খাঁটি মধুর উপকারিতা : আমাদের এই পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের শেষ নেই। তেমনই এক নেয়ামত হচ্ছে মধু। এটি যেমন খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তার থেকেও বেশি এটির ঔষধি গুণের জন্য বিখ্যাত।এমন অনেক বড় বড় রোগ রয়েছে যা খাঁটি মধু খাওয়ার ফলে সুস্থ হওয়া যায়।
মধু আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। যারা নিয়মিত নিয়ম করে মধু খায় তাদের শরীর আর সবার শরীর থেকে সুস্থ থাকে। সবারই উচিত নিয়মিত নিয়ম করে মধু খাওয়া এতে এর গুণাগুণ শরীরে বৃদ্ধমান হবে। নিম্নে মধুর কতগুলো গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ-
ইসলামে মধুর উপকারিতা
ইসলামে মধুর যে গুণাগুণ রয়েছে তা বিস্তর ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এটা যে একটা ঔষধিগুণ সম্পন্ন পানীয় তাও বলা হয়েছে। তেমনি ভাবে কোরানের আয়াত, হাদিস শরীফের আয়াত নিম্নে বর্ণিত করা হলোঃ-
وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ
অর্থঃ তোমার পালনকর্তা মৌমাছির প্রতি আদেশ করেছেন যে, পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর।
ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلاً يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থঃ অতঃপর সর্বপ্রকার ফল থেকে আহার কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙ এর পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
– সূরা আন-নাহল(১৬), আয়াতঃ ৬৮-৬৯
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মধুতে আরোগ্য নিহিত আছে।’ (সহীহ বুখারি: ৫২৪৮)।
আয়েশা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে মধু ও মিষ্টান্ন খুব প্রিয় ছিল। (সহীহ বুখারি: ৫২৫০)।
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে খাবে, তার বড় ধরনের কোনো রোগ হবে না।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৪৪১)।
আয়্যাশ ইবন ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বললঃ আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে মধূ পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। সে তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও।
এরপর লোকটি পুনরায় এসে বললঃ আমি অনুরূপই করেছি। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট অসত্য বলছে। তাকে মধু পান করাও। সে তাকে মধু পান করাল। এবার সে আরোগ্য লাভ করল। – সহীহ বুখারি অধ্যায়ঃ চিকিৎসা হাদিস নাম্বারঃ ৫২৮২
উপরের বিষয় থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মধুর যে গুণাগুণ রয়েছে তা যদি আমরা আমাদের কাজে লাগাতে পারি। তাহলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার হবে। ইসলামে মধু পানের জন্য বলা হয়েছে এবং এটিকে আরোগ্য লাভের অন্যতম হাতিয়ারও বলা হয়েছে। কাজেই আরোগ্য লাভের জন্য মধু খাওয়া খুবই ফলপ্রসূ।
খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই জানি না খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা কি। মধু আমাদের শরীরের উপকার করে থাকে। কেউ যদি খালি পেটে মধু খেতে চায় তাহলে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার ওজন কমাবে । বিশেষজ্ঞদের মতে এতে লিভারও পরিষ্কার থাকবে।
খালি পেটে মধু খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়াবে। এতে শরীর আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। নিয়মিত সকালে মধু খেলে শরীরের দশ ভাগ খারাপ কোলেস্টরেল কমে যায়।
মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ নিয়মিত খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এটা পেটের অম্লভাব কমিয়ে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু কিন্তু খুবই উপকারী।
খাঁটি মধুতে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক চিনি বিদ্যমান যা শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। মধু খাবার ফলে আপনার অন্য মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমবে,মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেতে পারেন। এটা নিয়মিত খেলে শরীরের দুর্বলতা কমবে।
ডায়াবেটিস রোগির জন্য মধু
অনেকেই মনে করেন যে ডায়াবেটিস রোগীরা মধু খেতে পারবে না বা খেলেই ক্ষতি হতে পারে।আসলে বিষয়টা তা না। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি নিয়ম মাফিক মধু খেতে পারেন তাহলে এতে ক্ষতি হওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।
যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তারা যখন মধু খেতে চাইবে তখন এক চামচ পরিমাণ মধু খেতে পারে। অনেকেই বলে থাকে যে ইচ্ছাস্বাধীন মধু খাওয়া যায়। এরকম করলে এতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যখন এক চামচ পরিমাণ মধু খাবেন তখন ঐ বেলা শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিমাণের তুলনায় কিছু কম খাবেন।
মানে দেড় কাপ পরিমাণ ভাত বা ছোট রুটি খাওয়া থেকে বিরত থাকলে মধু ডায়াবেটিসের জন্য কোননো ক্ষতি করবে না। অথবা যে পরিমাণ মধু খাবেন ঐ পরিমাণের হিসাব করে নিয়মিত যে শর্করা জাতীয় খাবার খাচ্ছেন তা একটু কম খাবেন। এতে আর ভয়ের কিছুই নেই।
শর্করা জাতীয় খাবার কেন কম খাবেন তা একবার দেখে নিন
মধুতে যথেষ্ট পরিমাণ শর্করা আছে। মধুতে ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪-৪৩ শতাংশ ফ্রুকটোজ, ০.৫-৩ শতাংশ সুক্রোজ ও ৫-১২ ম্যালটোজ থাকে। গ্লুকোজ তো আছেই, বাকি শর্করাটুকুও রেচন প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ গৃহীত মধুর প্রায় ৭৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ গ্লুকোজে পরিণত হচ্ছে।
প্রতি গ্রাম মধু থেকে ১.৮৮ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে সামান্য পরিমাণে প্রোটিনও পাওয়া যায়। মধু হচ্ছে ঘন শর্করা জাতীয় খাদ্য।তাই বলা যায় যে ডায়াবেটিস রোগীরাও মধু খেতে পারে কিন্তু পরিমাণ করে খাবেন এবং সমপরিমাণ শর্করা কম খেতে হবে। আর কেউ এতো নিয়ম না মানার জন্য মধু খাওয়া বর্জন করতে চায় তাতে তার জন্য আরও ভালো।
যৌন ক্ষমতা বাড়াতে মধুর ভূমিকা
মধু এমনই এক ঔষধি গুণ সম্পন্ন খাদ্য যা যৌন সমস্যায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যৌন শক্তি বাড়াতে মধুর গুরুত্ব অপরিসীম। যারা মনে করেন যে তাদের যৌন শক্তি নেই বা কম তারা চাইলে এই ঔষধি খাদ্য খেয়ে তাদের যৌন শক্তি বাড়াতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন ১ গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।
আমাদের দেশের মেয়েরা একটি জিনিসে খুবই চিন্তিত থাকে তা হচ্ছে ঋতুস্রাব অনিয়মিত। যখনই অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয় তখনই তারা অনেক ভয়ের মধ্য দিয়ে দিন পার করে। আর তাই এতে উপকার পেতে হলে ছোট চামচে এক চা চামচ তুলসীর রস, সমপরিমাণে মধু ও এক চিমটি বা একটি গোলমরিচের গুঁড়ো এক সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার করে দুমাস নিয়মিত সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।
আমরা প্রতিনিয়ত নানারকম সমস্যার মধ্য দিয়ে দিনযাপন করি। কখনও হাত কেটে যায়, শরীরের কোথাও পুড়ে যায় এরকম সমস্যা। শরীরের কোথাও যদি পুড়ে যায় তাহলে সামান্য মধু মেহেদী পাতার সঙ্গে বেটে লাগালে এতে পোড়াজনিত জ্বালা ও কষ্ট লাঘব হয়।
অনেকেই অনেক রকম রোগে ভুগে থাকেন। কেউ কেউ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর রোগ প্রশমিত করতে মধুর ভূমিকা অপরিসীম। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ লেবু ও এক চামচ আদার রস এবং দু’চামচ মধু মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রশমিত হয়।
মধু চর্মরোগের জন্য অনেক উপাদেয়। কেউ যদি নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে ২০ গ্রাম মধু ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে ৪-৫ মাস খায় তাহলে চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি চর্মরোগ সেরে যাবে।
মধু অনিদ্রাজনিত সমস্যায় অনেক উপকারে আসে। পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে অনিদ্রা জনিত সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
অনেক সময় আমাদের দাঁতে ব্যাথা হয়। আর দাঁতে ব্যথা সহ্য করা অনেক কষ্ঠকর। তাই আপনি যদি চান যে ক্ষণিকের মধ্যেই দাঁতের ব্যাথা কিছুটা প্রশমিত করতে চান তাহলে আপনাকে মধুতে তুলা ভিজিয়ে ব্যথার স্থানে রাখতে হবে। এতে ব্যথা অনেকাংশে কমে যাবে।
দু’চামচ মধুতে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে সেবন করলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ঠাণ্ডা লাগলে বা সর্দি হলে নাক দিয়ে পানি পড়লে বা ভেতরে জমে থাকা কফ বের করতে হলে মধু মিছরি ও মেহেদী পাতার রস পরপর ৮-১০ দিন নিয়মিত সেবন করলে সর্দি কমে যায়। আদা, পান, তুলসীর রসের সঙ্গে মধু মিছিয়ে দিনে দু’তিনবার খেলে কাশি কমে যায়।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহূত হয়। দাঁতে ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ হয়। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।
মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়। এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।
আরো পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
পাকস্থলীর সুস্থতায় মধু
মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
ফুসফুসের রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়
বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী।
কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তিতে
হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু। গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিন বেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারেন।
প্রশান্তিদায়ক পানীয়
হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসেবে অসাধারণ।
ডিসক্লেইমার ও সতর্কবার্তা
এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল তথ্য সাধারণ ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত। যেকোনো নিজ দায়িত্বে ও পেশাদার উপদেশের ভিত্তিতে প্রয়োগ করুন। এই সাইটের কোনো তথ্য প্রয়োগ করে কোনো সমস্যায় পড়লে তার দায় ‘ট্রিক ব্লগ বিডি’ বা কন্টেন্ট রাইটার বহন করবেনা। বিস্তারিত জানতে আমাদের ডিসক্লেইমার পেজ দেখুন।
শেষ কথা
খাঁটি মধুর উপকারিতা নানাবিধ। একটি আর্টিকেলে সব বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে আমরা সম্ভাব্য ও প্রচলিত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই তথ্যগুলো বাস্তব জীবনে ব্যবহারের আগে অবশ্যই পেশাদার পরামর্শ নিন।
দেখুনঃ হেলদি স্পোর্টস শপে খাঁটি মধু
ধন্যবাদ ভাই।
আপনাকেও ধন্যবাদ