১০০% ভালো ফ্রিজ চেনার ১০ টি উপায় | ফ্রিজ কেনার আগে জানুন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফ্রিজ একটি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। জীবন যাত্রার মান উন্নত হওয়ার ফলে ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে নামিদামি ব্র‍্যান্ডের ফ্রিজ। কিন্তু ফ্রিজ কিনে আপনি ঠকছেন না তো? ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় জানা না থাকলে আপনিও ফ্রিজ কিনে ঠকতে পারেন।

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়

একটি ভালোমানের ফ্রিজ কেনার সময় কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। যেই বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে আপনি ফ্রিজ কিনে ঠকে যাবেন। আর যদি সেগুলো ভালোভাবে খেয়াল করতে পারেন তাহলে ১০০% ভালো মানের একটি ফ্রিজ কিনতে পারবেন।

ভালো মানের ফ্রিজ চেনার উপায়

ভালো মানের ফ্রিজ চেনার কয়েকটি উপায় রয়েছে। আমরা সেরকম ১০ টি উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। ফ্রিজ কিনে ঠকতে না চাইলে এই দশটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল করবেন।

বিভিন্ন ফ্রিজের বর্তমান মূল্য bdstall.com থেকে দেখতে পারেন।

1. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কিনা?

যেই ফ্রিজটি কিনবেন সেটি অবশ্যই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে। তা না হলে প্রত্যেক মাসে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। আর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজগুলো পরিবেশ বান্ধবও হয়ে থাকে।

১. স্টার চিহ্ন আছে কিনা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ চেনার কিছু কৌশল জেনে নেওয়া যাক। এই বিষয়গুলো দেখলেই বুঝবেন ফ্রিজটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজের গায়ে সাধারণত একটি স্টার (*) চিহ্ন থাকে। তাছাড়া ফ্রিজের গায়ে “বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী” কথাটিও লেখা থাকতে পারে।

২. R600a gas কিনা দেখুন

ফ্রিজের গায়ে R600a gas লেখা আছে কিনা দেখুন। এখন পর্যন্ত এই গ্যাসটি হচ্ছে সবচেয়ে উন্নত গ্যাস। কিছু ফ্রিজের গায়ে R134a লেখা থাকে ঐ ফ্রিজগুলো না কেনাই ভালো। কারণ, ঐ গ্যাসটি অনেক পুরাতন গ্যাস, এটি আপনার বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়ে দিবে।

যেই ফ্রিজে R600a গ্যাস ব্যবহার করা হবে সেটি কিনুন। এই গ্যাসটি অত্যন্ত উন্নতমানের গ্যাস। যা ফ্রিজকে দ্রুত ঠান্ডা করে। আর তাই বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম হয়। তাছাড়া এই ধরণের ফ্রিজ পরিবেশ বান্ধব হয়ে থাকে।

2. কপার কনডেন্সারযুক্ত ফ্রিজ

ফ্রিজ কেনার সময় অবশ্যই কপার কনডেন্সারযুক্ত ফ্রিজ কিনুন। সাধারণত বাজারে ২ ধরণের কনডেন্সার যুক্ত ফ্রিজ পাওয়া যায়। সেগুলো হলোঃ

  1. কপার কনডেন্সার যুক্ত।
  2. স্টিল কনডেন্সার যুক্ত।

কপার কনডেন্সার যুক্ত ফ্রিজ খুব কম সময়ে ঠান্ডা হয়। তাই বিদ্যুৎ বিল কম আসে। তাছাড়াও কপার কনডেন্সারে মরিচা ধরেনা ও লিক হয়না। আর এ ধরণের ফ্রিজগুলোর দাম সাধারণত স্টীল কনডেন্সারযুক্ত ফ্রিজের তুলনায় একটু বেশি হয়।

3. ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের কিনা

ফ্রিজে ফুড গ্রেডের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সেটা দেখে নিন। কারণ, ফুড গ্রেডের প্লাস্টিক না হলে ফ্রিজের খাবার কয়েকদিন রাখলে গন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেটি আপনার ফ্রিজ কেনার উদ্দেশ্যকেই বৃথা করে দিবে। তাই কেনার সময় এটি জেনে নিন। ফ্রিজের দরজার ভিতরের অংশে নিচের ছবির মতো চিহ্ন থাকলে বুঝবেন এই ফ্রিজে ফুড গ্রেড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।

Food grade plastic ps6
Food grade plastic PS6

4. উন্নত মানের কপার কম্প্রেসার যুক্ত ফ্রিজ

যেকোনো ফ্রিজের মূল অংশ বা প্রাণকেন্দ্র হলো কমপ্রেসর। একটি ফ্রিজ কতটুকু ভাল বা খারাপ হবে সেটি অনেকাংশেই কম্প্রেসারের উপর নির্ভর করে। কম্প্রেসর সাধারণত দুই রকমের হয়ে থাকে।

  1. কপার কম্প্রেসর।
  2. অ্যালুমিনিয়াম কম্প্রেসর।

ফ্রিজ কেনার সময় অবশ্যই কপার কম্প্রেসরযুক্ত ফ্রিজ কিনুন। কারণ, অ্যালুমিনিয়ামের কয়েল যুক্ত কম্প্রেসর হলে সেটি পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর কপার কয়েলযুক্ত কম্প্রেসর হলে সেটি অনেক টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

5. ফ্রিজের আকার

আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আকারের ফ্রিজ কিনার চেষ্টা করুন। কারণ, একটা কথা মনে রাখবেন, ফ্রিজ যত বড় হবে সেটি তত বেশি বিদ্যুৎ খরচ করবে। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট আকারের ফ্রিজ কিনুন।

আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন। আপনার কি ডিপ ফ্রিজ বেশি প্রয়োজন হবে নাকি নরমাল ফ্রিজ বেশি দরকার হবে? যেটি বেশি প্রয়োজন হবে সেই অংশটি বড় দেখে কিনবেন। কারণ, অপ্রয়োজনে বড় ডিপ অংশের ফ্রিজ কিনলে সেটি বিদ্যুৎ বিল বাড়াবে।

6. স্মার্ট ফ্রিজ

স্মার্ট ফ্রিজ মানেই অত্যাধুনিক ফ্রিজ। এই ফ্রিজগুলোতে বিশেষ ধরণের ইনভার্টার প্রযুক্তি থাকে। এই প্রযুক্তির ফলে আপনি চাইলেই আপনার ফ্রিজের ডিপ অংশটিকে নরমাল ফ্রিজ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আবার দরকার হলে সেটিকে পুনরায় ডিপ ফ্রিজে রূপান্তর করতে পারবেন।

তাছাড়া স্মার্ট ফ্রিজে পাওয়ার সেভিংস মুড থাকে। সেই মুডটি অন করে রাখলে সেটি অনেকাংশে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। যখন ফ্রিজটি কম খোলা হয়, যেমন রাতের বেলায় বা কোথাও বেড়াতে গেলে পাওয়ার সেভিংস মুড অন করে দিতে পারেন। এটি আপনার জন্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী হবে।

7. ফ্রিজটি ফ্রস্ট না-কি নন ফ্রস্ট?

বাজারে ২ ধরণের ফ্রিজ কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো হলোঃ

  • ফ্রস্ট ফ্রিজ
  • নন ফ্রস্ট ফ্রিজ

ফ্রিজ কেনার সময় ফ্রস্ট ফ্রিজ কেনাই ভালো। চলুন জেনে নেই, ফ্রস্ট ও নন ফ্রস্ট ফ্রিজ কি?

১. ফ্রস্ট ফ্রিজ (frost fridge)

এ জাতীয় ফ্রিজে খাবার রাখলে তাতে বরফ জমে যায়। তাই বিদ্যুৎ চলে গেলেও দীর্ঘক্ষণ খাবার টাটকা থাকে। তবে সেই খাবার রান্না করার আগে পানিতে চুবিয়ে বরফ গলানোর দরকার হয় কিংবা বরফ গলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফ্রস্ট ফ্রিজের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল তুলনামূলক কম আসে। ফ্রস্ট ফ্রিজে বরফ জমার কারণে মাসে অন্তত একবার হলেও ফ্রিজটি পরিষ্কার করতে হয়।

২. নন ফ্রস্ট ফ্রিজ (Non frost fridge)

নন ফ্রস্ট ফ্রিজে খাবার রাখলে তাতে বরফ পড়েনা। তাই যেকোনো সময় এই খাবার ফ্রিজ থেকে নামিয়ে রান্না বা ব্যবহার করা যায়। তবে এই ধরণের ফ্রিজে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর খাবার ২-৩ ঘন্টার বেশি ভালো থাকেনা

আর নন ফ্রস্ট ফ্রিজে অটোমেটিক বরফ গলানোর জন্য কিছু বাড়তি যন্ত্রাংশ থাকায় বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে ও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তাই ফ্রিজ কেনার আগে আপনার জন্য যেটি প্রয়োজন সেটি কিনুন।

8. ন্যানো হেলথকেয়ার টেকনোলজির ফ্রিজ

ভালো ফ্রিজ চেনার আরেকটি বড় উপায় হলো এতে ন্যানো হেলথকেয়ার টেকনোলজি থাকে। এটি ফ্রিজের খাবারকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই ফ্রিজ কেনার আগে ফ্রিজের গায়ে দেখে নিন সেটি ন্যানো হেলথকেয়ার টেকনোলজিযুক্ত ফ্রিজ কিনা। অথবা শো রুমের কর্মীদের জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।

9. ফ্রিজের ডিপ অংশ উপরে না নিচে

সাধারণত ফ্রিজের ডিপ অংশ নিচে থাকাই ভালো। কারণ, ডিপ অংশে ভারী জিনিসপত্রই বেশি রাখা হয়। তাই নিচের দিকে ডিপ অংশ থাকলে খাবার রাখা ও বের করা খুবই সহজ হয়।

তাছাড়া ডিপ অংশ বা ভারি অংশ উপরে থাকলে ফ্রিজের ব্যালেন্স ঠিক থাকেনা। তাই ডিপ বা ভারি অংশ নিচে থাকাই ভালো।

10. ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টি ও কিস্তির তথ্য

ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় তো অনেকগুলো জানা হলো। কিন্তু ফ্রিজ কেনার সময় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাহলো ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টি ও কিস্তির তথ্য।

ফ্রিজটিতে আপনি কতদিন ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পাচ্ছেন, কোন কোন যন্ত্রাংশে গ্যারান্টি আর কোন কোন যন্ত্রাংশে কতদিন ওয়ারেন্টি পাবেন সেটা ভালোভাবে জেনে নিন।

কিস্তির সুবিধা থাকলে সেই সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। কতদিনে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, কত টাকা করে কতবারে পরিশোধ করতে হবে, সুদ কত ইত্যাদি জেনে নিবেন।

শেষ কথা

এই পোস্টে আমরা ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। আরো কিছু কিছু বিষয় আমাদের লেখায় বাদ থাকতে পারে। সেটি আপনারা দেখে নিবেন। সবগুলো বৈশিষ্ট্য হয়তো আপনার ফ্রিজে নাও থাকতে পারে। তবে যেগুলো আপনার জন্য বেশি দরকারি বিষয় সেগুলো যাতে অবশ্যই থাকে সে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। আশা করি, কম দামে ভালো মানের ফ্রিজ কিনতে এই লেখাটি আপনাকে সাহায্য করবে।

ধন্যবাদ মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। ভালো লাগলে বা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলো করতে পারেন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top