বাংলা শিক্ষামূলক ছোটগল্প-ভালবাসা
শিক্ষামূলক ছোটগল্প- ভালোবাসা
লেখিকা- তাসলিমা পাটোয়ারী
দশ বছর হলো পুষ্পের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার তার। মেয়েটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে আর ছেলেটি হিফজ পড়ানোর উদ্দ্যেশ্যে হাফেজি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছে ছয় মাস হলো।
ছোট মানুষ তাই বাচ্চাকে একা ছাড়তে চায়না। মায়ের মন তো, মনে মনে ভাবে ছেলেটা যদি রাস্তা পার হতে না পারে এজন্য নিজেই নিয়ে আসেন আর নিয়ে যান।
প্রতিদিন পুষ্প দশ মিনিট আগে গিয়ে বাচ্চার জন্য অপেক্ষা করেন। হঠাৎ সেদিন স্যার বললেন আজ বেশি সময় লাগবে। একথা শুনে পুষ্প অপেক্ষা করতে শুরু করলো এক পর্যায়ে রোদের তাপে গলা শুখিয়ে এলো পুষ্পের।
পুষ্প পানি খাওয়ার জন্য পাশের বাড়ি গেলো, সেখানে দেখলো বাড়িতে কেউ নেই আছেন শুধু বয়ষ্ক এক মহিলা। পুষ্প অবাক হলো এতো বড় বাড়িতে শুধু এই বৃদ্ধ মহিলা বাস করেন? পুষ্প আরো অবাক হলো কারণ দেখলো বৃদ্ধা মহিলা রান্না করছেন।
মিষ্টি কুমড়া চাক চাক করে কেটে তাতে হলুদ আর লবন মিশিয়ে বেগুনের মতো করে ভাজি করছেন তিনি। পুষ্প পানিটা খেয়ে প্রশ্ন করলো, “চাচি আপনার বাসায় আর কেউ নেই?” বৃদ্ধা বললেন, “নারে মা আমি আর তোমার চাচা এই বাড়িতে থাকি”।
পুষ্প অবাক গলায় বললো, “আপনাদের ছেলে-মেয়ে নেই?” বৃদ্ধা মহিলা বললেন, “নেই বলা যায়”। পুষ্প আরো অবাক হয়ে বললো, মানে কি? মহিলা বললেন, “আমার দুই ছেলে মা। তারা দুজনেই চাকুরী করে। ঢাকায় বউ বাচ্চা নিয়ে বড় বড় ফ্ল্যাটে থাকে। আমাদের খবর নেয় না, তোমার চাচা স্কুলে মাষ্টারি করতো সেই পেনশানের টাকায় চলে আমাদের সংসার”।
এরই মধ্যে মিষ্টি কুমড়া ভাজি হয়ে গেলো। মুখে কথা আর হাতে কাজ। এই হলো সাংসারিক নারীর লক্ষণ। এক পর্যায়ে বৃদ্ধা মহিলা ফ্রিজ থেকে খিচুড়ি ভাত বের করে এনে গরম করতে শুরু করলেন। পুষ্প বললো, এটা কখন রান্না করেছেন চাচি?
মহিলা বললেন, আর বলোনা বাপু আমি পরশুদিন গেছিলাম ওয়াজ শুনতে সেখান থেকে দশ প্যাকেট খিচুড়ি নিয়ে এসেছিলাম। ভাবলাম বাসায় গিয়ে একটু রান্না কমে যাবে, এই আজ তিন দিন ধরে খাচ্ছি।
আর তোমার চাচার জন্য দিনে একবার সাদা ভাত রান্না করে তিনবার গরম করে খাওয়াই। পুষ্প বললো, এই গরমে খিচুড়ি? এক বার খেলে আরেকবার খাওয়া যায় না, তাও আবার তিন দিন ধরে? আপনি খান কি করে? ভালো লাগে?
বোকার মতো একবারে চারটে প্রশ্ন করে বসলো পুষ্প। বৃদ্ধা মহিলা যা বললেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা পুষ্প। তিনি বললেন, মাগো কোনো কিছুই ভালো লাগে না, ভালো লাগাতে হয়। এক স্বামী যদি সারা জীবন ভালো লাগে তবে এক খিচুড়ি ৩ দিন কেনো নয়?
আসলে আমরা ভালো লাগাতে চাইনা এজন্য ভালো লাগে না। কিন্ত ভালো লাগা মন্দ লাগাটা নিজের উপরে নির্ভর করে। তুমি ভালো লাগাও অবশ্যই ভালো লাগবে।
প্রথমেই কোনো কিছু ভালো লাগে না। আমি যখন প্রথম লাল শাড়ী পরে এই বাড়িতে এসেছিলাম তখন আমার ভালো লাগতো না। অচেনা জায়গা, অচেনা মুখ, অচেনা ব্যবহার, স্বামীটাও অচেনা।
কিন্ত যখন ভাবলাম আমার বাবা-মা আমাকে এখানে নিজ ইচ্ছায় পাঠিয়েছেন তখন আমাকে এখানেই থাকতে হবে। শুরু করলাম নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, প্রতিদিন রান্না করা, তোমার চাচার কাপড় কাচা, ঔষধ খাওয়ানো, সব রকম খেয়াল রাখা ইত্যাদি। একে একে দুই ছেলের মা হলাম। তারপর এইযে, এতোটা বছর কেটে গেলো।
- বোর্ড চ্যালেঞ্জ করার নিয়ম ২০২৪ | খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন
- নম্বর সহ পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার নিয়ম | সবার আগে ফলাফল দেখুন
- ডিজিটাল স্মার্টবোর্ড দিয়ে শিক্ষার নতুন দিগন্তের সূচনা!
- আধুনিক খাটের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ
- কেন গিগাবিট রাউটার ছাড়া অন্য রাউটার কেনা উচিত নয়?
এখন অনেক বেশিই ভালো লাগে এই বাড়ির প্রতিটি কোণা কানাচি যেখানে বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা। তারপর আবার আমার মতই লাল শাড়ী পরে নতুন কারো এই বাড়িতে আসা।
আবার তাদের আমাকে রেখে চলে যাওয়া সবটাই এখন ভালো লাগিয়ে নিয়েছি মা। প্রতিদিনের অভ্যাসই মানুষের জীবনে ভালো লাগা আর ভালবাসায় পরিণত হয়।
ভালোবাসা গল্পটির শিক্ষা
- ১/ আসলেই অভ্যাস মানুষের দাস। আমরা যেটা অভ্যাস করে নিই সেটাই আমাদের ভালো লাগতে শুরু করে।
- ২/ জীবনে সব অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারাটাই জীবনের স্বার্থকতা।
- ৩/ প্রতিদিনের অভ্যাসগুলোই প্রকৃত ভালবাসা।
- ৪/ সন্তানেরা ইসলামিক নিয়মে বাবা মায়ের যত্ন নেওয়া উচিত।
সকাল ৮:০০
১৮/০৪/২০১৯ ইং
ঝিনাইদহ।
প্রতিদিন এরকম শিক্ষামূলক ছোটগল্প পড়তে ট্রিক ব্লগ বিডির Story ক্যাটাগরি ভিজিট করুন।