আম গাছে গুটি কলম করার পদ্ধতি

কলম করা সম্পর্কে কম-বেশি আমরা সবাই জানি। ভালো জাতের গাছ থেকে সায়ন সংগ্রহ করে মাতৃগাছে কলম করা হয়। এছাড়াও ভালো জাতের গাছে গুটি কলম করে নতুন গাছ তৈরি করা হয়। চলুন, আম গাছে গুটি কলম করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই।

কলম করার সুবিধা

কৃষি কাজে কলম করার অনেক সুবিধা রয়েছে। চলুন কিছু সুবিধা জেনে নেই।

  • ভালো জাতের গাছের কলম করে ঐ জাতের ফল পাওয়া যায়।
  • খুব কম সময়ে ভালো জাতের ফল বা ফুল উৎপাদন করা যায়।
  • গাছের আকৃতি তুলনামূলক ছোট হওয়ায় জায়গা কম লাগে।
  • যেসব গাছের বীজ হয়না সেইসব গাছের বংশবিস্তারে দারুণভাবে সহায়তা করে।
  • খরচ তুলনামূলক কম লাগে।

গুটি কলম করার সুবিধা

গুটি কলম করলে একসাথে অনেক চারা উৎপাদন করা যায়। অল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়। খরচ কম হয়।

কলম করার অসুবিধা

সুবিধার পাশাপাশি কলম করার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিচে কিছু অসুবিধার কথা তুলে ধরা হলো।

  • মাতৃ উদ্ভিদের রোগবালাই নতুন উদ্ভিদে ছড়িয়ে পড়ে।
  • কলম সম্পন্ন হওয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়।

আম গাছে গুটি কলম করার পদ্ধতি

কলম করার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে গুটি কলম। আম খুবই জনপ্রিয় ফল। এর অনেক ভালো ভালো জাত রয়েছে। গুটি কলম করে ভালো জাতের আম সহজেই পাওয়া যেতে পারে। ফল গাছে গুটি কলম করার পদ্ধতি খুবই সহজ।

আম গাছে গুটি কলম করার পদ্ধতি
গুটি কলম করার পদ্ধতি

তাই আজকে এই বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। আম গাছে কীভাবে গুটি কলম করতে হয়? এক এক করে জেনে নেই।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

গুটি কলম করতে কিছু উপকরণের দরকার হবে। এজন্য যা যা লাগবেঃ

  • ধারালো ছুরি
  • সুতলি
  • চটের বস্তা/পলিথিন
  • ভালো জাতের গাছ (যেটাতে কলম করা হবে এক্ষেত্রে আম গাছ)

কার্যাবলি

  • প্রথমে একটি উপযুক্ত শাখা বাছাই করুন যেখানে কলম করা হবে।
  • গুটি কলমের জন্য ১-২ বছর বয়সী, সতেজ, সরল, নিরোগ, পেন্সিলের মতো মোটা ডাল বেছে নিতে হবে।
  • এরপর ঐ ডালের আগা থেকে ৪০-৫০ সেমি নিছে একটি গিট নির্বাচন করুন।
  • গিটের ঠিক নিচ থেকে ৪-৫ সেমি গোলাকারে বাকল তুলতে হবে।
  • এরপর পঁচা গোবর ও এটেল মাটির মিশ্রণ দিয়ে বাকল তোলা অংশটি চারপাশে ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মিশ্রণ তৈরি করতে ৩ ভাগ এটেল মাটি ও ১ ভাগ পঁচা গোবর বা জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
  • মিশ্রণটি বাকল তোলা অংশে এমনভাবে লাগাতে হবে যেন কোনো অংশ খালি না থাকে।
  • এরপর মাটির বলটি চটের বস্তা বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে সুতলি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
  • ২-৩ মাসের মধ্যে শিকড় গজাবে।
  • শিকড়ের রং তামাটে হলে মাটি দেওয়া অংশের নিচে সাবধানে কেটে নিতে হবে।
  • চটের বস্তা বা পলিথিন খুলে টবে বা বীজতলায় ছায়াযুক্ত স্থানে ৪-৫ সপ্তাহ সংরক্ষণ করুন।
  • এরপর নির্বাচিত স্থানে রোপন করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ মাত্র ১ মিনিটে ফসলের রোগ নির্ণয় ও প্রতিকার | প্ল্যান্টিক্স অ্যাপ

কিছু কিছু গাছে সহজে শিকড় গজায় না। সেসব গাছের কাটা অংশে রুটিং হরমোন প্রয়োগ করতে হয়। কিছু রুটিং হরমোন হচ্ছে IBA, NAA, Kinetin ইত্যাদি।

সৌজন্যেঃ NATURE Agriculture

রুটিং হরমোন কি?

এটি এক ধরণের পাউডার যা কলম করার সময় ব্যবহার করা হয়।

রুটিং হরমোন কোথায় পাওয়া যায়?

অনেকেই রুটিং হরমোন খুঁজে পাননা। এটি প্রায় সব জেলাতেই পাওয়া যায়। না পেলে আপনার নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করুন।

আম গাছে কলম করার সঠিক সময়

আম গাছে গুটি কলম করার নির্দিষ্ট একটি সময় আছে। ঐ সময়েই গুটি কলম করতে হয়। সাধারণত বৈশাখ – আষাঢ় মাস গুটি কলমকরার উপযুক্ত সময়।

আরো পড়ুনঃ কবুতর পালন পদ্ধতি

এই সময়ে আম গাছে কলম করার সঠিক সময়। আর কলম সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top