রসুন একটি বহুল প্রচলিত মসলা। এটি দেখতে অনেকটা পেঁয়াজের মতো। এটি মূলত এক ধরণের সবজি। রসুনের নানাবিধ উপকার রয়েছে। তাই এটি ভেষজ ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি রসুনের কিছু অপকারিতাও আছে। এই নিয়েই আজকের আলোচনা।
কাঁচা রসুনের আলাদা কিছু গুণাগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। সেগুলো ও আপনার সামনে তুলে ধরবো। তার আগে বলে রাখি, এখানে কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। ভুল হলে কমেন্ট করে জানাবেন।
কাঁচা রসুনের উপকারিতা কি?
রান্না করা রসুনের থেকেও কাঁচা রসুনের উপকারিতা অনেক বেশি। তাই রসুনের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে হলে কিছু কাঁচা রসুন খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
একুশে টিভির ওয়েবসাইটে রসুনের গুণাগুণ নিয়ে একটি রিপোর্ট লেখা হয়েছে। এছাড়াও আরো কিছু ওয়েবসাইট থেকে কাঁচা রসুনের উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
- কাঁচা রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
- বিপাকীয় ক্রিয়া ও পরিবেশ দূষণের ফলে যে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি হয় তা হার্ট তথা সমস্ত শরীরের জন্য ক্ষতিকর৷ রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেই ক্ষতি খুব ভাল ভাবে ঠেকাতে পারে৷
- এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতেও সাহায্য করে।
- লেড টক্সিসিটি কমাতে সাহায্য করে।
- সংক্রমণজনিত রোগবালাই কমাতে সাহায্য করে।
- খালি পেটে রসুন খেলে যকৃত এবং মূত্রাশয় সঠিকভাবে নিজ নিজ কাজ করতে পারে।
- রসুনের সাপ্লিমেন্ট বা কাঁচা রসুন খেলে ফ্লু এবং কমন কোল্ড তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
- যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- কাঁচা রসুন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- হাড়ের জোর বাড়ায়।
- দ্রুত স্কিন ইনফেকশন সারিয়ে তোলে।
- রসুন যৌন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুনঃ লিভার ভালো রাখার উপায় | খাবার, ব্যায়াম, ঔষধ
এক কোয়া রসুনের উপকারিতা কি
এক কোয়া রসুনের নানাবিধ উপকারিতা পাওয়া যায়। প্রতিদিন এক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার কমানো সম্ভব।
এছাড়াও, এক কোয়া রসুনেও উপরের দেওয়া উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত এক কোয়া রসুন খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ওজন কমাতে রসুন
এটা শুনলে আপনি হয়তো অবাক হবেন। কিন্তু হ্যাঁ এটাই সত্যি। ওজন কমাতে রসুন খুব কাজে লাগে। রসুনে বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছে।
রসুনে ভিটামিন-বি, ভিটামিন সি, ফাইবার ও ক্যালশিয়াম থাকে। এর পাশাপাশি, রসুনে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, সোডিয়ামও থাকে।
যেনো তেন ভাবে রসুন খেলেই ওজন কমে না। এজন্য আপনাকে কিছু নিয়ম মানতে হবে। নির্দিষ্ট নিয়মে রসুন খেলেই ওজন কমাতে পারবেন।
ওজন কমালেও এটি শরীরের শক্তি বাড়ায়। এছাড়াও এটি হজমেও সাহায্য করে। অতিরিক্ত ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ওজন কমাতে খুব সহজ হয়।
রসুনের উপকারিতা ভালোভাবে পেতে হলে এবং ওজন কমাতে হলে নির্দিষ্ট নিয়মে রসুন খেতে হবে। চলুন সেই নিয়মগুলো জেনে নেই।
যে নিয়মে খেতে হবে রসুন
- রসুনকে ৪৫ মিনিট ধরে রান্না করলে তার গুণগুলি কমে যায়।
- রসুন কাঁচা হলে উপকারিতাও বেশি থাকে।
- সকালে একদম খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া উচিত।
- রসুনের ৩-৪ টি কোয়া খুলে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে খেয়ে নিন।
- ওজন কমাতে চাইলে লেবুর রসের সাথে রসুন খান।
- মধুর সঙ্গে রসুন মিশিয়ে খেলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
রসুনের অপকারিতা
রসুনের উপকারি দিক গুলোর পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও আছে। তাই আমাদের এগুলোও জানতে হবে। রসুনের অপকারিতা ও ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে বিডি নিউজ ২৪ ডট কমে একটি রিপোর্ট লেখা হয়েছে।
- অতিরিক্ত রসুন খেলে যকৃতের ক্ষতি হতে পারে।
- বমি হতে পারে।
- মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
- খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- খালি পেটে তাজা রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া, বমিভাব ও বমি হতে পারে।
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদেরও রসুন থেকে দূরে থাকতে হবে কারণ তা দুধের স্বাদ পাল্টে দেয়।
- রসুন খেলে গর্ভবতী নারীদের প্রসব যন্ত্রণা বেড়ে যায়। (গর্ভাবস্থায় কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন)
- অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্তচাপ অনেক কমে যায়।
- রক্তচাপ কমে গেলে মাথা ঘুরাতে পারে ও নিম্ন রক্তচাপজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রসুন নারী যৌনাঙ্গের সংবেদনশীল টিস্যুতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে ‘আইরিস’ ও ‘কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। ফলে, হারাতে পারে দৃষ্টিশক্তি।
আশা করি, আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানাতে পেরেছি। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। কোনো মতামত থাকলেও জানাতে ভুলবেন না।