মা (বাংলা প্রবন্ধ)- মোঃ আরিফ হোসেন

প্রবন্ধ- মা
লেখক- মোঃ আরিফ হোসেন

কত করি উৎপাত
আবদার দিন রাত,
সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
মা- (কাজী নজরুল ইসলাম)

আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ)-এর পরেই যিনি জগতের সবচেয়ে সন্মানী ব্যক্তি তিনি হলেন মা। মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “মা দিবস” হিসাবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।

মা ও তার শিশু (প্রথম আলো)
মা ও তার শিশু (প্রথম আলো)

অনেকে একান্তভাবে মনে করে মা’কে ভালবাসতে আহামরি রেওয়াজ করার দরকার হয় না। মা হচ্ছে সন্তানের সাথে নাভীর বন্ধন। ভালোবাসার জন্ম হয় নাভী থেকে। আলাদাভাবে দিনক্ষণ লাগে না।

তবে ০৮ মে মা দিবসের প্রতীকী মাত্র। পৃথিবীর অধিকাংশ ধর্মেই মা’কে সর্বোচ্চ সন্মান দেওয়া হয়েছে।
ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত (স্বর্গ)। আবার, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মায়ের সেবা তিনবার করতে এবং বাবার সেবা একবার করতে।

তেমনি, সনাতন ধর্মে মনুসংহিতায় উল্লেখ আছে:- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যের গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যের গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”

স্রষ্টা প্রদত্ত সবচেয়ে বড় নিয়ামত (দান) আমাদের মা। মা না থাকলে বড় বড় মুনি, ঋষি কিংবা মনীষীর জন্ম হতো না। অনেক বড় বড় মনিষী মা’কে নিয়ে অনেক গান, কবিতা, ছড়া, গল্প বা উপন্যাস লিখেছেন। অনেকে বলে গেছেন বিখ্যাত সব উক্তি। হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন:- মা এমন একটি ব্যাংক যেখানে আমরা দুঃখ কষ্ট অনায়াসে জমা করতে পারি। বিনিময়ে নেই সুদসহ ভালোবাসা।

আব্রাহাম লিংকন বলেছেন:- যার মা আছে, সে গরীব হতে পারে না। আসলে তাই। মা হচ্ছে সাত রাজার ধন।
দিগ্বীজয়ী মহাবীর নেপোলিয়ন বলেছেন:- তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো।

অবাক করার বিষয় হলো, মা হচ্ছে আমাদের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষক। একজন মা পারে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে, যা একজন দক্ষ শিক্ষক দ্বারাও অসম্ভব।

তবে কদাচিৎ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সামাজিক কুপ্রভাবের বিস্তারে সন্তান অশিক্ষিতের মত আচরণ করে। মা’কে কোন না কোন ছুতো ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তবুও মা সেই সন্তানকে ভালোবাসতে কমতি করে না।

এক্ষেত্রে হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন:- “মায়ের অভিশাপ সন্তানের গায়ে লাগে না। গায়ে তো লাগে দোয়া। হাঁসের গায়ে যেমন পানি লাগে না তেমনি মায়ের অভিশাপ সন্তানের গায়ে লাগে না।”

মা! শব্দটা একবার নয়, দুবার নয়, বরং হাজার বার, লক্ষ বার উচ্চারণ করলেও এর মত মধুময় আর কিছু হবে না। মা’কে নিয়ে লিখতে গেলে হয়তো কলমের কালি শেষ হবে। নয়তো খাতার পৃষ্ঠা ফুরিয়ে যাবে।

“মুরগী আগে নাকি ডিম আগে”। এমন একটা ধাঁধা সমাজে প্রচলিত আছে। তেমনি, “মা বড় নাকি বউ বড়” এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে। কিছুসংখ্যক কাপুরুষ বউকে মা থেকে বেশি মর্যাদায় তুলে। এবং মাকে পাঠায় বৃদ্ধাশ্রম নামক হৃদয়হীন জেলখানায়। যেখানে থেকে মা অনায়াসে ভাবতে পারে, “ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার। মস্ত ফ্ল্যাটে যায়ন না দেখা এপার ওপার“।

এমন ভাবনায় মায়ের অজান্তে চোখের কোণে আসে পানি। there is no mother but love her child. মা যদি পাগলি হয়, সবকিছু ভুলে গেলেও সন্তানকে কভুও ভুলে না। পৃথিবীর সব মা একই। সন্তান কালা হলেও হীরে জহরতের মত।

মাকে বৃদ্ধাশ্রমে নয় বরং মনের গহীনে রাখা উচিত। যেখান থেকে কেউ জোর করেও বের করতে পারবে না। মায়েরা সন্তানের হাজার হাজার টাকা চায় না। বরং চায় সন্তানের হাসিমুখে মা ডাক শুনতে। মা! ও মা!

আরো গল্প ও প্রবন্ধ পড়ুন….

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top