ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী হয়েছে এমন মানুষ আমাদের আশেপাশে অনেক দেখতে পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরে দেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থার বিকাশ ঘটেছে বেশ দ্রুত। সেই সাথে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে এবং পাল্লা দিয়ে একটি প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে তা হলো- ফ্রিল্যান্সিং কি ও ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
এটি এমন এক প্রশ্ন, যার উত্তর সংক্ষেপে দেওয়া যায় না। আপনি যদি এই প্রশ্নের উত্তর পেতে চান তাহলে মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ লেখা পড়তে থাকুন। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত সকল তথ্য এই লেখায় দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি, এই বিষয়ে আপনার অজানা কিছু থাকবে না।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো জানার জন্য প্রথমে জানা দরকার ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি কি। এটি হল চুক্তিভিত্তিক পেশা। সরাসরি কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পরিবর্তে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে এক বা একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়াই ফ্রিল্যান্সিং। সহজ কথায় একক নিযোগকর্তার কাছে প্রতিশ্রুতি না দিয়ে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী একাধিক ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করাকেই সাধারণভাবে ফ্রিল্যান্সিং বলে।
ফ্রিল্যান্সিং মানেই আমাদের অনেকের ধারণা ঘরে বসে কাজ করা। সব ক্ষেত্রে এমন নাও হতে পারে, আপনাকে ক্লায়েন্টের অফিসেও যেতে হতে পারে। আসলে এটি কাজের ধরণের উপর নির্ভর করে। তবে যে সমস্ত কাজগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিতরণ করা যায় বা সম্পন্ন করা যায় সেই ধরণের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বেশি দেখা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং কেন করব?
জনবহুল আমাদের দেশে কাজের ক্ষেত্র সীমিত হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। এই বেকারত্বের সমস্যা আরো কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে, যার একটি হলো কোম্পানিগুলোর স্বল্প বেতনে কর্মী নিয়োগ প্রবণতা। অর্থাৎ যোগ্যতা বা দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও আপনি চাহিদামতো কাজ পাচ্ছেন না বা কাজের মূল্যায়নও সঠিকভাবে পাচ্ছেন না।
কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে এমটা হয় না। আপনি আপনার যোগ্যতা, পছন্দ এবং পারিশ্রমিক অনুযায়ী কাজ করার সুবিধা পাবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর এমন কিছু অসাধারণ সুবিধা রয়েছে যে কারণে আপনি এটি করতে চাইবেন, যেমন-
- আপনার সুবিধামতো কাজ নির্বাচন করার সুযোগ থাকে। আপনি ঠিক যেমন কাজ করতে ভালবাসেন বা আপনার দক্ষতা যে কাজে বেশি আপনি চাইলে শুধুমাত্র সেই ধরণের কাজ নির্বাচন করতে পারবেন।
- সুবিধামতো সময়ে কাজ করার স্বাধীনতা থাকে। যদিও সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরী, তবে আপনার কাজ করার সময়টি একান্তই আপনার। আপনার যখন মন চাইবে তখন কাজ করতে পারবেন এই ব্যাপারে কোন বাধ্যবাদকতা থাকে না।
- পছন্দমতো ব্যক্তির সাথে কাজ করা শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমেই সম্ভব। এক কথায় ক্লায়েন্ট নির্বাচন করার সুবিধা রয়েছে।
- চুকুরী করতে গিয়ে বসের কটু কথা শোনা বা উল্টা পাল্টা নির্দেশ মেনে চলা কতটা বিরক্তিকর হতে পারে তা আমাদের অনেকেরই জানা। ফ্রিলান্সিং-এ আপনিই আপনার বস।
- আপনাকে খুব কম, এমনকি কিছুই বিনিয়োগ করতে হয় না।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইউরোপ বা আমেরিকান ক্লায়েন্টদের কাজ পাওয়া যায়, যেখানে কাজের মূল্য অনেক বেশি। তাই অনেক বেশি উপার্জনের সুযোগ থাকে।
- ফ্রিল্যান্সিং কনফিডেন্স বৃদ্ধি করে, যা ব্যক্তি জীবনে সহায়ক হয়।
ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব
বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব আমরা মোটামুটি জানি বলেই ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো প্রশ্নটি বেশি করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি বিষয়, যারা কাজ করতে চায় তাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একইভাবে যাদের কাজ করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া উন্নত দেশগুলোতে যেখানে কাজের মূল্য বা একজন কর্মীর বেতন অনেক বেশি, তারা তুলনামূলক কম খরচে ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে পারে।
ছোট বা বড় অনেক প্রতিষ্ঠানেরই কিছু কাজ থাকে যার জন্য তারা কর্মী নিয়োগ দিতে চায় না। অথবা বলা যায় এই কাজগুলোর জন্য কর্মী নিয়োগ অপচয়ের কারণ হয়ে ওঠে। সেই কাজগুলো করানোর জন্য কোম্পানিগুলো ফ্রিল্যান্সারদের সহায়তা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও তারা দ্রুত এবং কম খরচে তাদের কাজ করিয়ে নিতে পারে।
কিছু কিছু ব্যক্তির কাছে ফ্রিল্যান্সিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ এটি বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাকে দূর করে মানুষকে কর্মব্যস্ত রাখে। যেমন-
কোন বয়স সীমা নেই: আপনি যে কোন চাকুরী পেতে গেলে আপনার বয়স একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এ কোন বয়স সীমা নেই। এখানে আপনার দক্ষতাই সবচেয়ে বড় বিষয়। আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, নির্দিষ্ট কাজটি করার মতো দক্ষতা যদি আপনার থাকে তাহলেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
উপার্জনের সীমাবদ্ধতা নেই: চাকুরী থেকে আপনি একটি নির্দিষ্ট বেতন পাবেন, কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং আপনার উপার্জনকে সীমাবদ্ধ করে না। আপনি যত পারেন কাজ করার মাধ্যমে উপার্জনের পরিমান আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ঘরে বসে কাজ করার সুবিধা: ফ্রিল্যান্সিং আপনাকে ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এটি আপনার কাজের ক্ষেত্র যেমন অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়, একই ভাবে আপনাকে সুবিধাজনক জায়গাতে থেকে কাজ করার অনুমোতি দেয়।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ
অনলাইনে সরবরাহ করা যায় এমন সকল কাজই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে করা সম্ভব। তবে কাজের ক্যাটাগরি অনুযায়ী চাহিদা কম বা বেশি হয়ে থাকে। আপনার যে ধরণের কাজে দক্ষতা রয়েছে সেই ধরণের কাজই করতে পারবেন। অধিক চাহিদা রয়েছে এমন ক্যাটাগোরিগুলো হলো-
- ওয়েবসাইট তৈরি
- মোবাইল অ্যাপস তৈরি
- প্রোগ্রামিং
- ডাটাবেজ
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- এনিমেশন
- ভিডিও এডিটিং
- গেম তৈরি
- প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
- সফ্টওয়ার টেস্টিং
- সার্চ ইঞ্চিন অপটিমাইজেশন
- ডাটা এন্ট্রি
ফ্রিল্যান্সিং সাইট
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে আপনাকে এক বা একাধিক ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত হতে হবে। এগুলো ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে একটি ব্রিজের মতো কাজ করে। ক্লায়েন্ট তার কাজের বিবরণ উল্লেখ করে সাইটগুলোতে জব পোস্ট করলে ফ্রিল্যান্সাররা উক্ত কাজের জন্য বিড করে। সেখান থেকে ক্লায়েন্ট দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং বাজেট অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করেন।
কিছু সাইটে ফ্রিল্যান্সার তার কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং কাজের রেট উল্লেখ করে গিগ (GIG) প্রকাশ করে, ক্লায়েন্ট তার প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করে কাজ করিয়ে নেয়। আমরা এখানে 10 টি ফ্রিল্যান্স সাইট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিবো যেগুলো জনপ্রিয় এবং নতুনদের জন্য সেরা।
1. Fiverr
ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোর মধ্যে নতুনদের জন্য সবচেয়ে আদর্শ হিসাবে Fiverr কে বিবেচনা করা হয়। ক্লায়েন্টরা ছোট এবং সহজ কাজগুলোকে অল্প খরচে করিয়ে নিতে পারে। তাই এখানে কাজের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যারা ফ্রিল্যান্সিং এ নতুন, তারা অনেক কম রেটে তাদের সার্ভিস অফার করে থাকে। যা ক্লায়েন্টদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।
প্রায় সব ক্যাটাগরির কাজ এখানে পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সারদেরকে তাদের দক্ষতা, সেবার সুবিধাগুলো উল্লেখ করে গিগ (GIG) পাবলিশ করতে হয়। সেখান থেকে ক্লায়েন্ট তাদেরকে নির্বাচন করে। তাছাড়া ক্লায়েন্টও জব পোস্ট করে, যেখানে ফ্রিল্যান্সার অ্যাপ্লাই করতে পারে।
আপনার প্রতিটি কাজের বিল থেকে 20% Fiverr ফি হিসাবে কেটে রাখবে। এখান থেকে বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়।
2. Upwork
নতুন এবং পুরাতন উভয়ের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় সাইট। ছোট এবং বড় সব ধরণের কাজ এখানে পাওয়া যায়। এই সাইটে বিশ্বের প্রায় 190 টি দেশের প্রায় 12 মিলিয়নেরও বেশি লোক রয়েছে। প্রায়শই এই সাইটে এমন সব কাজ পোস্ট করে যা অন্য কোথাও দেখা যায় না।
এই সাইটে ফ্রিল্যান্সার এবং এজেন্সিরা বিশ্বব্যাপী ক্লায়েন্টদের সাথে তাদের দক্ষতা এবং পরিষেবা অফার করে থাকে। যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার কারণে Upwork অনেকেরই পছন্দের ফ্রিল্যান্সিং সাইট। ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করলে ফ্রিল্যান্সারদের সেই কাজে বিড করার মাধ্যমে কাজ নিতে হয়।
3. Freelancer.com
এটিও আরেকটি বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেখানে প্রায় 12.6 মিলিয়ন জব পোস্ট করা হয়েছে। নতুনদের জন্য এটি একটি সেরা জায়গা, এখানে অ্যাকাউন্ট করার জন্য বা প্রাথমিক পর্যায়ে কাজের জন্য বিড করতে কোন টাকা খরচ হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন পেমেন্ট মেথডের মাধ্যমে এখান থেকে টাকা উঠানো যায়।
এখানেও কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সারদের বিড করতে হয়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কাজ থাকার কারণে আপনি আপনার দক্ষতা অনুযায়ী সহজেই কাজ খুঁজে নিতে পারবেন। এই সাইটটি শিক্ষানবিস ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি নিরাপদ পথ প্রদান করে এবং সময়মতো পেমেন্ট রিলিজ করে।
4. Guru.com
প্রাসঙ্গিক দক্ষতা অনুযায়ী কাজ খোঁজার জন্য অন্যতম সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট এটি। আপনি এখানে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চল অনুসারে অনেকগুলো বিভাগ থেকে কাজ নির্বাচন করতে পারবেন। Guru.com-এর মাধ্যমে আপনি সঠিক নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনার ড্যাশবোর্ড সুন্দরভাবে তৈরি করতে পারেন।
এই সাইটের ড্যাশবোর্ড বৈশিষ্টটি ব্যবহারকারীদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমেই আপনি কাজ, নথি, এবং অন্য যেকোনো আপডেট পেতে সক্ষম হবেন। তাছাড়া এটি আপনাকে আপনার ক্লায়েন্টদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের অনুমতি দেয়।
5. PeoplePerHour
আপনি যখন নতুন তখন প্রথমেই ক্লায়েন্ট আপনার উপর আস্থা রাখতে পারে না। তাই এমন একটি সাইটের প্রয়োজন যেখানে প্রতিনিয়ত জব পোস্ট হয়। PeoplePerHour সাইটটি এমই। এখানে ক্রমাগত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জব পোস্ট হচ্ছে। যেখান থেকে আপনি কাজ পছন্দ করতে পারবেন।
এই সাইটের নামটি কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। তবে আপনি যে জবের জন্য অ্যাপ্লাই করবেন সেটি নির্দিষ্ট মূল্য বা প্রতি ঘন্টার মূল্য হিসবে পেস্ট করা হয়েছে কি না তা লক্ষ্য রাখবেন। ভার্চুয়াল সহকারী, অনুবাদক, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং আরও অনেক কাজ সহ যেকোনো সময়ে প্রায় 5,000টি বিভিন্ন জব পোস্ট প্রায় সবসময়ই থাকে।
6. Designhill
এই সাইটটি মূলত ডিজাইনারদের জন্য। এখানে পোশাক ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি, সোশ্যাল মিডিয়ার কাজ সহ আরো অনেক ধরণের কাজ পেতে পারেন। এখানকার গ্রাফিক ডিজাইনের প্রতিযোগিতা, কাস্টম ডিজাইন পরিসেবা, রেডিমেড লোগো এবং অন্যান্য ছোট ডিজাইনের কাজগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটে আপনি খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কাজ শুরু করতে পারেন। নতুন ধরণের ডিজাইন তৈরি করা যদি আপনার শখ হয়ে থাকে বা এই ব্যাপারে যদি আপনার দক্ষতা থাকে তাহলে আজই Designhill-এ জয়েন করে ফেলুন।
7. Nexxt
বহুল ব্যবহৃত এই ওয়েবসাইট 4 টি মানদণ্ড অনুসারে কাজকে শ্রেণীবদ্ধ করে, যেগুলো হল- স্থানীয় ফোকাস, ক্যারিয়ার ফোকাস, গ্লোবাল ফোকাস এবং বৈচিত্র্য ফোকাস। Nexxt এর সবচেয়ে ভালো দিক হল, এটি আপনাকে বিভিন্ন ডোমেইনে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার চেষ্টা করতে সহায়তা করে যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক।
নতুনদের জন্য এটি একটি অন্যতম সেরা ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা তাদের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সহজেই উপযুক্ত প্রতিভা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। এছাড়াও, এই ওয়েবসাইটটি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যবহারকারী-বান্ধব। Nexxt ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেলকে উন্নত করার মাধ্যমে এখানে কাজ করাকে সুবিধা করে দিয়েছে।
8. Urban Pro
আরবান প্রো হল একটি অনলাইন টিউটোরিয়াল প্ল্যাটফর্ম, যা অনেক ফ্রিল্যান্সারকে প্রচুর আয় করার সুযোগ করে দিয়েছে। আপনার শুধু একটি নির্দিষ্ট বয়সের লোকেদের শেখানোর পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রদের শেখানোর জন্য একজন অনলাইন গৃহশিক্ষক হতে পারেন, অথবা লোকেদেরকে যেকোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতে পারেন। এটি শুধুমাত্র আপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করে।
এক কথায় আমাদের দেশে যেমন প্রাইভেট টিউটর থাকে, এটি তেমনভাবে কাজ করে। আপনি এখানে আপনার যে বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে সেই বিষয়ে লোকদের প্রশিক্ষণ বা টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। এখানে প্রায় ১০০ টিরও বেশি বিভাগ রয়েছে। অবশ্যই চেক করবেন আপনার উপযোগী কোন বিভাগ রয়েছে কি না।
9. iwreter
এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটটি মূলত রাইটারদের জন্য। এখানে বিভিন্ন ধরণের রাইটিং জব পাওয়া যায়। অন্যান্য সাইটে যেমন আপনাকে কাজ পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, তার বীপরিতে আপনি এখানে জয়েন করেই কাজ শুরু করতে পারবেন।
অনেক ছোট কাজ থেকে শুরু করে বড় ধরণের লেখার কাজ এখানে সবসময়ই পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সার এখানে কাজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পেমেন্ট পেয়ে থাকে। আপনি জয়েন করার পরে শুরুতে কম টাকায় কাজ করতে হতে পারে। তবে কিছুদিন কাজ করার পরে আপনার পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করে আপনার ইনকামও অনেক বেড়ে যাবে।
10. Facebook Group
আমার ধারণা ফ্রিল্যান্সিং জগতে যারা নতুন, তাদের বেশিরভাগই প্রথম কাজ পায় বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ থেকে। আপনি যদি নতুন শুরু করতে চান, আপনার দক্ষতা অনুযায়ী ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করে ফেলুন। এখান থেকে আপনি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন, কারণ নতুন বা পুরাতন সব ধরণের কাজের জন্য এখানে ফ্রিল্যান্সার যেমন পাওয়া যায়, কাজও অনেক পাওয়া যায়।
Facebook এমন একটি স্যোশাল সাইট যা প্রায় সকলেই ব্যবহার করে। সবাই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পাশাপাশি অনেক সময় কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্যও এই প্লাটফর্মের স্বরণাপন্ন হয়ে থাকে। তাই এখান থেকে আপনি খুব সহজেই আপনার প্রথম কাজটি পেয়ে যেতে পারেন।
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে নিয়মিত কাজ পাওয়া যায়। অনেকগুলো সাইট আছে যেখানে টাকা দিয়ে তাদের সদস্য হতে হয়। তবে অভিজ্ঞরা সাধারণত সুপারিশ করে, শুরুতে টাকা খরচ না করে বরং যে সমস্ত জায়গাতে ফ্রি ইনকাম করা যায় সেখান থেকে শুরু করতে।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
এখন ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো বলতে আসলে এটা বোঝায় যে আমি কি কাজ শিখবো। এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে আপনার কোন বিষয়ে দক্ষতা সবচেয়ে ভালো রয়েছে। আপনি যদি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইন এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে সেটিকে আরো বেশি চর্চা করার মাধ্যমে আরো বেশি দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন।
যদি এমন হয় আপনি কোন ধরণের স্কিল শিখে তারপর ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন, তাহলে আপনাকে প্রথমেই বিবেচনা করতে হবে কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি। তাছাড়া যাচাই করতে হবে সেই কাজের চাহিদা বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে কেমন রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য স্কিল বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে শিখতে পারেন। বর্তমান সময়ে বেশ কিছু কোচিং সেন্টার যেমন রয়েছে, পাশাপাশি অনেক ধরণের অনলাইন কোর্স রয়েছে যেগুলো থেকে আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী স্কিল আয়ত্ব করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং কোথায় শিখব?
যেমনটা আমরা আগেই বলেছি আপনি অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে যেমন শিখতে পারেন, পাশাপাশি আমাদের দেশে বর্তমানে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার রয়েছে যেগুলো থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনি দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে সেখান থেকে শিখে প্রকৃতপক্ষে লোক উপকার পাচ্ছে কি না।
কোচিং সেন্টারগুলোর পুরাতন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে পারেন। তাদের মতামত এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। আর অনলাইনের মাধ্যমে কোর্স করতে যাচাই করুন ট্রেইনার এর দক্ষতা কি, এবং সে কোথায় কি ধরণের কাজ করে। আসলে সে উপার্জন করতে পারে কি না। যদি সে নিজে একজন সফল ব্যক্তি হয়ে থাকে তাহলে ধরে নেওয়া যায় আপনি তার নির্দেশিত পথে চললে সফলতা পাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কিভাবে তুলতে হয়?
সব ফ্রিল্যান্সিং সাইটের পেমেন্ট মেথড একই রকম নয়। তবে যে ধরণের সাইটগুলো বিশ্বস্ত সাধারণত সেখান থেকে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করার ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট মেথড যেমন- Paypal, Payoneer, Skrill ইত্যাদি সহ আরো অনেক পেমেন্ট মেথডে টাকা উঠানো যেতে পারে।
এছাড়া আমাদের দেশের কিছু ব্যাংক টাকা এবং ডলার উভয় কারেন্সি সাপোর্ট করে এমন মাস্টার কার্ড দিয়ে থাকে। যেগুলোর মাধ্যমেও কিছু সাইট থেকেও পেমেন্ট নেওয়া যায়। পেমেন্ট নেওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হল Paypal, যদিও এই সার্ভিসটি আমাদের দেশে আপাতত নেই। তবে আশা করা যাচ্ছে খুব শিঘ্রই এই সেবা আমাদের দেশে চালু হয়ে যাবে।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার
গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বর্তমান কর্পোরেট জগতের প্রতিযোগীতামূলক পরিস্থিতিতে পূর্বের নিয়মে একই ধরণের কাজ এখন অনেকটাই অচল। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক চিন্তাধারা এবং নতুনত্বের জন্য তাই প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রিল্যান্সারদের স্বরণাপন্ন হচ্ছে। আর তাই এটা বলা যায় আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এ সফলভাবে ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে পারেন তাহলে আপনার ভবিষ্যত অবশ্যই উজ্জ্বল।
তবে মনে রাখবেন, এখানে আপনাকে ক্যারিয়ার করতে হলে অবশ্যই অত্যন্ত দক্ষ হতে হবে। আপনি যে কাজই করেন না কেন, সেই কাজে আপনাকে হতে হবে সেরা। এখানে আপনাকে প্রতিদ্বন্দিতা করতে হবে বিশ্বের সব দেশের সব ধরণের মানুষের সঙ্গে। তাই ফ্রিল্যান্সিং-এ ক্যারিয়ার করতে প্রতিমূহুর্তে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায়, যে সমস্ত ফ্রিল্যান্সার অধিক আয় করে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে আয় করতে পারা ফ্রিল্যন্সারের সংখ্যাও। সব মিলিয়ে এটা বলা যায়, আপনি যদি আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারেন, আপনার ভবিষ্যত ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার যথেষ্ট উজ্জ্বল।
ফ্রিল্যান্সিং করতে কি কি লাগে?
প্রথমত ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট সংযোগ সহ একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ। তবে ফ্রিল্যান্সিং যদি পেশা হিসাবে নিতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত সময় দিতে হবে এবং শুরুতে কঠোর পরিশ্রমের প্রস্তুতি থাকতে হবে। এর সাথে লাগবে আপনার দক্ষতা, যার কোন বিকল্প নেই। আপনার একাডেমিক সার্টিফিকেট অতটা সহায়তা করবে না, যতটা আপনার কাজের দক্ষতা করবে। তাই ফ্রিল্যান্সিং করতে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলুন।
ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু অসুবিধা
এতক্ষণ ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো বা কোথায় শিখবো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মোটামুটি দিতে পেরেছি। তবে সুবিধার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে যেগুলো আপনাকে জানতে হবে। এগুলো সম্পর্কে না জানলে মাঝপথে আপনি হতাশ হয়ে যেতে পারেন। অসুবিধাগুলো হল-
- শুরুতে আপানার ইনকাম করতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে বা অনেক বেশি সময় লাগতে পারে।
- কাজ করলে উপার্জন হবে, কিন্তু কাজ যদি নিয়মিত না থাকে তাহলে ইনকামও অনিয়মিত হতে পারে।
- একাধিক ক্লায়েন্ট এবং প্রকল্প পরিচালনার জন্য একটি চমৎকার সংগঠনের প্রয়োজন হতে পারে।
- প্রথমদিকে ইনকাম অনেক কম হতে পারে। কারণ নতুনদের কাজের রেট প্রয়শই খুব কম হয়।
- বিভিন্ন সাইট থেকে পেমেন্ট রিসিভ করতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
শেষ কথা
শুরু করেছিলাম ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এই প্রশ্ন দিয়ে। আসলে ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি বিষয়, যেখানে কিভাবে শিখবো যেমন একটি কমন প্রশ্ন, তেমনি কোন কাজ শিখবো এটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে আপনার দক্ষতা বা আগ্রহ আছে এই ধরণের বিষয় শিখলে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এখানে যেমন সুবিধামতো কাজ করার সুযোগ আছে, একইভাবে না ঘুমিয়ে টানা কাজ করার প্রয়োজনও হতে পারে।
আপনি যদি উচ্চাকাঙ্খি হয়ে থাকেন, পরিশ্রম করতে ভয় না পান তাহলে ফ্রিল্যান্সিং করার পরিকল্পনা করতে পারেন। এটি আপনাকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে। কারণ এখানে আপনার অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, জ্ঞান, দক্ষতার সবটুকু কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। ধন্যবাদ।