আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ কি প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা রাখেন? তাহলে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার মাধ্যমে সরকার থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করতে পারেন। কিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
বাংলাদেশ সংবিধান ধারা ১৫, ১৭, ২০, ২৯ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম-সুযোগ ও সমঅধিকার বাস্তবায়নে কাজ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে প্রায় ১ লক্ষ ৪ হাজারের বেশি প্রতিবন্ধীকে আর্থিক সাহায্যের জন্য ভাতা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন প্রতিটা প্রতিবন্ধী প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে ভাতা গ্রহন করতো।
বর্তমানে (২০২২-২৩ অর্থবছরে) নিবন্ধিত প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ লক্ষ ৬৫ হাজারেরও বেশি সংখ্যক। পাশাপাশি ভাতার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫০ টাকায়। এই বছর প্রতিবন্ধীদের জন্য উক্ত খাতে বরাদ্দ করা হয় ২৪২৯.১৮ কোটি টাকা। এখন অব্দি এই খাতে এটাই সর্বোচ্চ বরাদ্দকৃত অর্থ।
সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রতিবন্ধী ভাতা
প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন গ্রহন, যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে ভাতা প্রদান ও পরবর্তীতে যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরকে দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে এখন অব্দি সমাজসেবা অধিদপ্তর কতৃক প্রতিবন্ধী ভাতা পরিচালিত হয়ে আসছে।
প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির জন্য প্রথমেই প্রতিবন্ধী কার্ড বা সুবর্ণ কার্ড তৈরি করে নিতে হয় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে। তারপর সেখানেই আবেদন ফরম পূরণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির জন্য নিম্মে উল্লেখিত ৫ ধরনের প্রতিবন্ধীর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে:
- শ্রবণ প্রতিবন্ধী
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
- বাক প্রতিবন্ধী
- বুদ্ধি প্রতিবন্ধী
- শারীরিক প্রতিবন্ধী
এগুলো মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিক দিক থেকে অক্ষম ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিম্মের প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানানো হলো।
প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার নিয়ম
আপনি অথবা আপনার পরিবারের কেউ যদি উপরে উল্লেখিত ধরণের প্রতিবন্ধী হয়ে থাকেন বা থাকে তবে আপনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার যোগ্য। উক্ত ভাতা পাওয়ার জন্য আপনাকে যা করতে হবে সেগুলো হচ্ছে:
- ১) প্রথমেই প্রতিবন্ধী কার্ড বা সুবর্ণ কার্ড করে নিতে হবে।
- ২) প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে (কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে তা পরের অংশে উল্লেখ রয়েছে)।
- ৩) সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সংগৃহিত প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন ফরম পূরণ করে উক্ত ডকুমেন্টস সহকারে জমা দিতে হবে।
- ৪) সেখান থেকে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হলে আপনার কাছ থেকে গ্রহণ করা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে কাঙ্ক্ষিত ভাতা প্রদান করা হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্ত সমূহ
- উক্ত এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- নিদিষ্ট পরিচয় পত্র থাকতে হবে।
- মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৬,০০০ টাকার বেশি হলে ভাতা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য হবে না।
- আবেদনকারিকে দুঃস্থ প্রতিবন্ধী হতে হবে।
- ৬ বছরের উর্ধ্বে বয়স হতে হবে।
- সরকার কতৃক প্রদানকৃত অন্য কোনো অনুদানপ্রাপ্ত হলে প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে না।
এবার জেনে নিন প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন করবেন কিভাবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। বর্তমান সময়ে ডিজিটালাইজেশনের ফলে সরাসরি গিয়ে আবেদন করতে হয় না। প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করা যায়। এখন জানাবো সেই উপায় সম্পর্কেই।
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন (বিস্তারিত)
প্রথমেই আপনাকে কিছু ডকুমেন্টস রেডি রাখতে হবে। সেগুলো হলো
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- বয়স ১৮ এর বেশি হলে NID কার্ড এবং ১৮ এর কম হলে জন্ম নিবন্ধন কার্ড।
- প্রতিবন্ধী পরিচয় পত্র বা সুবর্ণ কার্ড।
- মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য একটি সচল বিকাশ অথবা নগদ মোবাইল নাম্বার।
- আবেদন সম্পন্ন হলে আবেদন ফরম প্রিন্ট করার ব্যবস্থা।
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া (ধাপে ধাপে)
১ম ধাপ- অনলাইন আবেদন ফরম
প্রথমেই আপনাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম অংশের চলে যেতে হবে উক্ত লিংকটি ক্লিক করে। এই পর্যায়ে আপনাকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেখাবে যার সারসংক্ষেপ ইতিমধ্যে আপনাকে জানিয়েছি।
উল্লেখিত বিষয় গুলো পড়ে একেবারে নিচের দিকে “আমি বুঝেছি, পরবর্তী ধাপে যান” বাটনের পাশে টিক দিয়ে বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। তারপরেই আবেদনের জন্য তথ্য প্রদানের ধাপ গুলো শুরু হবে।
২য় ধাপ – ব্যক্তিগত তথ্য
উপরের স্ক্রিনশটে লক্ষ্য করলেই দেখবেন প্রথমেই কার্যক্রম নামক সেকশনে প্রতিবন্ধী ভাতা সিলেক্ট করতে হচ্ছে। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত তথ্যের স্থানে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের নাম্বার ও জন্ম তারিখ প্রদান করার জন্য বলা হচ্ছে।
আপনার কাছে থাকা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির যেকোনো একটি নাম্বার প্রদান করলেই অটোমেটিকলি তার সম্পর্কে অনলাইনে সাবমিট করা তথ্য গুলো ফিলাপ হয়ে যাবে এবং কিছু কিছু স্থানে তথ্য গুলো না থাকলে সেগুলো পূরণ করে দিতে হবে। পাশাপাশি একটি ছবি সাবমিট করতে হবে যার রেজুলেশন হতে হবে [200px X 200px]। এই ধাপের কাজ এখানেই শেষ।
৩য় ধাপ – প্রতিবন্ধী ভাতা অনুযায়ী বিস্তারিত তথ্য প্রদান
ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রথমেই ডি আই এস ও প্রতিবন্ধীর ধরন কোড নামক দুইটা অপশন রয়েছে। আপনি যেহেতু পূর্বে প্রতিবন্ধী কার্ড বা সুবর্ণ কার্ড করেছেন সেক্ষেত্রে আগের ধাপ কমপ্লিট করা হলে অটোমেটিক এটি সেট হয়ে যাবে। যদি না হয় তবে কার্ড দেখে অপশন দুইটি ফিলাপ করে যাচাই বাটনে ক্লিক করলে প্রতিবন্ধী কার্ডে থাকা বিস্তারিত তথ্য গুলো অটোমেটিক ভাবে সেট হয়ে যাবে। পুনরায় যেগুলো খালি থাকবে সেগুলোকে একেক করে ফিলআপ করবেন।
৪র্থ ধাপ- যোগাযোগ তথ্য
এটি পুরো প্রসেসটির শেষ ধাপ। এখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করার জন্য যে ঠিকানাটি প্রয়োজন সেগুলো পূরণ করতে হবে। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী অথবা প্রতিবন্ধী কার্ড অনুযায়ী যে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা রয়েছে তা হুবহু এখানে প্রদান করবেন।
সব শেষ হয়ে গেলে পুনরায় আরেকবার চেক করে সংরক্ষন বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে আবেদন কার্য সমাপ্ত করুন। আবেদন শেষ হলে আপনাকে পুরো ফরমটি প্রিন্ট করে নিতে হবে যা পরবর্তীতে দুইটি কপি সমাজসেবা অধিদপ্তরে ও একটি কপি নিজের কাছে রাখতে হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড
প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড বলতে মূলত প্রতিবন্ধী কার্ড বা সুবর্ণ কার্ডকেই ধরা হয়। উক্ত কার্ডটি সরাসরি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে অথবা বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদন করে গ্রহন করা যাবে। সুবর্ণ কার্ড বা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের একটি ডেমো ছবি নিচে দিয়ে রাখছি।
প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন ফরম
যারা অনলাইনে আবেদন করবেন তাদের আলাদা ভাবে কোনো প্রকার ফরম কালেক্ট করতে হবে না। উপরে উল্লেখিত লিংকে গিয়ে সরাসরি আবেদন করার পদ্ধতি আমরা দেখিয়েছি। তবে যারা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আবেদন করতে চাচ্ছেন তাদের অবশ্যই আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করার মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
আবেদন ফর্মটি আপনি দপ্তর থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। নিম্মে প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন ফরম এর ছবিটি দেখানো হলো।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম
সচারচর জিজ্ঞাসা করা প্রশ্ন
সাধারণত ৩ মাস পরপর মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়।
শুরুটা ২০০ টাকা দিয়ে হলেও বর্তমানে (২০২২-২৩ অর্থবছর) ৮৫০ টাকা করে প্রতি মাসে দেয়া হয়।
একটা সময় ছিলো যখন দপ্তরে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভাতা এর টাকা উঠাতে হতো বা নিয়ে আসতে হতো। কিন্তু বর্তমানে তা করার প্রয়োজন হয় না। কারন এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই ভাতার টাকা পাঠানো হয়। আবেদনের সময় যে মোবাইল নাম্বারটি প্রদান করেছিলেন, নিদিষ্ট সময় পরপর প্রতিবন্ধী ভাতা মোবাইলে প্রদান করা হবে।
আর্টিকেল থেকে যা জানতে পারলেন
পরিশেষে, এই ছিলো প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন সংক্রান্ত বিস্তারিত আর্টিকেল যেখানে কেবল আবেদন প্রক্রিয়াই নয় বরং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় যেমন – প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার নিয়ম, যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, আবেদন ফরম ও সচারচর জিজ্ঞাসা করা কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। আশা করছি উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা সংক্রান্ত সকল বিষয় গুলো ক্লিয়ার করা গিয়েছে। ধন্যবাদ।