মোটা হবার সহজ উপায়
মোটা শাষিত দেশে স্বাস্থ্যহীনতার কথা একদমই হাস্যকর! তারপরও কিছু লোক আছে যারা একদমই রোগা। তাদের জন্য আজকের এই টিপ্স মোটা হওয়ার সহজ উপায় ও মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা । সত্যি কি আপনি মোটা হতে চান? তাহলে জেনে নিন।
এখানে দেওয়া মোটা হবার সহজ উপায় গুলো একবার পালন করে দেখুন। আশা করি একটু হলেও উপকার পাবেন। তবে মোটা হবেনই, এমনটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তো চলুন শুরু করি।
মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা
মোটা হতে হলে বা ওজন বাড়াতে হলে কিছু জিনিস মেনে চলতে হয়। খাদ্য তালিকা তার মধ্যে অন্যতম ও সবচেয়ে কার্যকরী। খাদ্য মানুষকে মোটা অথবা রোগা করে তুলতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের উপর আপনার মোটা ও চিকন হওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে। আপনার খাদ্য তালিকায় ক্যালোরি বেশি থাকলে আপনি দ্রুত মোটা হবেন, আর কম থাকলে চিকন হবেন।
তাছাড়া খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার থাকলে সহজে ওজন বাড়ানো যায়। অনেকেই তাদের ওজন বাড়াতে চান। তাই তারা মোটা হওয়ার হওয়ার খাদ্য তালিকা খুঁজে বেড়ান।
নিচে দ্রুত মোটা হওয়ার জন্য ১টি খাদ্য তালিকা তুলে ধরা হলো।
১. ক্যালোরি যুক্ত খাবার খান
চিকন হতে চাইলে যে রকম আমরা ক্যালোরি কমিয়ে নিই, তেমনি মোটা হতে চাইলে ক্যালোরি বাড়িয়ে নিতে হবে। আপনার প্রয়োজনের চেয়েও ৪০০/৫০০ বা ৭০০ ক্যালোরি গ্রহন করুন।
এতে করে আপনি খুব সহজেই ওজন বাড়াতে পারবেন। ওজন বাড়ানোর উপায় হিসেবে এটি যথেষ্ঠ কার্যকর।
২. প্রোটিন যুক্ত খাবার খান
মোটা হতে চাইলে প্রোটিনের বিকল্প নাই। ওজন বাড়াতে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা শুধু ক্যালোরি কোন উপকারে আসবে না। কেননা, প্রোটিন ছাড়া বেশি ক্যালোরি ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
ওজন বাড়াতে হলে পেশি বাড়াতে হবে। আর পেশি একমাত্র প্রোটিন যুক্ত খাবার দ্বারাই বাড়ে। প্রতি কিলোগ্রাম খাবারে ১.৫ থেকে ২.২ গ্রাম প্রোটিন আছে এমন খাবার খেতে হবে।
ড্রাই ফুটসে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ফ্যাট। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে নিয়মিত ড্রাই ফুটস খান।
৩. কার্বোহাইড্রেট গ্রহন করুন
কার্বোহাইড্রেট ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ভাত-রুটি জাতীয় সকল খাবরই মূলত কার্বোহাইড্রেট। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন বেশি বেশি কার্বোহাইড্রেট গ্রহন করুন।
ভাত ও রুটিতে সবচেয়ে বেশি কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। তাই এই দুইটি খাবার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখুন।
৪. ভাতের মাড় খান
আপনি হয়তো জানেন না যে মাড়ের সাথে ভাতের স্টার্চের অনেকটাই চলে যায়। ওজন বাড়াতে চাইলে ভাতের মাড়ের খুবই উপকারী। তাই ভাতের মার না ফেলে খেয়ে নিন।
আরো পড়তে পারেনঃ কোন ঔষধের দাম কত? ১ টি অ্যাপ এর মাধ্যমে জানুন ঔষধের নাম ও দাম (ভিডিও)
৫. প্রচুর শাক-সবজি ও ফল খান
আপনি হয়তো বলছেন এগুলো ওজন কমানোর জন্য! আমি কি আপনাকে ভুল বলেছি? না,না।
এমন অনেক ফল আর সবজি আছে যারা কিনা উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পাকা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, কাঁচা কলা ইত্যাদি ফল ও সবজি খেলে ওজন বাড়বে।
৬. বারবার খাবেন না
অনেকেই লেখেন যে বারবার খেলে ওজন বাড়বে। এটা মোটেও সঠিক না, সম্পূর্ণ ভুল। বরং নিয়ম মেনে পেট পুরে খান। কেননা পেট পুরে খাওয়া হলে মেটাবলিজম হার কমে যায়।
ফলে খাবারের ক্যালোরির অনেকটাই বাড়তি ওজন হয়ে শরীরে জমা হয়। অল্প অল্প করে বারবার খাওয়াটা মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওজন কমে যায়।
৭. ঘুমাবার আগে দুধ ও মধু মিশ্রিত খান
ঘুমিয়ে পড়ার কারণে আমাদের অন্যান্য খাবার তেমন উপকার আসে না। তখন শুধু মাত্র প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন দুধ, মধু মিশ্রিত খাবার গুলোই কাজে আসে।ঘুমিয়ে পড়ছেন বলে এগুলো খরচ হয় না।
তাই এগুলো আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ঘুমানোর পুর্বে রোজ দুধ ও মধু মিশ্রিত খান।
৮. ছোলা ও তার পানি খান
মোটা হওয়ার জন্য ছোলার বিকল্প নাই। তাই প্রতিদিন রাত্রে ১০/১২ টি ছোলা ভিজেয়ে রাখুন। আর সকালে ওঠে ছোলা ও তার পানি খান।
এটি মোটা হওয়ার একটি প্রাকৃতিক উপায়। খুবই কম সময়ে এটি আপনার ওজন বাড়াতে দারুণভাবে সাহায্য করবে।
আরো পড়তে পারেনঃ গাড়িতে বমি হওয়ার কারণ ও গাড়িতে বমি বন্ধ করার উপায়
৯. বাদাম ও কিসমিস খান
রাত্রে শোয়ার আগে ১ গ্লাস জলে আধ কাপ কিসমিস ও বাদাম ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ফুলে উঠলে তা খান। ওজন বাড়ানোর জন্য এর কোন বিকল্প নাই
১০. মোটা হবার জন্য পাস্তা ও নুডুলস খান
আপনি পাস্তা কিংবা নুডলস খেতে ভালোবাসেন? আহলে আপনার জন্য সুখবর। কারণ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ পাস্তা ও নুডলস উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার।
এটি খুব দ্রুত আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। তাই মোটা হতে চাইলে প্রতিদিন পরিমাণমতো পাস্তা অথবা নুডলস খেতে পারেন। এটি হয়তো আপনার মনের মতো মোটা হওয়ার সহজ উপায় গুলোর মধ্যে একটি।
১১. মোটা হবার জন্য ডিম
মোটা হওয়ার সহজ উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি হলো দিম খাওয়া। ডিম ওজন বৃদ্ধি করার জন্য অত্যন্ত ভরসা যোগ্য একটি উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, প্রোটিন ও গুড ক্যালোরি। এগুলো আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী।
ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে তাই নিয়মিত ডিম খাওয়া শুরু করুন। ৩-৪ টি ডিমের সাদা অংশ খান প্রতিদিন। কোনোভাবেই কাঁচা ডিম খাবেন না। সেদ্ধ করার ডিমের সাদা অংশই খাওয়া উচিত। ১-২ মাসের মধ্যেই কিন্তু ফল আপনি পেয়ে যাবেন।
১২. মোটা হওয়ার জন্য আলু খান
আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও কমপ্লেক্স সুগার রয়েছে। তাই নিয়মিত আলু খেলে আপনার শরীর প্রাকৃতিকভাবেই মোটা হবে।
১৩. কলিজা
ওজন বাড়ানোর জন্য কলিজা খেতে পারেন। ভাতের সাথে অথবা রুটি, পরটার সাথে কলিজা খেতে পারেন।
১৪. শাকসবজি
খাদ্য হিসেবে শাকসবজির গুণাবলির কথা সকলেরই জানা। এটি আপনাকে সুস্বাস্থ্যের সাথে মোটা হতে সাহায্য করবে। তাই নিয়মিত শাকসবজি খান।
১৫. পরোটা
অনেকেই পরোটা খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু বাজারে অতিরিক্ত তেলযুক্ত পরোটা খান। তাই বাজারের পরোটা না খেয়ে ঘরে ভালো তেলে তৈরি পরোটা খান।
১৬. ভাত
পরিমিত ভাত খান। ওজন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ভাত খাওয়া ঠিক নয়। বেশি ভাত খেলে পেট ফাঁপা হয়ে যায়। এতে ভুড়ি বেড়ে যায়। তাই চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত ভাত খান।
১৭. মাংস
মোটা হওয়ার জন্য মাংস আপনার অবশ্যই চাই। মাংস খেলে আপনি খুব দ্রুত মোটা হবেন। তাই বলে কিন্তু খুব বেশি পরিমাণে মাংস খাওয়া ঠিক হবেনা। তাহলে কিন্তু সুস্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
আশা করি, ওজন বাড়ানোর বা মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকাটি আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে। এবারে চলুন, পরবর্তী বিষয়গুলো দেখে নেই।
অন্যান্য নিয়ম পালন করুন
শুধু খাবার খেলেই হবেনা। আরো কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। নিচে অন্যান্য পালনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১৮. নিয়মিত ঘুমান
নিয়মিত ৬/৮ ঘন্টা ঘুমালে আমাদের শরীর অন্যদিনের চেয়ে অনেকটা ভালো থাকে। তাই সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ঘুম জরুরী। শরীর ঠিক থাকলেই তাড়াতাড়ি মোটা হতে পারবেন।
১৯. ভালো পরিবেশে থাকুন
খারাপ পরিবেশে থাকলে যেমন মানুষ অসুস্থ হয়ে যায় এবং স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। তেমন ভালো পরিবেশে থাকলে শরীর সুস্থ থাকে। আর শরীর সুস্থতা আপনাকে মোটা ও ওজন বাড়াতে সহযোগিতা করবে।
২০. অতিরিক্ত হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকুন
পর্ণো ও অশ্লীল চটি পড়ে অনেকেই অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করেন। আপনি যা খেয়েছেন তার থেকে বেশিই যদি ঝরে যায় তাহলে তো আপনি রোগা হবেনই।
তাই হস্তমৈথুন থেকে দূরে থাকুন। এজন্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে পারেন।
আরো পড়তে পারেনঃ শিং মাছের কাটা হাতে ফুটলে করণীয় কি | ৭ টি টিপস
২১. চিন্তা মুক্ত থাকুন
অতিরিক্ত চিন্তা করলে আপনার শরীর রোগা-পাতলা যেতে পারে। তাই দুশ্চিন্তা বাদ দিন। প্রকৃতি উপভোগ করুন। দেখবেন একটু হলেও উপকার পাবেন।
২২. হাসি খুশি থাকুন
গবেষকরা বলেন হাসি খুশিতে থাকাও স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। তাই ভালো থাকার জন্য হাসি খুশিতে থাকুন। এটিও মোটা হওয়ার জন্য আপনাকে সাহায্য করবে।
২৩. তাড়াতাড়ি ঘুমান ও উঠুন
রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমান সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছেঃ
Early to bed
and early to rise
Makes a man healthy,
Wealthy and wise
অর্থাৎ, “সকাল সকাল ঘুমিয়ে যারা, সকাল সকাল উঠে, স্বাস্থ্যবান ধনী আর বিজ্ঞ তারাই বটে“।
সকালে তাড়াতাড়ি উঠা এবং সকালের শীতল আবহাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। তাই সুস্থ্য থাকতে চাইলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমান ও সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন।
আরো পড়তে পারেনঃ গ্যাস্ট্রিক হলে করনীয় ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করার উপায়
২৪. মেটাবলিজম হার কমান
মোটা হবার পেছনে যেমন ধীর গতির মেটাবলিজম দায়ী, তেমনি রুগ্ন স্বাস্থ্যের পেছনে দায়ী উচ্চ মেটাবলিজম হার। সুতরাং মোটা হতে গেলে প্রথমেই এই মেটাবলিজম হার কমাতে হবে।
তাতে আপনি যে খাবারটা খাবেন, সেটা বাড়তি ওজন রূপে আপনার শরীরে জমার সুযোগ পাবে।
মেটাবলিজম হার কম রাখার জন্য প্রতিবেলা খাবারের পর লম্বা সময় বিশ্রাম করুন। খাবার পর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা কোনও কাজ করবেন না।
২৫. ডাক্তার দেখান
সবকিছু করার পরও যদি আপনার ওজন না বাড়ে এবং মোটা না হোন তাহলে চিকিৎকের পরামর্শ নিন। যদি কোন রোগ পাওয়া যায়, তবে জলদি করে ওই রোগের চিকিৎসা করুন।
লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পেটের অসুখ, কৃমি, আমাশয় অথবা কোনো সংক্রামক রোগ থাকলে পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ করলেও ওজন কমে যায়। তাই এমন অবস্থায় অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আরো পড়ুনঃ কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
আশা করি, মোটা হওয়ার সহজ উপায় গুলো আপনার ভালো লেগেছে। যদি না লেগে থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানান। এমনই সব গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট সবার আগে পেতে প্রতিদিন ভিজিট করুন ট্রিক ব্লগ বিডি।
thanks for sharing
কমেন্ট করার অন্য ধন্যবাদ
আসলে আমাদের এই রোগা পাতলা সমস্যা টা অনেকেই ভুগে থাকি। আপনার ব্লগে চেষ্টা করেছেন হেল্পফূল তথ্য দেয়ার জন্য । আমি ও আমার ব্লগে মোটা হওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। সেখানে আমি মোট ১০টি নিয়মের কথা বলেছি যেগুলো মেনে চললে যে কেউ স্বাস্থ্যর পরিবর্তন করতে পারবে।
যদি তার বংশগত কোন সমস্যা না থেকে থাকে । আমার ব্লগটি ঘুরে আসার অনুরোধ রইল । ধন্যবাদ।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।