শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্ণনা

শিক্ষা সফর জীবনের খুবই আনন্দদায়ক মূহুর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে খুব অল্প পরিমাণ লেখা পাওয়া যায়। তাই আজকে সেই বিষয়ে লিখতে বসলাম।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা

“শিক্ষা সফর” নামটা শুনলেই আমরা বুঝতে পারি এখানে কিছু একটা শিখা যায় ও নতুন নতুন অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। আমার নিজের জীবনের একটি শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিচে তুলে ধরলাম।

পূর্ব প্রস্তুতি

সফরের আগে আমি বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেটি ছিল অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা।

সফরের আগের দিন চুল কাটা ও জামাকাপড় ইস্ত্রি করা সেরে নিয়েছিলাম। একটি ব্যাগে জামাকাপড় প্যাক করে নিয়েছিলাম। একটি ফুটবল জোগাড় করে রেখেছিলাম সাগর পাড়ে খেলার জন্য। আমাদের গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম ক্যাপে ২৪ পার্ক ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।

রাতে ঘুমানোর আগে ফোনে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। রাত ৪ টা বাজে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ ও গোসল সেরে নেই।

এরপর হালকা নাস্তা করি। ৪ টা ৪০ মিনিটের দিকে ব্যাগ ও ফুটবল নিয়ে শিক্ষা সফরের গাড়িতে উঠার জন্য রওনা দেই। সাথে একটি পানির বোতল ও শুকনো কিছু খাবার নিয়েছিলাম।

শিক্ষা সফরের গাড়িতে নতুন অভিজ্ঞতা

শিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সবাই জরুরি প্রয়োজন সেরে ৫ টা ২০ মিনিটে গাড়িতে উঠি। ৫ টা ৩০ মিনিটে সোনাইমুড়ী থেকে গাড়ি ছাড়ে। উল্লেখ্য, আমরা নোয়াখালী থেকে সফরে যাচ্ছিলাম।

গাড়িতে এমন কিছু বিনোদনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা আগে কখনো দেখিনি। আমরা ১ টি বাসে করে ৫০ জন যাচ্ছিলাম।

গাড়িতে মাইকের ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা একে একে গান, কবিতা, ছড়া, কৌতুক উপস্থাপন করেন। যা আমাকে বিমোহিত করেছিল।

আমি আমার প্রিয় কয়েকটি গান গেয়েছিলাম। সবাই হাত তালি দিয়ে আমাকে অভ্যর্থনা জানায়। সেটি ছিল আমার জীবনের প্রথম মাইকে গাওয়া গান।

আমরা ট্যুরিস্ট স্পটে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত নানা রকম আনন্দ ও বিনোদনে মেতে ছিলাম। আমাদের শিক্ষকরাও নানাভাবে আমাদের বিনোদন দেওয়া চেষ্টা করেছেন।

যাওয়ার সময় আমরা পাহাড়তলীর মনোমুগ্ধকর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করি। গাড়ি থেকে পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল সেগুলো দূরে আকাশের সাথে মিশে গেছে।

চট্টগ্রাম ক্যাপে ২৪

চট্টগ্রাম শহর থেকে ভাটিয়ারির দিকে যেতেই সবাই আনন্দে মেতে উঠেন। কারণ, সেই পথটি ছিল পাহাড়ি পথ। উঁচু নিচু পথে গাড়ি একবার উপরে উঠে, একবার নিচে নামে। সবার চোঁখ ছিল পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন গাছ ও লেকের দিকে। কি মনোরম সেই পরিবেশ!

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা (ক্যাপে 24 পার্ক)
ক্যাপে 24 পার্ক (এখানে কাঠবিড়ালি দেখেছিলাম)

অবশেষে আমরা ক্যাপে ২৪ পার্কে পৌঁছাই৷ এটি ছিল সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে। সেখানে সব জায়গায় সেনাবাহিনীরা টহলে ছিল। এমনকি পার্কের পরিচালনার দায়িত্বে সেনা সদস্যারা ছিল। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনোরূপ সমস্যা ছিলনা।

পার্কে ঢুকতেই আমরা গাছের উপর কিছু কাঠবিড়ালিকে ছোটাছুটি করতে দেখি। পার্কের ভিতরে কৃত্রিম ভাবে তৈরি মনোরম একটি ঝর্ণা ছিল।

ঝর্ণার পানি বয়ে গিয়ে পড়ে একটি লেকে। সেই লেকটি ছিল অসম্ভব চমৎকার। সেখানে নৌকা ভ্রমণ করার সুযোগ আছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই লেকে পা দিয়ে চালানো ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করেছিল।

ক্যাপে 24 লেক
ক্যাপে 24 লেক

পার্কে কয়েকটি রাইড ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের ফুলের গাছ ও অনেক মানুষের সমাগম ছিল।

আমরা কয়েকজন জাপানি মানুষের সাথে খোশগল্পও করেছিলাম। তারা জানান, তারা বাংলাদেশে এসে অনেক খুশি। তারা এদেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ঘুরেছেন যা তাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। এদেশের মানুষদের তাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। সুযোগ পেলে তারা আবারো বাংলাদেশে ঘুরতে আসবেন বলে জানান।

পার্কের পশ্চিম দিকে পাহাড়ের পাদদেশে একটি খোলা মাঠ ছিল। সেখানে আমাদের কয়েকটি খেলার আয়োজন করা হয়। আমরা এখানে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মতো ছিলাম।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

ক্যাপে 24 থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বা সী বিচের উদ্দেশ্যে রওনা হই। সাগর আমাকে খুব টানে। তাই সেই মূহুর্তে আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
শিক্ষা সফরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা

আমরা ৩ টা ৩০ মিনিটের দিকে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাই। সাগর দেখেই মন প্রাণ ভরে গেল। সেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। এ যেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের এক মিলন মেলা।

আমরা সাগর পাড়ে ঘন্টাখানেক ফুটবল খেলেছিলাম। তারপর সাগরে নেমে লাফ ঝাপ তো আছেই। স্পীড বোটে করে সাগর ভ্রমণ ছিল বেশ আনন্দদায়ক।

বীচে একটি তীক্ত অভিজ্ঞতাও আছে। সেটি হচ্ছে ছবি তোলা নিয়ে। সেখানে আমরা ফটোগ্রাপারদের ক্যামেরা দিয়ে কিছু ছবি তুলেছিলাম। কিন্তু তারা এক রকম আমাদের সাথে প্রতারণা করেন।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছবিঃ ভ্রমণ ইনফো

আমরা ছবি তুলেছিলাম ২০ কপি। কিন্তু তারা বলছে ৭০ কপি এবং সবগুলোই নিতে হবে। অর্থাৎ জোরপূর্বক আমাদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।

এই তিক্ত অভিজ্ঞতা বাদ দিলে বাকিটা সবই ঠিক ছিল। আমরা সাগর পাড়ের দোকান থেকে ঝিনুকের মালা, আচার, চকলেট ও কিছু খেলনা কিনেছিলাম।

বাড়ী ফেরা

সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আমাদের বাস নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে আমারা বাড়ী পৌঁছাই। এই শিক্ষা সফরটি ছিল আমার জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা যা আমাকে নতুন নতুন আনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে।

4 thoughts on “শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্ণনা”

  1. লেখাটি খুবই পারিশ্রমিক। লেখাটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো ,যদিও অনেক তথ্যবহুল লেখা রয়েছে!। আশা করি আগামীতে আরও ভাল ভাল পোস্ট করে যাবেন। বিশেষ করে এই ধরনের লেখা যারা নতুন ব্লগিং করছেন অনেকটা উপকারী একটি পোস্ট।

    1. মন্তব্য করেছেন ভালো কথা, কিন্তু লিংক দিয়ে স্পামিং করা থেকে বিরত থাকুন।

      আপনার নামের মধ্যেই একটি লিংক দিয়েছেন। অতিরিক্ত লিংক দেওয়া স্পামিং এটা নিশ্চয়ই জানেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top