কবুতর এটি একটি গৃহপালিত পাখি। এক সময় কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান- প্রদান করা হলেও বর্তমান তা সু-স্বাদু মাংস হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশ্বজুড়ে কবুতর ২০০ প্রকারের থাকলেও বাংলাদেশে প্রায় ৩০ প্রকারের কবুতর রয়েছে। বর্তমানে কবুতরকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে সবাই ব্যবহার করে। আর তাই কবুতর পালন পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম জানাটা এখন সময়ের দাবি।
উন্নতমানের কবুতর প্রতি জোড়া ২ হাজার থেকে লাখ টাকাও বিক্রি করা হয়। তবে কবুতর পালনের আগে অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার। যেমনঃ কবুতরের দাম কেমন? কবুতরের খাবার কি? কবুতরের রোগ ইত্যাদি সমূহ?
চলুন জেনে নেই কবুতর পালনের আগে যে সব বিষয় জানা দরকার তার বিস্তারিত….
কবুতর পালনের পূর্ব প্রস্তুতি
কবুতর পালন করে সফল হতে চাইলে সর্বপ্রথম আপনার দৃঢ় ইচ্ছা ও প্রবল ধৈর্য ধরতে হবে। তারপর আপনার কিছু অর্থের প্রয়োজন হবে। আপনি যদি শুধু মাত্র পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে কবুতর পালন করতে চান তাহলে ১ হাজার বা ১২’শ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। আর যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কবুতর পালন করতে চান তাহলে ১০ হাজার টাকা দিয়েই কবুতরের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
কবুতর পালন করতে চাইলে সবার আগে টাকা জোগাড় করুন। তার পর কবুতর পালনের স্থান বাছাই করতে হবে।
কবুতর পালনের স্থান
টাকা যোগাড় করার আগে অবশ্যই কবুতর পালন করার জন্য একটি নিরাপদ স্থানের সন্ধান করতে হবে। আর কবুতরের জন্য এমন স্থান খুঁজবেন যেখানে হিংস্র পশু-পাখি তথাঃ- চিল, শকুন এবং শিয়াল মামার ভয় না থাকে। আর এমন জায়গায় কবুতর পালন করুন যেখানে সূর্যের আলো, বাতাস আসতে পারে। এবং কবুতরের ঘর জলে ভিজে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা না থাকে।
তাছাড়া কবুতরের খামারে খড়- কুটা দিলে তারা নিজেরাই সুন্দর বাসা বানাবে। এজন্য ধানের খড় – ঘাস ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর যখন আপনি কবুতর পালন করার জন্য উপযোগী স্থান খুঁজে পাবেন, তখন আপনাকে কবুতরের ঘর তৈরি করতে হবে। তো জেনে নিন কবুতরের ঘর তৈরি করার নিয়ম। বিস্তারিত………
কবুতরের খাঁচা
কবুতর পালন করার জন্য কবুতরের ঘর একটি জরুরী বিষয়। ঘরের উপরই কবুতরের ভালো মন্দ নির্ভর করবে। কবুতরের ঘর তৈরি করার জন্য আপনাকে নিম্নোক্ত কিছু বিষয় জানতে হবে যে।
আপনি কি ধরনের কবুতর পালন করবেন? দেশি কবুতর? না বিদেশী কবুতর? আবদ্ধ রেখে কবুতর পালন করবেন? নাকি, শিকারি বানিয়ে ছেড়ে দিবেন? খাঁচা তৈরি করবেন? নাকি, ঘর তৈরি করবে? তো এই বিষয়ে জেনে নিন বিস্তারিত……….
কবুতরের খাঁচা তৈরি করার নিয়ম
আপনি যদি দেশি বা গিরিবাজ কবুতরের বাসা তৈরি করতে চান তাহলে চতুর্দিকে ১ ফুট দিয়ে খাঁচা তৈরি করুন। অর্থাৎ চতুর্দিকে ১ ফুট,উপরেও ১ ফুট,প্বাশ ও লম্বাতেও ১ ফুট। তবে, লম্বাতে ১ ফুটের চেয়ে বেশি দেওয়া উচিত মনে করি। আর আপনি যদি সিরাজি কবুতরের বাসা তৈরি করতে চান তাহলে ১*৫ ফুট খাঁচা তৈরি করুন।অর্থাৎ চতুর্দিকে দেড় ফুট ,উপরে ১ ফুট দেওয়া যেতে পারে।
আর কবুতরের বাসার প্রতিটি তক্তা একটি আরেকটি থেকে কিছুটা ফাঁকা রাখতে হবে। এতে করে তিনটি উপকার ১)আবহাওয়া চলাচল সহজ থাকবে ২)বাসাটি শুষ্ক থাকবে ৩)কবুতরের বাচ্চা ভালো থাকবে।
আবদ্ধ অবস্থায় কবুতর পালন পদ্ধতি ও আবদ্ধ অবস্থায় কবুতর পালনের খাঁচা
আপনি যদি কবুতর শিকারি করতে না পারেন, কিংবা কবুতর হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। অথবা, হিংস্র প্রাণী বা আপনার আশেপাশের লোকদের থেকে কবুতরকে নিরাপদ মনে না করেন তাহলে আবদ্ধ অবস্থায় কবুতর পালন করতে পারেন।
আবদ্ধ অবস্থায় কবুতর পালন করতে হলে প্রথমে আপনাকে প্রথমেে একটি রুম তৈরি করতে হবে।এবং রুমের দেড় ফুট উপর থেকে শুরু করে প্রতি ১ ফুট পর পর একটি এক ফুট প্বার্শওয়ালা তক্তা দিবেন। এভাবে সারা রুমে তক্তা দিবেন। আর রুমের মধ্যখানে খড়-কুটা পেলে রাখবেন। দেখবেন কবুতর নিজেই তার নিজের ঘর বানিয়ে নিবেন।
এছাড়াও পুর্বের মত খাঁচা তৈরি করেও আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে পারেন।যখন আমরা কবুতরের খাঁচা তৈরি করার নিয়ম কানুন সহ সব কিছু জানলাম, এখন আমরা জানবো যে, কবুতরের দাম। তো তাহলে জেনে নিন বিস্তারিত..
কবুতরের দাম ও মূল্য তালিকা
বাজারে বিভিন্ন ধরনের কবুতর পাওয়া যায়। একেক কবুতরের দাম একেক রকম। তো জেনে নিন প্রচলিত কবুতরের দাম।
আরো পড়ুনঃ মাত্র ১ মিনিটে ফসলের রোগ নির্ণয় ও প্রতিকার | প্ল্যান্টিক্স অ্যাপ
জাত বেধে কবুতরের দামের তালিকা
বিভিন্ন প্রকারের কবুতরের দামের তালিকা (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন) নিচে দেওয়া হলো। নিচে থেকে সম্ভাব্য মূল্য তালিকা দেখে নিন।
- বাংলা ৪৫০-৮০০৳
- গিরিবাজ ৫০০-১২০০৳
- সিরাজি ১০০০-৩০০০৳
- বোম্বাই ৬০০-১০০০৳
- গররা ১০০০-১৫০০৳
- সবুজ গোল্লা ১০০০-১৫০০৳
- মাকসি ৬০০০-৮০০০৳
- হোমা সবজি ৩০০০-১০০,০০০৳
- লক্ষ্মা ২০০০-৫০,০০০৳
- বাগা ৮০০-১৫০০৳
- কালদম ১০০০-২৫০০৳
- মল্টেস ১৫,০০০-২০,০০০৳
- মডেনা ১৫০০-২০০০৳
- বিউটি হোমা ৩০০০-৩০,০০০৳
- হোমার ১৫,০০০-৩০,০০০৳
- মুসলদম ৮০০-১৫০০৳
কবুতরের খাবার
কবুতরের ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখা দরকার। তারা সাধারণত গম, সরিষা, চাল ইত্যাদি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। তবে, কবুতর বয়স এবং আকার অনুযায়ী খাবার খেয়ে থাকে। প্রতিটি কবুতর ৪০-৫০ গ্রাম খাবার খেয়ে থাকে।
কবুতরের রোগ এবং প্রতিকার
কবুতরের অন্যতম রোগ হচ্ছে রানীক্ষেত ও পক্স। সময়মত টিকা দিলে এবং সুষম খাদ্য, ভিটামিন, আলা বাতাসের মধ্যে থাকলে এসব রোগ- কমে যাবে।
বাচ্চা কবুতরের মৃত্যুর কারন কি?
কবুতর পালনের নিয়ম জানার সময় অবশ্যই এই বিষয়টিও জানতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের কারণে, ডায়রিয়ার কারণে, ছোঁয়াছে রোগ, এমনকি বাচ্চার বাবা -মা না খাওয়ানোর কারণেও বাচ্চা কবুতর মারা যায়।
বাচ্চা কবুতরের যত্ন নিবেন কিভাবে?
বাচ্চা কবুতরের যত্ন প্রথম থেকেই নেয়া দরকার। বিশেষ করে শীতকালে। কারণ শীতকালে অনেক বাচ্চাই ঠাণ্ডার কারণে মারা যায়। সেক্ষেত্রে বাচ্চা কবুতরকে প্রতিদিন ঘন্টা খানিক রোদে রাখা দরকার। লক্ষ রাখা উচিত মা – বাবা বাচ্চা কবুতরকে পর্যাপ্ত খাবার, তাপ দিচ্ছে কিনা। প্রয়োজনে নিজে দু- একদিন পর বাচ্চার পরীক্ষা করা।
কবুতরের ডিম ফুটানো/ ডিম উৎপাদন?
যেকোনো ছেলে কিংবা মেয়ে কবুতরকে জোড়ায় কমপক্ষে ৭-১০ দিন একসাথে রাখা দরকার। পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়েই ডিমে তাপ দিয়ে রাখে। ১৮-২০ দিন ডিমে তাপ দিলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে।
শেষ কথা
আমরা যথাসাধ্য কবুতর পালন করার সঠিক নিয়ম কানুন গুলো সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট করুন।
অনেক ভালো লাগল ।
আশা করি তথ্যগুলি কাজে আসবে ।
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কবুতর পালন করতে গেলেও এমন অনেক নিয়ম আছে যা আমাদের মেনে চলতে হয়। কবুতর পালনের এই নিয়মগুলো যেমন ইফেক্টিভ তেমনি কোন জাতের কবুতব পালন করলে ভাল হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকমত বাসা তৈরি না করলে শীতের দিনে এরা বেশি ভাগ মারা যায়।
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।