সরকারি চাকরি বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীর জন্য স্বপ্নের মতো ক্যারিয়ার। কারণ সরকারি চাকরিতে আর্থিক নিরাপত্তার পাশাপাশি জীবনকালীন পেনশন, শাসনব্যবস্থায় মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি থাকে। পিএসসি-র তথ্য অনুযায়ী শিক্ষিত যুব সমাজে সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ দিনদিন বাড়ছে। সারা দেশে প্রতি নিয়োগ বৃত্তিতে লাখো আবেদন জমা পড়ে – উদাহরণস্বরূপ, ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য প্রায় ৩৪৬,০০০ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ব্যাংক ও অন্যান্য সেক্টরের নিয়োগেও লক্ষাধিক আবেদন দেখা যায়। এর ফলে সফল হওয়ার জন্য শুধু কঠোর পরিশ্রম নয়, ধৈর্য ও সঠিক পরিকল্পনাও জরুরি।
সরকারি চাকরির ধরনসমূহ
সরকারি খাতে ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। প্রধান পরিভাষায় নিচের ধরনগুলো পাওয়া যায়:
- বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস): প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বন, তথ্য ইত্যাদি ১৬টি ক্যাডারের উচ্চপদস্থ নিয়োগ। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ হয়।
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক (যেমন সোনালী, রূপালী) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পর্ষদ (বিএসসি) এর মাধ্যমে কর্মকর্তাদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়। সরকারি ব্যাংক নিয়োগেও বিগত বছরগুলোতে দশ লাখের বেশি আবেদন দেখা গেছে।
- নন-ক্যাডার পদ: পিএসসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে ৯ম, ১০ম (সহকারী হিসাবরক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি) গ্রেডে সরাসরি নিয়োগ দেয়। সম্প্রতি পিএসসি একাধিক মন্ত্রণালয়ে ৭৯টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
- মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন পর্যায়ের পদ: বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সাধারণ ও অফিস সহকারী, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ইত্যাদি নিয়োগ হয়ে থাকে।
- অন্যান্য সরকারি নিয়োগ: প্রাথমিক শিক্ষক নিবন্ধন, বিশেষ অংকের সহকারী (এসআই) পদ, আইনের বিভাগ, আইনগত কর্মকর্তা, দূদক, রাজস্ব বোর্ড ইত্যাদির নিয়োগ পরীক্ষাও রয়েছে।
এই বিভাগের প্রতিযোগিতা ও পরীক্ষার ধরণ আলাদা হতে পারে, তাই নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নিতে হয়। যেমন একজন ছাত্র একই সাথে বিসিএস এবং ব্যাংক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন, তবে বেশি ক্ষেত্র ধরলে বিভ্রান্তি হতে পারে। প্রথমেই কোন শ্রেণির সরকারি চাকরিতে পরীক্ষায় অংশ নেবেন তা নিশ্চিত করুন এবং তার সিলেবাস-পরীক্ষার ধরন ভালোভাবে জানুন।
প্রস্তুতির পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয়তা
সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র। প্রতিটি পদে প্রায় লক্ষাধিক আবেদন জমা হওয়ায় সফল হওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য প্রস্তুতি অপরিহার্য। পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক প্রস্তুতি ছাড়া শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি স্পষ্ট লক্ষ্য ও সময়সূচী। প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করুন: “আমি কি ধরনের সরকারি চাকরিতে চাই?” – বিসিএস, ব্যাংক, শিক্ষক বা অন্য কোনও বিভাগ? কারণ প্রতিটা বিভাগের প্রস্তুতি কিছুটা আলাদা।
এছাড়া, সঠিক পরিকল্পনা গঠনের জন্য পরীক্ষার সিলেবাস, প্যাটার্ন ও নম্বর বণ্টন জানাও জরুরি। বিপিএসসি বলছে বিসিএসের তিন ধাপের পরীক্ষা আছে – প্রিলিমিনারি (২০০ নম্বর), লিখিত (৯০০ নম্বর) ও ভাইভা (২০০ নম্বর)। এ পরীক্ষাগুলোতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার ও যুক্তি-ব্যক্তিত্ব বিষয় অঙ্গভুক্ত থাকে। তাই সিলেবাসের প্রতিটি অংশের গুরুত্ব বুঝে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাস্তব উদাহরণ হিসেবে, ব্যাংকের অফিসার পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি (ফোকাস রাইটিং), গণিত, সাধারণ জ্ঞান, অনুবাদ ও সামারি তে মোট ২০০ নম্বর থাকে।
প্রশ্নপত্রের অভিজ্ঞতায় পারদর্শী হতে প্রতিটি পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র ও নমুনা পরীক্ষার (মক টেস্ট) গুরুত্ব অপরিসীম। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে প্রশ্নপ্যাটার্ন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়া, মক টেস্ট (অনলাইন/অফলাইন) দিলে পরীক্ষার সময়সীমা মেনে গতি ও নির্ভুলতা বাড়ানো সম্ভব।
পরীক্ষার কাঠামো ও সিলেবাস
সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলো সাধারণত ৩ ধাপে বিভক্ত – প্রিলিমিনারি (অনলাইন/বহুনির্বাচনী), লিখিত এবং মৌখিক (ভাইভা)।
- প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: প্রাথমিক সর্টলিস্টিংয়ের উদ্দেশ্যে ৫০–২০০ নম্বরের MCQ পরীক্ষা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ২০০ নম্বরের MCQ (১০ টি বিষয়) থাকে। ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়োগেও প্রায় একই জাতীয় বিষয় (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, আইসিটি ইত্যাদি) থাকে। প্রিলিম পরীক্ষার পাস নম্বর লিখিত বা ভাইভায় ধরা হয় না; তবে এই পরীক্ষা পাশ করতে লিখিত অংশে যাওয়া যায়।
- লিখিত পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষা সাধারণত বহুনির্বাচনী ছাড়াও সংক্ষিপ্ত উত্তর, রচনার ধরনের। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংক পরীক্ষার লিখিত এ বাংলা/ইংরেজি ফোকাস রাইটিং, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও অনুবাদ কাজ থাকে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় (৯০০ নম্বর) সাধারণ ক্যাডারে বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিজ্ঞান, আইসিটি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। লিখিত পরীক্ষায় অতীত বছরের প্রশ্ন নিয়ে প্রস্তুতি ও রচনা দক্ষতা অনুশীলন জরুরি।
- মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা): এটি ব্যক্তিত্ব, জেনারেল নলেজ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়গত জ্ঞানের মূল্যায়ন করে। সফল প্রার্থীরা বলেন, “ভাইভায় চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস দেখানো এবং মুখস্থ তথ্য না রেখে ধারণার ভিত্তিতে উত্তর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ”। ভাইভা বোর্ড পরীক্ষার্থীর বাংলা ও ইংরেজি দক্ষতা, সাম্প্রতিক বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, স্থানীয় ইতিহাস-ভূগোলসহ সাধারণ জ্ঞান যাচাই করে।
সিলেবাস-নম্বরের মাপকাঠি এবং পরীক্ষার ধাপ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে পরীক্ষা দিতে হলে প্রস্তুতির কোন অংশে বেশি সময় দিতে হবে বুঝে নিন।
আরো জানুনঃ সরকারি চাকরিতে ভাইভার ১০ টিপস
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও অগ্রাধিকার
সরকারি চাকরির পরীক্ষায় কয়েকটি বিষয় প্রায় সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে:
- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য: বানান, ব্যাকরণ, বাক্যশুদ্ধি, শব্দার্থ (সমার্থক, বিপরীত শব্দ ইত্যাদি) এবং বাংলা সাহিত্যের সাধারণ ধারণা। প্রিলিমেও বাংলা থেকে বিশাল অংশ থাকে। বাংলা পরীক্ষায় নম্বর হারানো এড়াতে নিয়মিত বাংলা পড়াশোনা করুন।
- ইংরেজি ভাষা: ব্যাকরণ, শব্দার্থ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, রচনা ও অনুবাদ। অনেক পরীক্ষায় ইংরেজি ফোকাস রাইটিং বা উপস্থাপনা অংশ থাকে। দৈনন্দিন ইংরেজি সাময়িকী/সংবাদপত্র পড়তে থাকলে ইংরেজি দক্ষতা বাড়ে।
- গণিত (অংক ও যুক্তি): গাণিতিক যুক্তি, সাধারণ অংক, রূপরেখা ও বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন গণিতীয় দক্ষতা পরীক্ষায় আসে। প্রতিদিন অংকের নিয়মিত প্র্যাকটিস জরুরি। (আলোচ্য পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী কমন গণিত দেখে নেওয়া যেতে পারে।) গণিতে আরো বিশেষ প্রস্তুতি নিতে এখানে দেখুন।
- সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক): বর্তমানে বাংলাদেশ ও বিশ্বযুদ্ধ, রাজনীতির ইতিহাস, অর্থনীতি, খেলাধুলা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ নানা তথ্য থেকে প্রশ্ন হয়। প্রতিদিন কুরআন, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, জাতীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি রিভিশন চালিয়ে যান। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি (কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স) নিয়মিত পড়া সফলতার চাবিকাঠি।
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT): কম্পিউটার বেসিক (হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ইন্টারনেট) ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সাধারণ ধারণা। বিসিএস প্রিলিতে ICT থেকে ১৫ নম্বর থাকে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্যপ্রযুক্তির বই থেকেও ধারণা নেওয়া যেতে পারে।
উপরের বিষয়গুলিতে দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলুন। যেহেতু এই বিষয়গুলো প্রায় সব সরকারি পরীক্ষায় আসে, তাই এগুলোয় ভালো প্রস্তুতি নিলে পছন্দের পরীক্ষায় অনেকেই এগিয়ে থাকে।
কার্যকর প্রস্তুতির পদ্ধতি
সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু করণীয় ও নিয়মিত পদ্ধতি হল:
- একটি নিয়মিত সময়সূচী তৈরি করুন। প্রতিদিন একই সময়ে নির্দিষ্ট বিষয় পড়ুন। উদাহরণস্বরূপ, সকালে গণিত ও ইংরেজি, বিকালে বাংলা ব্যাকরণ, রাতে বর্তমান ঘটনাবলি রিভিশন দেওয়া যেতে পারে। সময়সূচী লিখে রাখলে অনুসরণ করা সহজ হয়।
- বিগত প্রশ্নপত্র এবং নমুনা প্রশ্ন সমাধান করুন। বিগত বছরের সকল প্রশ্নপত্র দেখতে পাবেন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা বই-আকারের প্রশ্নব্যাংকে। এগুলো পরীক্ষা দেওয়ার আগেই দেখে নিন। শুধুমাত্র প্রশ্নপত্র পড়লে প্রস্তুতি যাচাই হয় না; অনলাইনে মক টেস্ট দিন। মক টেস্ট দিয়ে পরীক্ষার সময়সীমা ও প্রশ্নধারা বোঝা যায় এবং দুর্বলতা জানা যায়। অনলাইনে প্রচুর MCQ অ্যাপ, ওয়েবসাইট (যেমন Practiceclub) এ গত বছরের প্রশ্ন ও মডেল টেস্ট পাওয়া যায়।
- বর্তমান ঘটনা এবং দৈনন্দিন সংবাদ নজর করুন। সাধারণ জ্ঞানের অংশে প্রতিদিনের খবর, জাতীয় শিক্ষা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ইত্যাদি জানতে স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেখুন। ফোকাস রাইটিং বা ভাষণের প্রস্তুতির জন্য সময়োপযোগী ঘটনা সম্পর্কে ধারণা থাকা সুবিধাজনক।
- রিভিশন ও পুনরাবৃত্তি প্রতিদিনের পড়ার পর জরুরি। বিশেষ করে গণিত ও ব্যাকরণ যেমন নিয়মাবলী সহজে ভুলে যাওয়া যায়, সেগুলো নিয়মিত রিভিশন করতে হবে।
- শরীরী ও মানসিক প্রস্তুতি: পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার আর মানসিক চাপ কম রাখার চেষ্টা করুন। পরীক্ষার আগে রাতে নতুন কিছু না পড়ে আগের পড়া পুনর্বার দেখে যান। টেনশনমুক্ত থাকলে পরামর্শ অনুযায়ী “আগের দিনের পড়া একটু রিভিউ করুন, নতুন পড়তে যাবেন না”।
উপরে উল্লিখিত সব পদক্ষেপগুলো পূরণ করলে প্রস্তুতি সুসংগঠিত হবে। আরেকটি উপায় হলো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার – যা আজকের যুগে অমূল্য সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, YouTube-এ বিভিন্ন টিউটোরিয়াল (যেমন 10 Minute School, Study with Sajid), অ্যাপ-এ MCQ বা রিভিশন (যেমন BCS Prelim App, GK Today) এবং চাকরি প্রস্তুতি ওয়েবসাইট (bpsc.gov.bd, bdjobs.com, jobstestbd.com) থেকে সিলেবাস, মক টেস্ট ও পড়ার রিসোর্স পাওয়া যায়।
সহায়ক সোর্সঃ বিসিএস পরীক্ষার নম্বর বন্টন
বই ও অনলাইন রিসোর্স
সঠিক পাঠ্যপুস্তক এবং রিসোর্স নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। নেতিবাচক বা অপ্রমাণিত বই পড়লে সময় নষ্ট হবে। সার্বজনীনভাবে কিছু সুপারিশ:
- বাংলা: বাংলা ব্যাকরণ (নাসির উদ্দিন, বাংলা প্রথম/দ্বিতীয় পত্র), বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত বই।
- ইংরেজি: High School English Grammar (Sikder বা Ray’s English), Competitive Exams English (বাক্য গঠন, Comprehension ও Composition).
- গণিত: Quantitative Aptitude (Magic Math), সাধারণ অংক বই (ইব্রাহিম সিদ্দিক-এর গণিত বই)।
- সাধারণ জ্ঞান: ‘বিডিসি জর্নাল’ এর General Knowledge, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ভূগোল (বাংলাদেশ বিষয়াবলী)। বর্তমান সাময়িকী: মাসিক ডজনার কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বা Recent World Affairs।
- যুক্তি-বিজ্ঞান: A Modern Approach to Logical Reasoning (ভগাটি, বরাহ); অথবা Analytical Ability বই।
- ICT: স্কুল বা কলেজের তথ্যপ্রযুক্তি বই, অথবা সরকারি চাকরির প্রশ্ন ব্যাংক বইয়ের ICT বিভাগ।
এছাড়া ইন্টারনেটে ই-বই ও আলোচনার ফোরামও ব্যবহার করতে পারেন।
চাকরির বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আপডেট থাকা
নিয়মিত সরকারি চাকরির খবর খুঁজে পেতে বিভিন্ন উৎস থেকে খবর সংগ্রহ করুন। সবার প্রথমে সরকারি ওয়েবসাইট নজরে রাখুন, যেমন ব্যাংকের নিয়োগ বোর্ড, খাদ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি কর্ম কমিশন (bpsc.gov.bd) এর ওয়েবসাইট, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এর অফিশিয়াল পোর্টাল নিয়মিত দেখুন। জনপ্রিয় চাকরি-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলো (যেমন bdjobs.com, jobs.teletalk.com.bd) এবং ফেসবুক গ্রুপেও বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও একটি নির্ভরযোগ্য সাইট “চাকরির খবর” (bdgovt.info) নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন যা সরকারি সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এক জায়গায় সংগ্রহ করে রাখে। শিক্ষা ও চাকরি বিষয়ক দৈনিক পত্রিকাগুলো (চাকরি সংবলিত কাগজপত্র) ও অনলাইন নিউজসাইটেও পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এসব মাধ্যম ফলো করলে নতুন সার্কুলারের তথ্য হাতে পাই এবং সময়মতো আবেদন করতে সুবিধা হয়।
প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার টিপস
সরকারি চাকরির তিনটি পরীক্ষার জন্য কিছু বিশেষ প্রস্তুতি টিপস:
- প্রিলিমিনারি পরীক্ষার টিপস
- MCQ পরীক্ষা: প্রিলিমিনারিতে প্রশ্নের সংখ্যা বেশি, তাই গতি বাড়ানো জরুরি। সহজে উত্তরযোগ্য প্রশ্ন আগে করুন এবং সময়সীমা মেনে চলুন।
- মূল ধারণা: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় থেকে মৌলিক ধারণা থাকলে ভালো হয়। অতিরিক্ত জটিল প্রশ্নে আটকে না থেকে সহজ প্রশ্নগুলো আগে শেষ করুন।
- নেগেটিভ মার্কিং: অনেক পরীক্ষায় ভুলে নম্বর কাটা হয়; তাই অনুমান কম এবং যতটা পারা যায় নিশ্চিত উত্তর দিন।
- অনুশীলন: বিগত বছরের MCQ সমাধান এবং অনলাইন টেস্টের অভিজ্ঞতা দিয়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- লিখিত পরীক্ষার টিপস
- বিশ্লেষণাত্মক প্রস্তুতি: বাংলা-ইংরেজি ফোকাস রাইটিং, রচনা এবং গণিতে সাবালম্বী হোন। সহজ বাংলা ও ইংরেজি বাক্য গঠন, বানান-বিশুদ্ধি রক্ষা করুন।
- টেম্পলেট ও নোট: সাধারণ জ্ঞান বিভাগে অতিরিক্ত তথ্য লেখার সুযোগ আছে; তাই আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা-আলোচনা সংরক্ষণ করলে রচনায় সাহায্য হয়।
- সময় ব্যবস্থাপনা: গাণিতিক প্রশ্ন দ্রুত সমাধানের কৌশল শিখুন; প্রয়োজনে ক্যালকুলেটর নয়, মনস্তাত্ত্বিক হিসাব কৌশল প্রয়োগ করুন। লেখা অংশে সময় না নষ্ট করে সরাসরি পয়েন্ট তুলে ধরার অভ্যাস করুন।
- প্রাকটিস: হেল্পলাইন বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মক রচনা প্রশ্ন দিন; মানসম্পন্ন স্টাডি মেটিরিয়াল ও বিসিএস–ব্যাংক প্রস্তুতিমূলক বই থেকে উদাহরণ দেখুন।
- মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষার টিপস
- আত্মবিশ্বাস: ভাইভাতে ভালো করতে ‘প্রবল আত্মবিশ্বাস’ থাকতে হবে। নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং পূর্বে প্রস্তুত প্রশ্নগুলোর উত্তর মনে রাখুন।
- পরিচ্ছন্ন সাজ: অফিসিয়াল পোশাক (পুরুষদের শাদা শার্ট-কালো প্যান্ট; মহিলা অফিসিয়াল সালোয়ার কামিজ) পরিধান করুন এবং সময়মতো পৌঁছান।
- ভাষাগত সতর্কতা: বোর্ডের প্রশ্ন বাংলা-ই হলে বাংলা, ইংরেজিতে ইংরেজি ভাষায় উত্তর দিন। প্রশ্নে বেরিয়ে গেলে হঠাৎ ভাষা বদলাবেন না।
- সঠিক আচরণ: ভাইভা হলে বোর্ডকে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢোকার অনুমতি নিন। আবেদনপত্রের তথ্য নিয়ে কোনো ভুল হলে নম্রভাবে সংশোধন জানান। অপরিচিত বিষয় নিয়ে তর্ক করবেন না, সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক উত্তরে সন্তুষ্ট থাকুন।
- জেনারেল জ্ঞান ও সাম্প্রতিক বিষয়: নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধের বিষয় এবং সাম্প্রতিক আপডেট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখুন। প্রশ্ন না জানলে “এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না” ভঙ্গিতে বিনয়পূর্ণ উত্তর দিন।
ভাইভা বোর্ডে “দ্রুত-স্মার্টনেস” দেখিয়ে ঠিক উত্তর দেয়ার বদলে শান্ত মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদে উত্তীর্ণ হওয়া মেহেদি হাসান বলেছেন যে, “এডি পদে দেশসেরা মেধাবীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে কে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় সময়টুকু কে কতটুকু কাজে লাগাতে পারেন। ওই দুই ঘণ্টায় মনোযোগ ধরে রেখে যে ভালো করবেন, তারই টেকার সম্ভাবনা থাকে।”। সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রতিটি পরীক্ষার ধাপেই প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাস সমানভাবে জরুরি।
সফলতার পরামর্শ
সফল হতে চাইলে শুধু অধ্যবসায়ই নয়, কৌশলীভাবে সময় ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পিত অধ্যয়ন দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সফল প্রার্থী ফয়সাল আহমেদের মতে, “কে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় সময়টুকু কতটুকু কাজে লাগাচ্ছেন”। অর্থাৎ প্রতিটি পরীক্ষায় প্রস্তুতি সময়কে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। বাস্তব অভিজ্ঞতা দেখায়, যারা কাজের পর রাতে সময় বের করে পড়াশোনা করেন, তারা অনেক এগিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় তিনি প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে ভোর অবধি পড়তেন।
কাজের ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও সাময়িক খবর-গুচ্ছ টেনে রাখা ও ছবি তুলে রাখার মতো কৌশল প্রয়োগ করে ফয়সাল সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রিভিউ করেছিলেন। আপনারো ঘরে-বাইরে খালি সময়গুলো কাজে লাগান: বাসার যাত্রাপথে বা বিরতি সময়ে ফোনে সংবাদপত্র পড়ুন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করে রাখুন।
সবশেষে, প্রস্তুতি শুরু থেকেই ধৈর্য ধরে শুরুর পরিকল্পনা অনুসরণ করুন। পড়াশোনায় মনযোগ বজায় রাখার জন্য কর্মব্যস্ততা বা সামাজিক ইভেন্টে অতিরিক্ত ব্যস্ততা এড়িয়ে চলুন। ফলাফল যাই হোক, নিয়মিত পরিশ্রম ও ইতিবাচক মনোভাব মানব জীবনে সফলতার চাবিকাঠি। সরকারি চাকরির প্রস্তুতিকে জীবনের এক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে দিন-রাত পরিশ্রম এবং শৃঙ্খলিত অধ্যয়ন চালিয়ে যান।