লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবু (সাইট্রাস লিমন) নামটা শুনলেই আমাদের চোঁখের সামনে ভেসে উঠে উপবৃত্তাকার হলুদ একটি ফল। যা আমাদের অনেকের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। কিন্তু আমরা অনেকে এই ফলটির উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। চলুন লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিত
পাতি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবুর উপকারিতা

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো। তাহলে প্রথমে আমরা এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই। পরবর্তীতে অপকারিতা জানবো।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

কথাটা শুনে আপনাদের মনে হতে পারে যে ছোট্ট একটা লেবু কিভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররাও শিকার করে নিয়েছে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি থেকেও শক্তিশালী হিমশীতল লেবু। 

লেবুতে রয়েছে লিমোনয়েড যা ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করার মূল কাজটি করে থাকে। যেমন ভাবে  ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করতে লিমোনয়েড কাজ করে তেমনিভাবে ক্যান্সারের বৃদ্ধি অনেকটা কমিয়ে দেয়।

তবে লেবু যে আমি পরোটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো তা কিন্তু না। তাই আমাদের জানা দরকার কিভাবে লেবু খাবো।

আমরা লেবু এবং খোসা ফ্রিজে রাখবো। যার ফলে লেবুর যে তিক্ততা ভাব থাকে তা অনেকাংশে কেটে যায়। যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার কাজে আসে।

পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে

ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এগুলো আমাদের অনেক সময় অস্বস্থিতে ফেলে দেয়। আসলে এই গুলোকেই বলে গোলযোগ সমস্যা। যা অনেক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করে আমাদের বড় ধরনের সমস্যায় পেলে দেয়।

লেবু ও মধুর শরবত
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা (মধু ও লেবু)

এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আপনার পরম বন্ধু হতে পারে লেবুর রস। আপনি যদি এক গ্লাস লেবুর সাথে লবণ দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন তাহলে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সাথে যদি এক চা চামচ মধু হয় তাহলে আরো ভালো হয়।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

উচ্চ রক্তচাপ শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই উচ্চ রক্ত চাপের কারণে আমাদের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। সাথে ডেকে আনতে আরো অনেক সমস্যা। তাই এটাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়।

এই উচ্চ রক্তচাপ বেশিরভাগ তাদেরই দেখা দেয়, যারা খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম গ্রহণ করেনা। লেবুর রসে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের  উচিত পরিমাণ মত লেবুর রস পান করা।

লেবুর শরবত

ক্ষত সারায়

আমরা অনেকেই জানি লেবুতে রয়েছে অ্যাবসরবিক  এসিড যা ক্ষতস্থান সারাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হাড়, তরুনাস্থি, টিস্যুর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

লেবুতে আছে ভিটামিন সি। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি করোনা মহামারী ও সর্দি-কাশির থেকে মুক্তি লাভে সাহায্য করে। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। ফুসফুস এবং হাঁপানির মত সমস্যা উপশম করে।

ত্বকের যত্নে

লেবুর বহুমুখী গুনের মধ্যে প্রধান যে গুনটি রয়েছে তা হলো প্রাকৃতিক পরিস্কারক। এটি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

লেবুতে থাকা ভিটামিন-সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করে। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। 

গরম জলে লেবুর রসের উপকারিতা

গরম জলে লেবু মিশিয়ে খেলে কয়েকটি উপকার পাওয়া যায়। এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ৩ টি উপকারের কথা জেনে নেওয়া যাক।

  • সকালে গরম জলের সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে দেহের ph এর মাত্রা ঠিক থাকে ও কর্মক্ষমতা বাড়ে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • দেহের এন্টি অক্সিডেন্ট এর অভাব পূরণ করে।

চুলে লেবুর রসের উপকারিতা

লেবু শুধু শরীর সুস্থ রাখতেই উপকারে আসেনা চুলের উপকারেও আসে। প্রতিদিন হেয়ার প্যাক হিসেবে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার মাথার চুল পড়া অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যাবে।

লেবুর রস খুশকি দূর করতেও সাহায্য করে। এজন্য লেবুর রসের সাথে পানি মিশিয়ে মাথাত লাগাতে হবে। এটি প্রাকৃতিকভাবে মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের আরেকটি বড় সমস্যা হলো চুল পড়া। আর এই চুলগুলো নতুনভাবে গজাতে লেবুর একটি অসাধারণ ব্যবহার রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা | স্বাস্থ্য টিপ্স

কয়েক ফোঁটা লেবুর রসের সাথে আমলকীর রস মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে নিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পুরো মাথা ধুয়ে নিন। চুলের আগা ফাটা রোধ ও কন্ডিশনার হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যায়।

গ্যাস্ট্রিক সারাতে

মাঝারি আকারের একটি লেবুর রসের সাথে ১ কাপ পরিমাণ পানি ও আধা টেবিল চাপচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। ভাল করে নেড়ে মিশ্রণ তৈরি করে খান। নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আরাম পাবেন।

গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথায় দ্রুত উপকার পেতে চাইলে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। দ্রুত উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

আমাদের অনেকেরই মুখের দুর্গন্ধের কারণে মানুষের সামনে কথা বলতে সমস্যা হয়। আর মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য আমরা অনেক ধরনের টুথপেষ্ট ও মাজন ব্যবহার করে থাকি। লেবুর পানি খাবার পর দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই। কারণ লেবু মাড়ির ব্যথা, দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা এবং  মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। 

নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে 

বিশেষ করে মেয়েরা নখের সৌন্দর্য নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। নখের যে সমস্যাটা দেখা দেয় তা হলো নখের বিবর্ণতা। আর এ থেকে রক্ষা পেতে এক টুকরা লেবু দিয়ে নখ পলিশ করলে নখ তার উজ্জ্বলতা পিরে পাবে।

ওজন কমাতে

লেবু দিয়ে তৈরিকৃত জুস এবং পানি যদি নিয়মিত পান করলে এটি ধীরে ধীরে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।

লেবুর জুস

পিএইচ (PH) ব্যালেন্স ঠিক রাখতে

লেবুর রসে পিএইচ (PH) রয়েছে ২.০ যার কারণে লেবুর স্বাদ টক হয়। লেবু আমাদের শরীরে পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে বড় ভুমিকা রাখে। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক এসিড বিপাকের কাজ সম্পূর্ণ করার পর ক্ষার হিসেবে কাজ করে। ফলে আমাদের শরীরে থাকা পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে।

শ্বাস-প্রশ্বাস ভালো রাখে

খাওয়ার পর লেবুর পানি পান করলে এটি আমাদের ফুসফুস পরিষ্কার করে। যার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস সতেজ থাকে।

লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে চা পান করেন। আবার কেউ পেটের মেদ কমানোর জন্য লেবু পানি খেয়ে থাকেন। তবে আমরা চাইলেই সামান্য কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা আরো বহু গুণ বাড়াতে পারি।

প্রথমে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। গরম থাকা অবস্থায় এই পানি পান করুন। খেয়াল রাখবেন, পানি যেনো ঠান্ডা হয়ে না যায়।

এই লেবু পানি পান করলে বিভিন্ন রকমের উপকার পাবেন। এটি আপনার মেদ কমাতে সাহায্য করবে, পাকস্থলী পরিষ্কার করবে। একইসাথে মধু আপনার হজমে সহায়তা করবে। এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে।

আরো জানতে এখানে ক্লিক করে এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে নিতে পারেন।

লেবুর অপকারিতা 

প্রত্যেক জিনিসের ভালো খারাপ দুইদিকই থাকে। তেমনি ব্যাতিক্রম নয় লেবুও। এর যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি খারাপ দিক ও রয়েছে। এ পর্যায়ে লেবুর ক্ষতিকর দিক গুলো তুলে ধরা হলো।

অতিরিক্ত লেবুর রস পান করলে যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের বুক জ্বালা করে। অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে সাইট্রিক এসিড থেকে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। কিন্তু যারা প্রতিদিন সকালে উঠে লেবুর রস পান করে থাকেন। তারা যদি দৈনিক দুইবার দাঁত পরিষ্কার করেন তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

অতিরিক্ত লেবুর জল পান করার ফলে আমাদের পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমাণ বৃদ্ধি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তার সাথে সাথে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। এটি যদি দীর্ঘদিন যাবত হয়ে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

লেবুর অপকারিতা

আমাদের যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সাধারণত ডাক্তাররা লেবু জাতীয় খাবার না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে।

আমরা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে অনেক পরিবর্তন করে থাকি। যার ফরে শরীরে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিয়ে থাকে। সেই সময় আমরা যদি অতিরিক্ত লেবুর রস পান করে থাকি তাহলে শরীরে দূর্বলভাব দেখা দিতে পারে।

লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিডের কারণে দীর্ঘদিন ধরে  লেবু খাওয়ার ফলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

খালি পেটে লেবু খেলে আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য পরিপাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। যার ফলে আমরা যে খাবার টি খেয়ে থাকি তা ঠিক মত হজম হয়না। যে কোনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফল খেলে এই সমস্যা হতে পারে।

জেনে রাখা ভালো, আমরা যারা ক্যালসিয়াম জাতীয় ঔষুধ খেয়ে থাকি তাদের লেবু না খাওয়াই ভালো।এছাড়াও আমরা যারা প্রতিদিন কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঔষুধ খেয়ে থাকি তাদের লেবু বা সাইট্রিক জাতীয় ফল না খাওয়াই ভালো।

ডাক্তারের পরামর্শ নিন

যেকোন প্রকার টিপ্স প্রয়োগ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অন্যথায় বিভিন্ন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

আশা করি, লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা একটু হলেও ধারণা পেয়েছেন। এরকম আরো স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য পেতে ট্রিক ব্লগ বিডির সাথেই থাকুন।

তথ্যসূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন, এই সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সাজগোজ, উইকিপিডিয়া

ডিসক্লেইমার ও সতর্কবার্তা

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত তথ্য শেখার উদ্দেশ্য এবং শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য প্রকাশিত হয়। ট্রিকব্লগবিডি.কম এই তথ্যের সম্পূর্ণতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং নির্ভুলতা সম্পর্কে কোনরূপ গ্যারান্টি দেয় না।

এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যেকোনো তথ্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়। যেকোন তথ্য বাস্তবে জীবনে প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়না।

কোনো তথ্য বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে সেটির জন্য কোনো ক্ষতি হলে তার দায় দায়িত্ব একান্তই আপনার। ট্রিক ব্লগ বিডি বা লেখক এর জন্য কোনমতেই দায়ী নয়। আরো বিস্তারিত জানতে ডিসক্লেইমার পেজ দেখুন।

আর্টিকেল ক্রেডিটঃ ইব্রাহীম খলিল ইবনট্রিক ব্লগ বিডির কন্টেন্ট রাইটার

4 thoughts on “লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা”

  1. অনেক সুন্দর পোস্ট। অনেক কিছু জানতে পারলাম।

  2. সেরা একটা পোস্ট ছিল । পড়ে অনেক ভাল লাগলো, বিশেষ আমার গ্যাস্টিকের সমস্যা লেবুর রসে আসলেই অনেক কাজের ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Scroll to Top