনকারীর নাম অটোমেটিকভাবে পূরণ হয়ে যাবে।
মনে রাখবেন, পিতা মাতা ছাড়া অন্য কেউ আবেদনকারী হলে তার NID নম্বর দিতে হবে। তাই নিজ সিলেক্ট করাই ভালো।
এরপর আপনার মোবাইল নম্বর দিন। এখানে আপনি আবেদন রিলেটেড ম্যাসেজ পাবেন। +880 আগে থেকেই দেওয়া থাকবে। তাই ফোন নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে 0 বাদে বাকি সংখ্যাগুলো লিখবেন। যেমনঃ 175786***85 ।
নিচের ঘরে আপনার ইমেইল এড্রেস চাইবে। এটি বাধ্যতামূলক নয়। তাই না দিলেও সমস্যা নেই।
৭ম ধাপঃ সংযুক্তি যুক্ত করুন
৬ষ্ঠ ধাপ শেষ করার পর নিচের দিকে ‘+সংযোজন‘ নামক একটি বাটন দেখতে পাবেন। এখানে আপনার কিছু ডকুমেন্ট ছবি তুলে বা স্ক্যান করে দিতে হবে। এমন ডকুমেন্ট দিতে হবে যেখানে আপনার তথ্য ইংরেজিতে আছে। যেমনঃ NID card (যদি থাকে,) পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট, মা-বাবার আইডি কার্ড ইত্যাদি।
ডকুমেন্টগুলোর ছবি আগে থেকেই তুলে রাখুন। এগুলোর সাইজ 976kb এর বেশি হলে আপলোড হবেনা। সেক্ষেত্রে এখানে ক্লিক করে সাইজ কমিয়ে নিন।
ডকুমেন্ট বা প্রমাণপত্র দেওয়ার একটি কারণ রয়েছে। কারণ, এগুলোর মাধ্যম্যা কর্তৃপক্ষ আপনার দেওয়া ইংরেজি তথ্যগুলো সঠিক কিনা সেটি যাচাই করতে সুবিধা হবে। তাই যতগুলো সম্ভব ডকুমেন্ট দিয়ে দিবেন।
৮ম ধাপঃ পেমেন্ট এর মাধ্যম
উপরের ধাপটি শেষ করার পর নিচের দিকে ‘পেমেন্ট এর মাধ্যম‘ নামক একটি সেকশন পাবেন। সেখানে ২ টি অপশন থেকে ‘ফি আদায়‘ অপশনটি সিলেক্ট করুন।
সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা একবার ভালোভাবে দেখে নিন। সব ঠিকঠাক থাকলে নিচে থেকে ‘সাবমিট‘ বাটনে ক্লিক করে আপনার আবেদনটি জমা দিন।
সাবমিটে ক্লিক করার পর আপনার আবেদন নম্বর ও আবেদন পত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ দেখতে পাবেন। নম্বরটি কোথাও লিখে রাখুন। আবেদন কপিটি প্রিন্ট করার একটি অপশন পাবেন। ‘আবেদন প্রিন্ট করুন‘ বাটনে ক্লিক করে সেটি প্রিন্ট করে নিন।
কম্পিউটার দোকান দেখে আবেদন কপিটি প্রিন্ট করে বের করে নিন।
৯ম ধাপঃ আবেদন পত্রের কপিটি জমা দিন
আবেদন কপিটি প্রিন্ট শেষ হলে সেই কপিটি নির্ধারিত তারিখের পূর্বে আপনার ইউনিয়ন/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে জমা দিতে হবে। একইসাথে সংযুক্তি ধাপে যেই ডকুমেন্টগুলো সংযোগ করেছিলেন সেগুলোর একটি করে ফটোকপি নিয়ে জমা দিবেন।
এক্ষেত্রে ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার সাথে আপনাকে জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার ফি বা সংশোধন ফিও প্রদান করতে হবে।
আপনার কাজ শেষ। এবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনটি যাচাই বাছাই করে আপনার তথ্যগুলো সংশোধন করে দিবে। এরইসাথে আপনার জন্ম নিবন্ধনটি বাংলা থেকে ইংরেজি হয়ে যাবে। আপনাকে ইংরেজি একটি জন্ম নিবন্ধনও দেওয়া হবে।
জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার ফি
জন্ম নিবন্ধনের ডকুমেন্টস ও আবেদন কপি জমা দেওয়ার সময় একটা নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়। এটি মূলত জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার ফি নামে পরিচিত। এই ফি হলো ১০০ টাকা।
শেষ কথা
আজকে আমরা জন্ম নিবন্ধন বাংলা থেকে ইংরেজি করার নিয়ম কানুনগুলো জানানোর চেষ্টা করলাম। আশা করি আপনারা এখন থেকে নিজে নিজেই জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করতে পারবেন। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। চাইলে শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিতে পারেন। ট্রিক ব্লগ বিডির সাথেই থাকুন।
সর্বোচ্চ কত দিন লাগে আসতে।
Very helpful. Thanks.
You’re welcome.
Nice post.
কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ
ভাই আপনার পোস্ট টা পরে উপকার হলো।ধন্যবাদ আপনাকে
ধন্যবাদ। শুনে খুব ভালো লাগলো।