করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

করোনা ভাইরাস কি?

ভাইরাসের এক প্রকারের শ্রেণির নাম হচ্ছে করোনা ভাইরাস। এটি স্তন্যপায়ী ও পাখিদের আক্রান্ত করতে সক্ষম। এর বিভিন্ন রকমের প্রজাতি রয়েছে। এরমধ্যে কোভিড-১৯ একটি প্রজাতি। এই করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমানে পৃথিবীতে লক্ষ মানুষ আক্রান্ত ও নিহত হয়েছেন। আজকে আমরা মূলত কোভিড-১৯ সম্পর্কে জানবো।

করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় ও প্রতিরোধে করণীয়
করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় ও প্রতিরোধে করণীয়

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি (কোভিড-১৯)

এই ভাইরাসটি প্রথমবারের মতো মানব পাওয়া গেছে। সর্বপ্রথম চীনের উহান শহর থেকে এই ভাইরাসটির উৎপত্তি হয়। ভাইরাসটি খুব দ্রুতই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি কোনো প্রাণির শরীর থেকে মানবদেহে প্রবেশ করেছে। কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন, চীনের গবেষণাগারেই ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছে

এই ভাইরাসটির মাধ্যমে সৃষ্ট রোগে এই পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছে।

চলুন জেনে নেই কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়, এর লক্ষণ কি ও কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

করোনা ভাইরাস এর লক্ষণ

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ যেকেউ বুঝতে পারে বা ধরতে পারে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৫ দিন পর থেকে ১৪ দিনের ভিতর লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর প্রথম লক্ষণ জ্বর।

এরপর সর্দি, গলা ব্যথা শুকনো কাশি এবং প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। নিচে তালিকা আকারে লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো।

  • জ্বর
  • সর্দি
  • কাশি
  • গলা ব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • মাংসপেশিতে ব্যথা
  • মাথা ব্যথা
  • ক্লান্তিবোধ
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • ত্বক জ্বলা
  • ঘন ঘন টয়লেট যাওয়া
  • অণ্ডকোষে ব্যথা

তবে এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই সেটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সাধারণ সর্দি-জ্বর হয়ে থাকে। লক্ষণ প্রকাশ পেলে হাসপাতালে না গিয়ে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে।

আইইডিআর যদি মনে করে তাহলে তারা রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবে। এক্ষেত্রে তারা আক্রান্ত রোগীর বাসায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করে। করোনা পজিটিভ হলে সেই অনুযায়ী আইসোলেশনে রাখে ও চিকিৎসা প্রদান করেন।

করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়

করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক ভাইরাস। এটি হাচি-কাশির মাধ্যমে একজন মানুষের থেকে আরেকজনের দেহে ছাড়াতে পারে। মূলত ফুসফুসের মাধ্যমে এটি বংশবিস্তার করে।

এটি খুবই ভয়ংকর ভাইরাস। কারণ এটি মানব শরীরে প্রতিনিয়ত রূপ বদল করতে সক্ষম। এই কারণে এটি খুবই বিপদজনক।

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এটি দ্রুত ছড়াতে পারে। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করলেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সর্বশেষ করোনা আপডেট

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের করণীয় বিষয়গুলা জানা অত্যাবশ্যক। করোনা ভাইরাস মূলত সংক্রামক রোগ। তাই আমাদের প্রথম করণীয় হচ্ছে সংক্রমণ ঘটতে পারে এমন বিষয় এড়িয়ে চলা।

সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া
সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া
  • নিয়মিত সাবান দিয়ে সঠিক উপায়ে হাত ধুতে হবে
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • রোগীর সেবা করার সময় পিপিই ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
  • ঘরের বাহিরে গেলে কিংবা সম্ভব হলে ঘরেও মাস্ক পরতে হবে।
  • জনসমাগম এড়িতে চলতে হবে।
  • হ্যান্ডশেক বা করমর্দন এবং কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • নিয়মিত জামা কাপড় সাবার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আলাদা কক্ষে বিশেষ ভাবে অর্থাৎ আইসোলেশনে রাখতে হবে।
  • সংক্রমন ছড়িয়ে পড়া স্থান থেকে কেউ আসলে অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে অর্থাৎ সবার সংস্পর্শ এড়িয়ে আলাদা কক্ষে থাকতে হবে।
  • হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল,টিস্যু,জামা কিংবা হাতের কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই হাতের তালু ব্যবহার করা যাবেনা।
  • ঘরের বাহির থেকে আসলে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।
  • খাবার খুব ভালো করে সিদ্ধ করতে হবে।
  • বাড়ীর আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে ও জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।
  • খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যাবেনা।
  • অপরিষ্কার হাতে নাক, চোখ ও মুখ স্পর্শ করা যাবেনা।
পিপিই পরা চিকিৎসক | করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
পিপিই পরা চিকিৎসক

করোনা ভাইরাস নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন

কারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে?

যেকেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে আছে?

যাদের বসয় ৬০ এর বেশি ও যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তাদের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার বেশি।

কোন কোন রোগ থাকলে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়?

এখন পর্যন্ত যারা এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন তারা বেশিরভাগই আগে থেকে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। যেমনঃ ডায়বেটিস, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সমস্যা, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি। এই হিসেবে যাদের এসব আছে তাদের জন্য করোনা মারাত্মক বিপদ বয়ে আনতে পারে।

করোনা হলেই কি নিশ্চিত মৃত্যু?

না এই কথা ঠিক নয়। করোনা হলেই সবাই মারা যায়না। তবে এটি খুব দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। এটাই মূল সমস্যা। করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে যেহেতু সংক্রমণের হার বেশি, সেহুতু মৃত্যুবরণ করা লোকের সংখ্যা কম নয়।

কীভাবে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচা যাবে?

হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হবে। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বপরি এই পোস্টে দেওয়া নিয়মকানুনগুলো মেনে চলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে নতুন করে কেউ সংক্রমিত না হয়। সংক্রমন ঠেকাতে পারলেই কেবল এই রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।

করোনা ভাইরাসের কোনো ঔষধ নেই?

না, এই পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনো ঔষধ ও ভ্যাক্সিন নেই। তবে অনেক দেশই এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন ও ঔষধ আবিষ্কারের দাবি করেছেন। কিন্তু সেটি মানব শরীরে সফলভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হননি।

আশা করি, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আপনারা মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছেন। এই ভাইরাসে আতংকিত হওয়া উচিত নয়। সচেতন হোন, করোনা প্রতিরোধ করুন। মনে রাখবেন, করোনা মানেই মৃত্যু নয়, করোনায় মৃত্যুর হার ২-৩%।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top