বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতংকে আছেন। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের যেসব লক্ষমান দেখা যায় তা না থাকা সত্বেও অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। আজকে আমরা ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে কিছু বিষয় জানার চেষ্টা করব। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, এর প্রতিকার, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা, ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা ইত্যাদি।
আমি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বাতায়নের সাথে কথা বলেছিলাম। আমাকে ডাক্তার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলোই আপনাদের সাথে আজকে শেয়ার করবো। কিছু স্বনামধন্য অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন আর্টিকেল থেকে পাওয়া তথ্য থেকেও কিছু শেয়ার করার চেষ্টা করব।
বড় ও শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ
ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যা দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে লক্ষণ প্রকাশ না করেও ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। যেটা আমরা ২০১৯ সালে দেখতে পাচ্ছি। ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলো হলোঃ
- ১০০-১০৩ ডিগ্রি জ্বর (জ্বর কম বেশি হতে পারে)
- জ্বর কমে গিয়ে আবার জ্বর আসা
- অত্যধিক মাথা ব্যাথা
- বমি হওয়া
- শরীর অত্যধিক দুর্বল হয়ে পড়ে
- মাংপেশিতে ব্যাথা
- চোঁখের ভিতরে ব্যাথা
- রোগী কিছু খেতে না পারা বা অরুচি
- ওজন কমে যাওয়া
- চামড়া বা ত্বকে লালচে দাগ দেখা দেওয়া
- পেটে ব্যাথা
- শরীরে রক্তপাত হওয়া ইত্যাদি।
উপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। এজন্য কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষার দরকার হয়। লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তা না হলে বড় ধরণ বিপদ ঘটে যেতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে এটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে ৭-১৪ দিন থাকতে পারে বলে স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে জানানো হয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করার জন্য আগে থেকেই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তাহলেই আমরা ডেঙ্গু জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাব। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করার জন্য এডিস মশার বংশবৃদ্ধি আটকাতে হবে।
এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই কোন জায়গায় পানি জমতে দেওয়া যাবেনা। নিচে আরো কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উল্লেখ করা হলোঃ
- বাড়ির আশপাশসহ সকল জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে।
- পুকুর ডোবা, নালা, খাল ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে।
- কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবেনা (টায়ারে, নারিকেলের খোসায়, দইয়ের পেলে দেওয়া পাত্রে, ফুলদানিতে, কৌটা, ফুলের টব ইত্যাদি)। কারণ, জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে।
- ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে।
- প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া বোতলে যাতে পানি না জমে।
- কোথাও পানি রাখলে সেটি যেন ৫-৬ দিনের বেশি জমা না থাকে।
- এডিস মশা যেকোন সময় কামড়াতে পারে। তাই সবসময় পুরা শরীর ঢাকা থাকে এমন জামাকাপড় পরে তগাকতে হবে।
- শরীরে মশা তাড়ানোর লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় মশারি লাগিয়ে ঘুমাতে হবে।
- মশা মারার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
- স্কুলগামী শিশুদের ফুল প্যান্ট পরাতে হবে। তাহলে মশা কামড়ানোর সুযোগ কম থাকবে।
মনে রাখবেন, ডেঙ্গু জ্বরের কোন ভ্যাকসিন বা টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এর উন্নতমানের চিকিৎসা না থাকলেও যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে গেলে জীবন রক্ষা পেতে পারে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে আতংকিত হওয়া যাবেনা। যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ডাক্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা
ডেঙ্গু জ্বর হলে কীভাবে নিশ্চিত হবেন? খুব সহজ। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা।
বর্তমানে সরকার ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষার ফী নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হয়।
ডেঙ্গুর NS1 পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেওয়া যাবে। CBC পরীক্ষার জন্য নেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। এছাড়া IgG ও IgM এই দুটি পরীক্ষা করাতে হবে ৫০০ টাকার মধ্যে।
আরো পড়ুনঃ ঘাড় ব্যাথার কারণ ও ১৪ টি সমাধান
ডেঙ্গু জ্বরের বাহক কোন মশা
ডেঙ্গু জ্বর মূলত এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। কয়েক ধরণের এডিস মশা রয়েছে। একেক ধরণের মশার কামড়ে একেক ধরণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
মনে রাখবেন, সব ধরণের মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়না। শুধুমাত্র এডিস মশা কামড়ালেই এই জ্বর হতে পারে। কারণ, এডিস মশার শরীরেই ডেঙ্গু ভাইরাস থাকে।
Disclaimer
এই ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল পরামর্শ গুলো নিজে করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করু। এখানে দেওয়া টিপসগুলো ব্যবহার করে আপনার কোন প্রকার ক্ষতি হলে তার দায় ট্রিক ব্লগ বিডির নয়। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।