বিপরীতমুখী ভাবনা
প্রবন্ধ- বিপরীতমুখী ভাবনা
লেখক- মোঃ আরিফ হোসেন
স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র। তিনি ১৬ই এপ্রিল, ১৮৮৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একজন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা ও হলিউড সিনেমার প্রথম থেকে মধ্যকালের বিখ্যাততম শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম এবং পৃথিবী বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকও বটে।
লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়রকে আমরা চার্লি চ্যাপলিন নামেই চিনি। মূকাভিনয়ের সবচেয়ে বড় কমেডিয়ান এই চার্লি চ্যাপলিন। ব্রিটিশ কমিডি মুভিগুলো যখন পর্দায় আমরা দেখি বা চার্লি চ্যাপলিনের অভিনয় দেখি তখন আমরা শত কষ্টে থাকলেও চাপা হাসিতে কষ্টগুলো ভুলিয়ে যাই।
চার্লি চ্যাপলিন তার অভিনয়ের মাঝে সবসময় ফুটিয়ে তুলেন বিপরীতমুখী ভাবনা। যে ভাবনাগুলো নিয়ে মানুষ মোটেও কখনো ভাবার অবকাশ যাপন করেনি। আমরা সবাই সোজা- সরল পথে চলতে চাই। কেউ চাইনা নতুন পথের আবিষ্কার করতে। কিন্তু ইতিহাসে যারা নতুন পথ আবিষ্কার করেছে আমরা সকলেই তাদের পথ- প্রদর্শনকারী হিসাবে জানি।
কলম্বাসের নামটাও এর সাথে জুড়ে দেওয়া যায়। কিংবা ভাস্কো ডা গামার নামটাও আমরা আজও ভুলিনি।
আমরা বাস্তব জীবনে চলার পথটাকে সরল করি। অথচ, বিপরীত পথ নিয়ে কেউ ভাবি না। “চোর খায় কলা, চোরের মায়ের বড় গলা।” কিন্তু সবসময় আমরা এমনটাই ভাবলেও হিতে বিপরীতও হয়। চোর খায় কলা, চোরের বাপের বড় গলা। তখন কেউ ভাবি না চোরের বাপের বড় গলা কেনো হলো? এখানে তো মায়ের গলা হওয়ার কথা।
আরেক বিখ্যাত কমেডিয়ান রোয়ান অ্যাটকিনসন। মি. বিন নামক কমিডি নাটকে অভিনয়ের ফলে আমরা রোয়ান অ্যাটকিনসনকে মি. বিন নামে চিনি। তিনিও তার বিপরীতমুখী ভাবনা দিয়ে সাজিয়েছে তার নাটকের ১৪ টি পর্ব।
আমরা আপাত দৃষ্টিতে দেখি সব মানুষের আচার আচরণ একই স্বভাবের। কেউ আত্মীয়কে দাওয়াত দিয়ে এনে নিজে খেয়ে আত্মীয়কে উপোস রাখবে না। অথচ, মি. বিনে তা ভিন্ন। আত্মীয়কে উপোস না রাখলেও এমন কিছু বিপরীতমুখী কৌশল প্রয়োগ করা হয় যাতে করে আত্মীয়রা নিজেই ধাঁধায় পড়ে।
আমাদের ভাবনাগুলো সব সময় সোজা সরল হয়। কোন শিল্পীকে যদি ভিনগ্রহের এলিয়েন আঁকতে বা কল্পলোকের ভুতপ্রেতের ছবি আঁকতে বলা হয়, তাহলে সে কি আঁকবে? সে আঁকবে মানুষ বা এ জগতে তার দেখা প্রাণীগুলোর মত দেখতে কিছু একটা। যার হয়তো তিনটা চোখ থাকবে অথবা বড় বড় মুলোর মত দাঁত থাকবে। বা এরকম কিছু।
ওই ভিনগ্রহের এলিয়েন বা কল্পলোকের ভুতপ্রেত দেখতে কি আদৌ এ গ্রহের কোন প্রাণীর মত? আসলে তা নয়। তবে আমাদের বুদ্ধি বা চিন্তা চেতনা একটা ধাঁধা বা গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ। আমরা নিজেরা বিপরীতে হাঁটি না। আর আমাদের চেতনাগুলোকেও বিপরীতমুখী করি না। কামিনী রায়ের বিখ্যাত কবিতা, ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র মত আমাদের জীবন চলা। যখনই কেউ বিপরীত চিন্তা করে তখনই সংশয়, ভয়, হতাশা গ্রাস করে।
আমরা চোর ধরলে অর্ধচন্দ্র দান করি। অথচ, চুরির পিছনের কারণগুলো খুঁজে দেখার অবকাশ করি না। হতেও তো পারে একজন চোর তার তিন বছরের বাচ্চার কান্না সহ্য করতে না পেরে চুরি করতে এসেছে। কিন্তু আমরা চোর ধরে কাজী নজরুল ইসলামের ‘লিচুচোর‘ ছড়ার মালির মতো আচরণ করি।
অতীত ইতিহাস স্বাক্ষী দেয়, যারা ইতিপূর্বে বিপরীত ভাবনা উপলব্ধি করতে পেরেছে আজকে তারা জাতির পথ আবিষ্কারক। রাজ-রাজারা যুদ্ধের কৌশল প্রয়োগে সবসময়ই বিপরীত ভাবনাকে অবলম্বন করতেন। যার বিপরীত ভাবনা যত বেশি প্রখর ছিলো, সে রাজা তত বেশি দিগ্বিজয়ী ছিলো। যস-খ্যাতি তার বেশি ছিলো।
পৃথিবীকে চিনতে হলে বিপরীতমুখী হতে হবে। তাহলে পৃথিবীর সবাই চিনবে পথ প্রদর্শনকারী হিসাবে।
প্রতিদিন ট্রিক ব্লগ বিডির সাথে থাকুন। আর আমাদের উৎসাহিত করুুুন।
ছবিঃ কর্পোরেট নিউজ