শেয়ার হোস্টিংয়ে Physical Memory ও CPU Resource Limit সমস্যা: কারণ ও কার্যকর সমাধান

শেয়ার হোস্টিং মূলত কম খরচে ওয়েবসাইট চালানোর একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি, যেখানে একাধিক ওয়েবসাইট একই সার্ভার ব্যবহার করে। কিন্তু এই হোস্টিংয়ে নির্দিষ্ট CPUPhysical Memory বরাদ্দ থাকে। যখন আপনার ওয়েবসাইট অতিরিক্ত রিসোর্স ব্যবহার করে, তখন Physical Memory এবং CPU Resource Limit সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যার কারণে সাইটের গতি কমে যায়, ব্যবহারকারীরা সাইট লোড না হওয়ার কারণে ফিরে যান এবং সাইট Error 503 বা অন্য সমস্যার সম্মুখীন হয়।

এই সমস্যার কারণগুলো বুঝে সঠিক সমাধান গ্রহণ করলে আপনি সাইটের পারফরম্যান্স অনেক উন্নত করতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন এই সমস্যা হয় এবং কীভাবে সহজে সমাধান করা যায়।

Table of Contents

১। Physical Memory ও CPU Resource Limit Was Reached for Your Site কেন হয়?

শেয়ার হোস্টিংয়ের রিসোর্স লিমিট সমস্যা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। চলুন, সচরাচর হয় এমন কিছু কারণ জেনে নেওয়া যাক।

High CPU usage

অপ্টিমাইজ না করা প্লাগিন ও থিম

ওয়েবসাইটে বিভিন্ন থিম এবং প্লাগিন ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় এগুলো অপ্টিমাইজ করা থাকে না, যার ফলে এটি ব্যাকগ্রাউন্ডে অপ্রয়োজনীয় প্রসেস চালাতে থাকে। যেমন, একটি সাধারণ ইমেজ অপ্টিমাইজেশন প্লাগিন যদি ভুলভাবে কনফিগার করা হয়, তাহলে এটি অবিরত রিসোর্স খেয়ে যাবে। একইভাবে ভারী থিমগুলোর CSS, JavaScript ফাইল সঠিকভাবে লোড না হলে CPU এবং Memory লিমিট দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তাই সাইটে ভালো থিম ও প্লাগিন ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে এগুলার রিভিউ দেখে নিতে পারেন।

বেশি ভিজিটর

আপনার ওয়েবসাইট যদি আকস্মিকভাবে অনেক ভিজিটর পায় বা ভাইরাল হয়, তখন সাইটের সার্ভার লোড বেড়ে যায়। শেয়ার হোস্টিংয়ের রিসোর্স সীমিত, তাই বেশি ট্রাফিক আসলে CPU এবং মেমোরি দ্রুত পূরণ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বেশি ট্রাফিকের সময় সাইট লোড করতে সমস্যা হয় এবং ভিজিটররা সাইট থেকে বের হয়ে যায়।

আউটডেটেড PHP ভার্সন

অনেক ওয়েবসাইট এখনো পুরনো PHP ভার্সন ব্যবহার করে, যা আধুনিক কোডিং স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর ফলে ওয়েবসাইটের প্রসেসিং টাইম বেড়ে যায় এবং CPU অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়। নতুন PHP ভার্সন যেমন ৭.৪ বা ৮.০ বা তার বেশি ভার্সনের PHP দ্রুত লোড হয় এবং রিসোর্স অপ্টিমাইজ করতে সহায়তা করে।

বড় সাইজের ইমেজ ও ফাইল

ওয়েবসাইটে যদি বড় সাইজের ইমেজ এবং মিডিয়া ফাইল থাকে, তাহলে এগুলো লোড হতে অনেক সময় নেয়। একইসাথে, এসব ফাইল লোড করতে সার্ভারের রিসোর্স ব্যবহার করতে হয়। ইমেজ যদি অপ্টিমাইজ করা না হয়, তাহলে আপনার সাইট লোড টাইম বেড়ে যাবে এবং রিসোর্স লিমিট অতিক্রম করবে।

ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস ও স্ক্রিপ্ট

ওয়ার্ডপ্রেস বা অন্যান্য সিএমএস সাইটে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস যেমন ক্রনজব (Cron Job), ব্যাকআপ সিস্টেম বা অটোমেটিক ইমেইল প্রক্রিয়া চালু থাকে। যদি এগুলো ঠিকভাবে কনফিগার করা না হয়, তাহলে এগুলো অনাকাঙ্খিতভাবে রিসোর্স ব্যবহার করতে থাকে এবং CPU ও মেমোরি লোড বেড়ে যায়।

২। এসব Resource High Usage হলে কি সমস্যা দেখা দেয়?

শেয়ার হোস্টিংয়ে রিসোর্স লিমিট অতিক্রম করলে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা সাইটের কার্যকারিতা এবং ভিজিটরের অভিজ্ঞতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

High CPU usage in cPanel
High CPU usage in cPanel

সাইট ডাউন হয়ে যাওয়া

যখন ওয়েবসাইট CPU ও Physical Memory লিমিট শেষ করে ফেলে, তখন 503 Service Unavailable এরর দেখা যায়। এটি ওয়েবসাইটের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কারণ সাইটে ঢোকা সম্ভব হয় না। এমনকি অল্প সময়ের জন্য হলেও, এটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেতিবাচক ইমপ্রেশন তৈরি করে।

সাইটের লোড টাইম বেড়ে যাওয়া

রিসোর্সের লিমিট বাড়লে সাইট লোড হতে অনেক বেশি সময় নেয়। ব্যবহারকারীরা বিরক্ত হয়, ফলে সাইট থেকে তারা বেরিয়ে যায়। এটি সাইটের Bounce Rate বাড়িয়ে দেয়, যা SEO পারফরম্যান্সের উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ব্যাকএন্ডে ঢুকতে সমস্যা

ওয়েবসাইটের ব্যাকএন্ডে যেমন wp-admin এ ঢোকার সময়ও সমস্যা হয়। সাইট যদি লোড নিতে না পারে, তাহলে অ্যাডমিন প্যানেল পুরোপুরি লোড হয় না। এটি আপনার কাজের গতি কমিয়ে দেয় এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজ করতে অসুবিধা হয়।

SEO র‍্যাংকিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়

গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন দ্রুত লোডিং ওয়েবসাইটকে র‍্যাংকিংয়ে উপরের দিকে রাখে। যদি আপনার সাইটের লোড টাইম বেশি হয় বা সাইট বারবার ডাউন থাকে, তাহলে গুগল আপনাকে নিচের দিকে নামিয়ে দেবে।

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা খারাপ হয়

একটি ওয়েবসাইটের ধীর গতি বা ক্রমাগত ডাউন হওয়ার ঘটনা ব্যবহারকারীদের বিরক্ত করে। ফলে তারা ভবিষ্যতে সেই সাইটে ফিরে আসতে চান না এবং আপনার ট্রাফিক কমতে শুরু করে।

৩। কেন এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি?

এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি কারণ এটি ওয়েবসাইটের সার্বিক কার্যকারিতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। একটি ধীর গতির বা ডাউন থাকা সাইট ব্যবসার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

  • SEO র‍্যাংকিং: দ্রুত লোডিং ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র‍্যাংক পায়।
  • ভিজিটর ধরে রাখা: ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত হলে তারা বারবার সাইটে ফিরে আসবে।
  • সাইট পারফরম্যান্স: সঠিক রিসোর্স ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাইটের গতি এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
  • ব্যবসায়িক সাফল্য: সাইট সবসময় অনলাইন থাকলে আপনি ট্রাফিক এবং লিড ধরে রাখতে পারবেন।

৪। কিভাবে Shared Hosting এর CPU, Physical Memory এর ব্যবহার কমানো যায়?

অনেকেই ভাবে শেয়ার হোস্টিং ব্যবহার করলেই কম Resource limit এর কারণে এসব সমস্যা হয়ে থাকে। এটি আংশিক সত্য হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল ধারণা। সঠিকভাবে অপটিমাইজ করলে মেক্সিমাম ক্ষেত্রেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। চলুন কি করতে হবে জেনে নেই।

ভালো কোম্পানির ও হার্ডওয়্যারের হোস্টিং ব্যবহার করুন

ভালো একটি কোম্পানির হোস্টিং কিনুন। কেনার আগে জেনে নিন তারা লেটেস্ট টেকনোলজির হার্ডওয়্যার যেমন প্রসেসর, র‍্যাম ইত্যাদি ব্যবহার করছে কিনা। ভালো হার্ডওয়্যারের হোস্টিং নিলে High CPU এবং Memory ইউজ সমস্যার অনেকাংশে সমাধান হয়ে যায়। বাংলাদেশের সেরকমই ২ টি ভালো হোস্টিং কোম্পানি হলো Cyber developer BD এবং ExonHost। এদের থেকে সার্ভিস নিলে আশা করি ভালো সার্ভিস পাবেন।

তবে আপনি ইতিমধ্যেই হোস্টিং কিনে থাকলে নিচের স্টেপগুলো অনুসরণ করুন। যেখান থেকেই হোস্টিং নেন না কেন নিচের ধাপগুলো অবশ্যই পালন করুন।

PHP Version আপগ্রেড করুন

ওয়েবসাইটের PHP ভার্সন আপগ্রেড করলে রিসোর্স ব্যবহার কমে এবং পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পায়। cPanel এর MultiPHP Manager বা PHP Selector ব্যবহার করে সহজেই সর্বশেষ PHP ভার্সন (৭.৪ বা ৮.০ বা তার বেশি) নির্বাচন করতে পারেন।

সর্বশেষ PHP ভার্সন ওয়েবসাইটকে দ্রুত প্রসেস করতে সাহায্য করে এবং রিসোর্সের অপচয় কমায়।

Zend OPcache Enable করুন

Zend OPcache ওয়েবসাইটের কোডকে ক্যাশ করে রাখে, ফলে সার্ভার বারবার কোড কম্পাইল না করে তা সরাসরি এক্সিকিউট করতে পারে। এটি রিসোর্স ব্যবহার কমিয়ে দ্রুত পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে।

cPanel > PHP Selector > Extensions এ গিয়ে OPcache চালু করুন। ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের জন্য OPcache Manager প্লাগিন ব্যবহার করতে পারেন। যদি মেমোরি ১০০% ব্যবহার হয়ে যায়, হোস্টিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে opcache মেমোরি লিমিট বাড়ান। সাধারণত এই লিমিট 128MB থাকে। হোস্টিং কোম্পানিকে চালালে তারা ফ্রিতেই এটি বাড়িয়ে দিবে।

আপনার সাইটের OPcache মেমোরি লিমিট, cache hit, cahe miss ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একটি সহজ নিয়ম ফলো করুন। অনেক সময় প্লাগিনে সকল তথ্য দেখায় না। এক্ষেত্রে আপনার সাইটের public_html এ গিয়ে opcache.php নামে একটি ফাইল তৈরি করুন। এরপর সেই ফাইলে এই লিংকে দেওয়া কোডগুলো paste করে সেভ করুন। এরপর https://yourdomain.com/opcache.php তে ভিজিট করলেই সব তথ্য পেয়ে যাবেন। এখান থেকেই opcache ক্লিয়ার করা যাবে। ও আরেকটা চমৎকার বিষয় হলো এই কোড ব্যবহার করলে আপনার OPcache এর জন্য সাইটে আলাদা কোন প্লাগিন ব্যবহার করা লাগবেনা।

Object Cache এর জন্য Memcached বা Redis চালু করুন

Object Cache ডেটাবেজের তথ্য ক্যাশে রেখে দ্রুত লোড নিশ্চিত করে। Memcached বা Redis এর মাধ্যমে আপনি এই সুবিধা নিতে পারেন। cPanel > PHP Selector > Extensions এ গিয়ে memcached বা redis চালু করুন। ওয়ার্ডপ্রেসে LiteSpeed Cache, W3 Total Cache অথবা Redis Object Cache প্লাগিন ব্যবহার করে সহজেই Object Cache চালু করতে পারেন।

Cache প্লাগিন ব্যবহার করুন

ওয়ার্ডপ্রেসে LiteSpeed Cache, WP Rocket, বা W3 Total Cache এর মতো ক্যাশিং প্লাগিন ব্যবহার করলে সাইটের লোড টাইম কমে যায় এবং সার্ভারের উপর চাপ কমে।

CDN ব্যবহার করুন

CDN (Content Delivery Network) ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সার্ভার থেকে সরবরাহ করা হয়। এটি ওয়েবসাইটের লোড টাইম কমায় এবং রিসোর্স ব্যবহারের চাপ কমায়। Cloudflare CDN একটি ফ্রি সমাধান যা সহজে ইন্টিগ্রেট করা যায়।

৫। শেষ কথা

শেয়ার হোস্টিংয়ের Physical MemoryCPU Resource সমস্যা সমাধান করার মাধ্যমে আপনি ওয়েবসাইটের গতি বাড়াতে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে পারবেন। উপরে বর্ণিত সমাধানগুলো ধাপে ধাপে প্রয়োগ করুন। সঠিক অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে আপনার সাইট সবসময় অনলাইন ও দ্রুতগতিতে চলবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top