★প্রবন্ধ- অর্থ জ্ঞান অন্বেষণের প্রতিবন্ধকতা
লেখক- মোঃ আরিফ হোসেন
অর্থ এবং জ্ঞানের মাঝে লক্ষনীয়ভাবে লক্ষ করা যায় আজীবন বৈরীভাব। যেখানে অর্থের লোভ আছে, সেখানে জ্ঞানের পরিসীমা খুব কম। লক্ষনীয় বিষয় এই যে, যারা অর্থ নয়, বরং জ্ঞানকে প্রাধান্য দিতো আজকে তারা ইতিহাসের তাজ হয়ে আছে।
‘অর্থ অনর্থের মূল’। অর্থ মানুষের মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে। যত বড় জ্ঞানী হোক, অর্থের মোহ তাকে মূর্খতে পরিনত করে। জগতে এমন কিছু মহান মানব আমাদের এমনই কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যাদেরকে আমরা যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করি।
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)। যিনি দো-জাহানের একজন প্রভাবশালী মানুষ। সাধারণত মানুষ ইহকালেই তার প্রভাব দেখাতে পারে। কিন্তু, তিনি ছিলেন ইহকাল এবং পরকালের প্রভাবশালী মানুষ। পরকালে তিনি কারো জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবেন। যা সাধারণ মানুষরা পারবেনা।
অথচ, তিনি ঘুমাতেন খেজুর পাতার চাটাইয়ে। দিনের পর দিন তার চুলায় আগুন জ্বলত না। অনাহারে উপবাসে দিন কাটাতেন। ছোটকালে বকরি চরাতেন। কিশোর অবস্থায় ব্যবসা করতেন। বড় হয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য কত কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি ভোগ করেছেন।
তিনি চাইলেই ভোগবিলাসে নিজেকে গড়ে তুলতে পারতেন। স্বর্ণ রোপ্য দিয়ে তৈরি করতে পারতেন নিজের বাড়ি। এমনকি, এই দুনিয়াকে দেখিয়ে যেতে পারতেন ধনীর ভিন্নধর্মী সংজ্ঞা।
কিন্তু, নবী মোহাম্মদ (সাঃ)- এর অর্থের প্রতি কোন লোভ ছিলো না। তিনি জ্ঞান বিলানোর কাজে নিজের সব কিছু দিয়ে দেন। তাইতো তিনি মহান ব্যক্তি এবং সর্বোচ্চ সন্মানি ব্যক্তি।
হযরত আবু বকর (রাঃ)। যিনি তার সময়ে ছিলেন আরবের বিখ্যাত ধনীদের একজন। কিন্তু তিনি জ্ঞানের পথে তার সমস্ত অর্থ ব্যায় করেন। কোন একসময় বস্ত্র অভাবে খেজুরের চট পরেছিলেন। তার এই অর্থের প্রতি অনীহাই তাকে বিখ্যাত করে রেখেছে। মুসলমান সবাই শ্রদ্ধাভরে তাকে স্বরণ করে।
যুন নুরাইন বা দুই জ্যোতির অধিকারী হযরত উসমান (রাঃ) কে ‘গনি’ নামেকেও চিনি। গনি শব্দের অর্থ ধনী বা ধনবান। তিনিও জ্ঞান আহরনের জন্য নিজের সবকিছু বিলিন করেন। তারও অর্থের প্রতি মোহ ছিলো না। তাইতো তিনিও বিখ্যাত হতে পেরেছেন।
ইমাম বুখারী (রঃ)। তার সময়ের সবচেয়ে বেশি হাদিস মুখস্তকারী ব্যক্তি তিনি। তিনি কয়েক লক্ষ হাদিস মুখস্থ করেন। জন্মকালে দুচোখ অন্ধ ছিলো৷ একটু বড় হলে দুচোখে আলো আসে। বুখারী নগরের সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারে তার জন্ম।
তিনি চাইলে সাত পুরুষ পায়ের উপর পা তুলে বসে খেতে পারতেন। অথচ, তিনি ছিলেন জ্ঞান পিপাসু। জ্ঞান আহরনের জন্য অর্থের প্রতি বিন্দুমাত্র খেয়াল করেন নাই। তাইতো তিনি বিখ্যাত মনীষীদের মধ্যে অন্যতম।
শাক্য বংশীয় রাজা শুদ্ধোদনের পুত্র সিদ্ধার্থ। যাকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা গৌতম বুদ্ধ বলে জানে। মৃত্যুর রহস্য ভেদ করার জন্য যখন গৌতম বুদ্ধ পথে বের হয়, তখন দেখতে পায় জরাজীর্ণ রোগে শোকে জর্জরিত কিছু লোককে। তখনই গৌতম বুদ্ধের মনে একটা চিন্তা আসলো। তিনি ভাবেন, কি হবে এই অঢেল সম্পদ দিয়ে? একদিন তো মরতেই হবে।
এই ভাবনায় উপলব্ধি করে, জ্ঞান অন্বেষণ কতটা জরুরি। তাইতো তিনি রাজ প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন জ্ঞান আহরনের পথে। অর্থ সম্পদের লোভ তাকে বেঁধে রাখতে পারে নাই। তাইতো তিনি বৌদ্ধদের কাছে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ২৮ তম বুদ্ধ হলেও তিনি তাদের মাঝে সবার সেরা।
১৮১৮ সালে আইনজীবী পিতার পরিবারে জন্ম নেয় কার্ল মার্ক্স। সংসারে অভাব অনটন কিছুই ছিলো না। স্বাচ্ছন্দ্যে হেসে খেলে দিন কাটানো যেতো মার্ক্সের। অথচ, তিনি ভাবতেন জগতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। তাইতো বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও জ্ঞান আহরন ছাড়েন নাই।
কার্ল মার্ক্স চাইলেই বন্ধু ফেডরিক এঙ্গেলসের সহচার্যে অনেক ধনপ্রাপ্ত হতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেন নাই। কারণ, তাকে জ্ঞানের নেশা পেয়ে বসে। অর্থের প্রতি তার ছিলো অনীহা। তাইতো অনেকের কাছে কার্ল মার্ক্স বিখ্যাত হয়ে আছেন।
বস্তুত পক্ষে, দেখা যাচ্ছে যে, যারা অর্থের পিছে না ছুটে জ্ঞানের পিছে ছুটেছে, আজকে তারাই মনুষ্য সমাজের হৃদয় দখল করতে পেরেছে। যুগ যুগ ধরে এই নিয়মটাই চলবে। এবং পৃথিবীর অন্ত্য পর্যন্ত এই নিয়মই বহাল থাকবে। যদি কেউ ভবিষ্যতের জন্য স্বরণীয় হতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই অর্থের মোহ ত্যাগ করে জ্ঞান আহরন করতে হবে।
অর্থ জ্ঞান অন্বেষণের প্রতিবন্ধকতা প্রবন্ধ সম্পর্কে কিছু কথা
প্রবন্ধের নাম অর্থ জ্ঞান অন্বেষণের প্রতিবন্ধকতা। লিখেছেন মোঃ আরিফ হোসেন। এই প্রবন্ধের তথ্যগুলো স্পর্শকাতর। এটি কারো ধর্মকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে লিখা হয়নি।
প্রবন্ধটি কারো ধর্ম বা ভাবাবেগকে আঘাত করলে অথবা কোনো তথ্য ভুল হলে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এরকম কিছু হলে আপনাদের কাছে অনুরোধ, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের জানান। আমরা আমাদের ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করবো।