টিউশনি পাওয়ার উপায়, নিয়ম ও টিপস ২০২৩

টিউশনি, এক কথায় ছাত্র জীবনে আয়ের প্রধান উৎস। টিউশনি করে মোটামুটি মাসিক একটা ভালো আয় করা যায়। নিজের পকেট খরচের পাশাপাশি সংসারের জন্যও খরচ করা যায়। কিন্তু সবাই এই টিউশনি পায়না। আর হাত খরচের জন্য বাবা-মায়ের কাছেই ছোটবেলার মত হাত পাততে হয়। তাই কীভাবে টিউশনি পাবেন, আর মা-বাবাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবেন সেটা সবারই জানা দরকার। আর তাই টিউশনি পাওয়ার উপায়, টিউশনি করার কৌশল ইত্যাদি নিয়ে আজ আলোচনা করব।

টিউশনি করার কৌশল
টিউশনি করার কৌশল

টিউশনি করার কৌশল

আগে নিজেকে জানতে হবে

টিউশনি পেতে হলে আপনাকে প্রথমে শিক্ষিত হতে হবে। অর্থাৎ আপনকে আগে জানতে হবে। নিজে জানলেই অন্যকে কিছু শিখাতে পারবেন। তাই আগে নিজে জানুন। নিজের ছাত্র জীবনে ভালোভাবে শিখার চেষ্টা করুন। আপনি নিজে কোনো একটা টপিক ভালো করে বুঝলে তা অন্যকে সহজেই বুঝাতে পারবেন। তাই আগে নিজে শিখুন।

কোন কিন্ডারগার্টেনে যোগ দিতে পারেন

যদি পারটাইমও হয়, কোন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার টিউশনি পাওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুন, তিনগুণ বেড়ে যাবে।

টিউশনির প্রথম দিন

এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। টিউশনির প্রথম দিনই আপনার শিক্ষার্থী ও অভিবাবক আপনার সম্পর্কে ধারণা পায়। মূলত টিউশনির প্রথম দিন আপনি নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করবেন শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে আপনাকে ঐরকমই জানবে বা মনে করবে। কিন্তু আমরা টিউশনির প্রথম দিন খুবই নার্ভাস থাকি।

তাই চেষ্টা করবেন নিজের নার্ভাসনেস কাটিয়ে সাবলীলভাবে কথা বলতে। আর প্রথম দিন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকের মন কাড়তে পারলে আপনার প্রাইভেট টিউশন বেশিদিন টিকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

টিউশনি পাওয়ার উপায়

টিউশনি পাওয়ার নির্দিষ্ট কোন কৌশল নাই। তবে কিছু নিয়ম মানলে আপনি খুব সহজেই অনেক টিউশনি পেতে পারেন। প্রথমত, আপনাকে ভালো পড়াতে জানতে হবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমে কম বেতনের টিউশন পেলেও পড়ানোর চেষ্টা করুন। কারণ, তাদের কাছে আপনার পড়া ভালো মনে হলে তারা আরেকজনকে আপনার কথা বলবে। আবার আপনার ছাত্র বা ছাত্রীর পড়া হঠাৎ করে ভালো হয়ে গেলে তাকে সবাই জিজ্ঞেস করবে কার কাছে পড়। যারা পড়তে ইচ্ছুক তারাও জিজ্ঞেস করবে। আর আপনার ভালো পড়ানোর কথা শুনলে আপনার কাছে পড়তে চাইবে।

তাছাড়া সহজ উপায় হচ্ছে কোচিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তাদের কাছে টিউশনির অনেক অফার আসে। সবসময়ই শিক্ষক পাওয়াও যায়না। আপনি তাদেরকে বলে রাখলে তারা আপনাকে টিউশনিটা দিবে। বিনিময়ে হয়তো কিছু বখশিশ তাদেরকে দিতে হবে। এতে মন্দের কিছু নেই। আপনতো একটা টিউশনি পেলেন।

মার্জিত পোশাক পরুন

ধরুন আপনি একটি টিউশনি পেলেন। সেখানে আপনি লুঙ্গি পরে পড়াতে চলে গেলেন। এটা মানানসই হলো? হলোনা। তাই চেষ্টা করবেন সবসময়ই ফর্মাল শার্ট পরে যেতে। এতে আপনার ব্যক্তিত্ব খুব ভালোভাবে ফুটে উঠবে।

সবসময়ই টি শার্ট এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এটাও খুব বেশি মানানসই নয়। সম্ভব হলে প্যান্ট ইন করে যাবেন। এতে আপনাকে যথেষ্ট অফিশিয়াল ও কাজের প্রতি মনোযোগী মনে হবে।

পরিমিত ও মার্জিত কথা বলুন

মানুষের কথাবার্তা তার চরিত্র ও ব্যক্তিত্বকে দারুণভাবে তুলে ধরে। যে মানুষের কথা বলার ধরণ খুব চমৎকার, তার কথা শুনতেই ভালো লাগে। তার কথা শুনেই সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। তার কথা কম গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা শুনি।

আবার কেউ আছেন ঠিক করে কথা বলতে পারেন না। তার কথা খুব দরকারি হলেও আমরা শুনতে চাইনা। কারণ তার কথা বলার ধরণ ঠিক নয়। তাই কথা বলার সময় শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা উচিৎ।

আপনি যতই পড়ালেখা জানেন না কেন, অভিবাবক ও শিক্ষার্থীর সাথে ঠিকভাবে কথা বলতে না পারলে আপনার টিউশনি বেশিদিন টিকবেনা। এটা টিউশনি ধরে রাখার একটি কৌশল।

বেফাঁস কথাবার্তা থেকে বিরত থাকুন। এমন কোন কথা বলবেন না যাতে আপনার সম্মান কমে যায়। তাই কিছু বলার আগে দু বার ভেবে নিন।

আত্মবিশ্বাস রাখুন

আপনি যখন পড়াবেন তখন নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস সফলতার পরিপূরক। কোন একটা বিষয় আপনি যদি কনফিউজ হয়ে শিক্ষার্থীকে বলেন তাহলে সে সেটা ভালোভাবে নিতে পারবেনা। তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়ান।

আকর্ষণীয়ভাবে পাঠ উপস্থাপন করুন

আপনি যতটুকু জানেন তা থেকেই সর্বোচ্চ বুঝানোর চেষ্টা করুন। আমার দেখা কয়েকজন আছে। তারা যেভাবে পাঠ উপস্থাপন করে দেখে মনে হয় তারা অনেক কিছু জানে। তাই পাঠ উপস্থাপন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

শিক্ষার্থীর সাথে ভালো ব্যবহার করুন

এটা একটা কী ফেক্টর বলা যায়। আপনার শিক্ষার্থীর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে টিউশনি হারানোর চান্স অনেক কমে যাবে। তাই শিক্ষার্থীর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখুন। তার মানে আবার এটা নয় যে, শিক্ষার্থী পড়া ফাঁকি দিলে তাকে কিছু বলবেন না।

শিক্ষার্থীর সাথে ভালো ব্যবহার করুন
শিক্ষার্থীর সাথে ভালো ব্যবহার করুন

নিজের অবস্থান বজায় রাখুন আর প্রেম এড়িয়ে চলুন

আপনি যখন একটা প্রাইভেট টিউশন পান সেটা আপনার যোগ্যতায় পান। তাই আপনার নিজের সম্মান ও অবস্থান বজায় রাখুন।

শিক্ষার্থীর বাবাকে ভাই আর মাকে আপু বলার চেষ্টা করুন। এতে করে তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে। আর টিউশনি হারানোর চান্স কমে যাবে। একই সাথে আপনার শিক্ষার্থী আপনাকে ভাইয়া বা আপু বলার সুযোগ পাবেনা।

এতে করে প্রেমের চান্স কমে যাবে। মনে রাখবেন আপনি পড়াতে এসেছেন। প্রেম করতে নয়। এগুলো করে নিজের মানসম্মান হারাবেন না।

নিজে শিখুন ও শিক্ষার্থীকে জানান

পড়াতে হলে নিজেকে জানতে হবে। তাই টিউশনি করতে হলে আগে নিজে শিখতে হবে। নিজে শিখলে আপনি আপনার শিক্ষার্থীকে নতুন নতুন বিষয় জানাতে পারবেন।

সবসময়ই পড়া সহজে শিখার কৌশল ও সঠিকভাবে পড়ার নিয়মকানুন গুলো শিক্ষার্থীদের জানান। এতে সে পড়ার প্রতি মনোযোগী হবে। আর আপনার থেকে আরো শিখতে আগ্রহী হবে।

টাকা পয়সা ও সময়ের কথাবার্তা আগেই সেরে নিন

দিনে কতক্ষণ পড়াবেন,মাসে কতদিন পড়াবেন, কত টাকা নিবেন এগুলো আগেই মিটমাট করে নিন। তাহলে পরে ঝামেলা হবেনা।

ফাঁকিবাজি করার মনোভাব বর্জন করুন ও নিজের অধিকার আদায় করুন

ছুটি পাওয়া মৌলিক অধিকার। সেটা টিউশনির ক্ষেত্রেও একই। তাই দরকার হলে ছুটি নিন। তবে বিনা কারণে বা অযথা ছুটি নিবেন না। এটা এক ধরণের ফাঁকিবাজি।

চেষ্টা করবেন একমাসে ছুটি ২-৩ দিনের বেশি যাতে না হয়। আর যারা সাপ্তায় তিন দিন পড়ান তারা ১-২ দিনের বেশি ছুটি না নেওয়ার চেষ্টা করুন।

আশা করি এই নিয়মগুলো মেনে চললে খুব সহজেই টিউশনি পাবেন। আর টিউশনি স্থায়ী হবে।

4 thoughts on “টিউশনি পাওয়ার উপায়, নিয়ম ও টিপস ২০২৩”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top