জন্ম নিবন্ধনে ভুল থাকলে তা আমাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে। কিন্তু ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম খুবই ঝামেলার। তাই আজকে অনলাইনে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন করতে হয় সেই বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করব।
অনেক সময় আমাদের জন্ম নিবন্ধন তথ্যে বিভিন্ন কারণে ভুল হয়ে থাকে। এটি আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সমস্যায় ফেলে। তবে আমরা চাইলে খুব সহজেই ঘরে বসে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করতে পারি। কথা না বাড়িয়ে চলুন সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি জেনে নেওয়া যাক।
জন্ম নিবন্ধন তথ্য চেক করে নিন
সবার প্রথমে আপনাকে আগে চেক করে নিতে হবে যে আপনার জন্ম নিবন্ধনে কোন তথ্য ভুল আছে কিনা। যেই তথ্যগুলো ভুল থাকবে সেগুলোই আপনাকে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
এরজন্য আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন চেক বা যাচাই করে নিন। আপনার ভুল হওয়া তথ্য গুলো খাতায় লিখে রাখুন। এগুলোকে সঠিক করার জন্য আবেদন করতে হবে। কোন প্রকার ভুল করা যাবেনা। কারণ আপনি সর্বোচ্চ ৪ বার জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই ধাপে আপনি যদি কোন তথ্য না পান অর্থাৎ আপনার জন্ম নিবন্ধন তথ্য খুঁজে না পেলে বুঝবেন আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা নেই। তাই আপনি জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার জন্য আবেদন করে নিন।
আর যাদের তথ্য পাওয়া গেছে ও সেগুলো ভুল তারা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন। এ পক্রিয়ায় জন্ম নিবন্ধন ইংরেজিও করা যাবে।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন প্রক্রিয়া
এবার নিচের দেওয়া ধাপ অনুসরণ করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। লেখা পড়ে বুঝতে সমস্যা হলে নিচে দেওয়া ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
ধাপ-১ঃ জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন
সর্বপ্রথম আপনাকে জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ওয়েবসাইটের জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন করার সেকশন https://bdris.gov.bd/br/correction এ যেতে হবে। সেখানে একটি পেজ ওপেন হবে। কিছু নির্দেশনা দেওয়া থাকবে সেটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন।
ধাপ ২ঃ নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন বের করুন
একই পেজে নিচের দিকে গেলে আপনি ২ টি খালি বক্স দেখতে পাবেন। এখানে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন।
জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি আপনার বর্তমান জন্ম নিবন্ধন সনদের মধ্যে পেয়ে যাবেন। একইসাথে জন্য তারিখটিও সেখানে পাবেন। এই অনুযায়ী খালি ঘর দুটিকে পূরণ করতে হবে।
অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করার পরে নিচের দিকে নির্বাচন করুন লেখায় ক্লিক করুন। এরপর কনফার্ম বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৩ঃ নির্বাচন কার্যালয়ের ঠিকানা
এ পর্যায়ে আপনার নির্বাচন কার্যালয়ের ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে। এজন্য আপনার দেশ, বিভাগ, জেলা, সিটি কর্পোরেশন/ক্যান্টনমেন্ট/উপজেলা, পোরসভা/ইউনিয়ন সিলেক্ট করুন।
এরপর “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৪ঃ সংশোধিত তথ্য নির্বাচন
এই ধাপের উপরের অংশে লাল ফন্টে “সর্বোচ্চ ৪ বার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা যাবে” লেখায় একটি ওয়ার্নিং দেখতে পাবেন। নিচের দিকে আপনার যে যে তথ্যগুলো সংশোধন করতে হবে সেগুলো সিলেক্ট করে সঠিক তথ্যগুলো দিয়ে দিন।
এর জন্য বিষয় এর ঘরে ক্লিক করে যেই বিষয়টি সংশোধন করবেন সেটি সিলেক্ট করুন। চাহিত সংশোধিত তথ্য এর ঘরে সঠিক তথ্যটি দিন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি ইংরেজি নামে ভুল থাকে তাহলে আপনি বিষয়ের ঘরে “নাম ইংরেজিতে” সিলেক্ট করবেন। এরপর চাহিত সংশোধিত তথ্য এর ঘরে আপনার ইংরেজি নামটি লিখে দিবেন। যেমনঃ Nasir Uddin ।
আর সংশোধনের কারণ এর জায়গায় ‘ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল‘ সিলেক্ট করুন।
আপনার জন্ম নিবন্ধনে যদি একাধিক বিষয়ে ভুল থাকে তাহলে আপনি নিচে থাকা “+আরো তথ্য সংযোজন করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
একইভাবে বিষয় এর ঘরে ক্লিক করে বিষয় সিলেক্ট করুন। এরপর চাহিত সংশোধিত তথ্য এর ঘরে সঠিক তথ্যটি দিন। এরপরের ঘরে “ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল” সিলেক্ট করুন।
ধাপ-৫ঃ জন্মস্থানের ঠিকানা বাংলা ও ইংরেজিতে লিখুন
এ পর্যায়ে আপনার জন্ম স্থানের ঠিকানা দিতে হবে। ঠিকানা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় দিতে হবে। সতর্কতার সাথে আপনার ঠিকানা উল্লেখ করুন।
মনে রাখবেন, তারকা চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তাই একটু সতর্কতার সাথে প্রয়োজনীয় সকল ঘর পূরণ করুন। এরপর স্ক্রল করে নিচের দিকে যান। আর নিচের ধাপ অনুসরণ করুন।
ধাপ-৬ঃ আবেদনকারীর তথ্য
এ পর্যায়ে আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। প্রথম ঘরে দেখবেন আবেদনাধীন ব্যক্তির সহিত সম্পর্ক জানতে চাইবে। যেহেতু আপনার আবেদন আপনি নিজেই করছেন তাই “নিজ” সিলেক্ট করে দিন।
আপনার বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে আবেদনকারীর নাম অটোমেটিকভাবে পূরণ হয়ে যাবে। এরপর আপনার মোবাইল নম্বর দিন। ইমেইল এড্রেস চাইলে দিতে পারেন। না দিলেও সমস্যা নেই।
ধাপ-৭ঃ সংযুক্তি যুক্ত করুন
যে যে তথ্য সংশোধন করতে চাচ্ছেন সেই সেই তথ্যের প্রমাণস্বরূপ কিছু ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে। যেমন আপনার NID card এ আপনার ইংরেজি নাম সঠিক আছে কিন্তু জন্ম নিবন্ধনে সেটি ভুল। তাহলে আপনার NID Card এর এক কপি ছবি যুক্ত করে দিন।
এভাবে যতগুলো তথ্য সংশোধন করবেন প্রত্যেকটির জন্য প্রমাণস্বরূপ ডকুমেন্ট সংযুক্ত করুন। ডকুমেন্টের সাইজ ৯৭৬ kb এর মধ্যে হতে হবে। আপনার ছবির সাইজ বেশি হয়ে গেলে এখানে ক্লিক করে সাইজ কমিয়ে নিন।
ধাপ-৮ঃ পেমেন্ট এর মাধ্যম
এই ধাপে “ফি আদায়” অপশনটি সিলেক্ট করে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৯ঃ আবেদন প্রিন্ট করুন
৮ম ধাপে সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনার আবেদন নম্বর ও আবেদন পত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ দেখতে পাবেন। নম্বরটি কোথাও সেভ করে রাখুন। ‘আবেদন প্রিন্ট করুন‘ বাটনে ক্লিক করে সেটি প্রিন্ট করে নিন।
প্রিন্ট করার পর pdf আকারে ফাইল ডাউনলোড হবে। কোন কম্পিউটার দোকান থেকে ফাইলটি প্রিন্ট করে বের করে নিন।
ধাপ-১০ঃ আবেদন পত্রের কপিটি জমা দিন
আবেদনের প্রিন্ট কপি ও আপনার সংযুক্ত করা ডকুমেন্টগুলোর ফটোকপি নিয়ে নির্দিষ্ট তারিখের আগে ইউনিয়ন/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ডকুমেন্টের সাথে নির্দিষ্ট ফিও জমা দিতে হবে।
আপনার কাজ শেষ। এবার কর্তীপক্ষ আপনার আবেদনটি যাচাই বাছাই করে আপনার জন্ম নিবন্ধন তথ্যগুলো সংশোধন করে দিবে।
আবেদন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ ভিডিও
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? এটা একটি কমন প্রশ্ন। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি এর ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে সম্ভাব্য ফি ১০০ টাকা।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন যাচাই
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন তো করা শেষ। এবার যাচাই করার পালা যে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা। অর্থাৎ আপনার তথ্যগুলো সংশোধন হয়েছে কিনা।
জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম নিয়ে আমাদের একটি আলাদা আর্টিকেল আছে। সেই আর্টিকেল অনুযায়ী আপনার জন্ম নিবন্ধনের বর্তমান অবস্থা যাচাই করে নিন। নতুন তথ্যগুলো আপডেট হয়েছে কিনা সেখান থেকে জানতে পারবেন।
শেষ কথা
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম নিয়ে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। আর কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আমরা রিপ্লাই দিব ইনশাআল্লাহ।
আমি মোবাইলে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করেছি কিন্তু ফাইলটি প্রিন্ট করা সম্ভব হয়নি এবং পিডিএফ কোন ফাইলও সেভ করা যায়নি। কিন্তু আবেদন নম্বর পেয়েছি। এখন কি করতে পারি দয়া করে জানালে উপকৃত হব ইনশাআল্লাহ
আপনার ইউনিয়ন বা পৌরসভায় যোগাযোগ করুন।
নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ১৮ বছরের কম কিংবা তার বয়স যদি ১১ বছর হয় সেক্ষেত্রে কি কি কাগজাদি জমা দিতে হবে?
সেক্ষেত্রে টিকা কার্ড জমা দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনার ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।