গ্রামীন এরিয়ায় বসবাস করেন? বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করতে চাচ্ছেন? সেই বিষয়ে সকল তথ্য, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের পাশাপাশি কত টাকা খরচ হবে তা জানতে চান? তবে আপনি উপযুক্ত স্থানেই রয়েছেন। কেননা, এখানেই মিলবে আপনার সকল জিজ্ঞাসার জবাব। পড়তে থাকুন।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সম্পর্কে ব্যাসিক তথ্য
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (BREB) অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৪% এরও বেশি গ্রামীণ পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে, যা ১৯৭১ সালে ছিলো মাত্র ৩%।
BREB ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তখন থেকে বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মোক্ষম ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। দেশের প্রায় ৯০% গ্রামীণ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এর অবস্থান, যেখানে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সেবার আওতায় রয়েছে।
গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের জন্য BREB-এর প্রাথমিক পন্থা হলো সোলার হোম সিস্টেম (SHS) স্থাপন। যা ছোট আকারের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা যা স্বতন্ত্র পরিবারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। সরকার এসএইচএস স্থাপনকে উৎসাহিত করার জন্য ভর্তুকি প্রদান করে।
SHS ছাড়াও, বিআরইবি মাইক্রোগ্রিড এবং মিনি-গ্রিডের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এগুলি হলো ছোট আকারের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা৷ BREB প্রায় ৩০০০ মাইক্রোগ্রিড এবং মিনি-গ্রিড ইনস্টল করেছে, যা প্রায় ৮,০০,০০০ পরিবারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
যদিও এখনও এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা এখন অব্দিও বিদ্যুৎ সেবার আওতাভুক্ত হয়নি। কিংবা এমন অনেকে রয়েছে যারা অন্যের নামে করা বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক সেবা গ্রহন করছে। তাদের জন্য প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে নতুন মিটার।
এক্ষেত্রে আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন যাদের পল্লী বিদ্যুৎ মিটার প্রয়োজন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য বেশ তথ্য বহুল হতে যাচ্ছে। কেননা এখানে কভার করা হবে অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার নিয়ম কানুন সম্পর্কে।
পাশাপাশি থাকবে উক্ত আবেদন সংক্রান্ত সকল তথ্য যেমন: পল্লী বিদ্যুৎ নতুন মিটারের জন্য আবেদন, অনলাইনে আবেদনের প্রসেস, পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ফি কত সেই বিষয় সহ আরো অনেক কিছু। তাই আবেদন করার পূর্বে উক্ত বিষয়ে সকল তথ্য জেনে রাখুন; যাতে করে পরবর্তীতে কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ নতুন মিটারের জন্য আবেদন করতে যে শর্ত গুলো মানতে হবে
পল্লী বিদ্যুতের মিটারের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। সে শর্তগুলো বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আপনার সুবিধার্থে সে শর্তগুলো এখানেই উপস্থাপন করা হলো:
১) যখন আবেদন করতে যাবেন তখন আপনার ছবি জাতীয় পরিচয় পত্র এবং সংযোগস্থলের খারিজের স্ক্যান কপি সাবমিট করতে হবে।
২) সংযোগস্থল থেকে সার্ভিস পোলের (খাম্বার) দূরত্ব ১৩০ ফুট এর মধ্যে হতে হবে।
৩) কঠোর নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে সার্ভিস ড্রপের দূরত্ব মাপার ক্ষেত্রে। দূরত্ব সঠিক না থাকলে যদি তারের দৈর্ঘ্য কম বা বেশি হয় বা ভুল তথ্য দিলে পরবর্তীতে সংযোগ পেতে অসুবিধা হতে পারে।
৪) আপনার বাড়িতে যদি ১৮ কিলোওয়াট এর বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় তবে এইচটি সংযোগ ব্যবহার করতে হবে।
৫) অনলাইনের সার্ভের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন – আবেদন ফি, মেম্বারশিপ ফি এবং নিরাপত্তা জামানত সহ সকল নির্দেশনা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এগুলো ছাড়াও আর কিছু নির্দেশনা ছিল যেটি এখনই প্রাসঙ্গিক নয় বলে জানানো হচ্ছে না। আর্টিকেলের পরবর্তী ধাপগুলোতে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করা রয়েছে।
কি কি ডকুমেন্টস প্রদান করতে হয়?
বরাবরের মতো, যে কোন সার্ভিস গ্রহনের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হয়। এবার অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার জন্য কি কি লাগবে সে বিষয়ে জানানো হবে।
১) আবেদনকারীর নাম, মোবাইল নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং স্থায়ী ঠিকানার বিস্তারিত।
২) বর্তমানে যেই স্থানে মিটার সংযোগ করতে চাচ্ছেন সেটির ঠিকানা।
৩) সংযোগস্থলে জমির মালিকানার তথ্য, জমির দাগ নাম্বার ও খতিয়ান নাম্বারের তথ্য দিতে হবে।
৪) আপনি যে প্রোভাইডারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে চাচ্ছেন একই প্রোভাইডারের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহারকারীর (আপনার প্রতিবেশী) গ্রাহক বই নাম্বার ও হিসাব নাম্বার এর তথ্য দিতে হবে।
৫) আপনার বাড়ির সবচেয়ে কাছে যে সার্ভিস পোল (খাম্বা) রয়েছে সেটি থেকে আপনার বাড়ির দূরত্ব ফিট আকারে মেপে দিতে হবে।
৬) আপনি বাসাতে কি কি ব্যবহার করবেন এবং সেই ডিভাইস গুলোতে কত পরিমাণ ওয়ার্ট খরচ হতে পারে তার সম্ভাব্য ধারণা দিতে হবে।
৭) বাসায় হাউজ ওয়ারিং নিশ্চয়নের জন্য গ্রাউন্ড রডের ক্যাশ মেমোর ছবি অথবা স্ক্যান কপি সাবমিট করতে হবে।
মোটামুটি এইটুকু ডকুমেন্টসগুলোতে হয়ে যাবে। এবার পরবর্তী অংশ থেকে জেনে নিন কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে কারো সংস্পর্শ অথবা দালাল ধরা ছাড়াই পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে।
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন করুন
আবেদন পদ্ধতি
অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ নতুন মিটারের জন্য আবেদন করতে, আপনি এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
- BREB এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট [http://www.rebpbs.com] এ যান।
- ওয়েবসাইটে “আবেদন করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন পরিচয়ের প্রমাণ এবং ঠিকানার প্রমাণ, ওয়েবসাইটে আপলোড করুন। কোন ডকুমেন্টস প্রয়োজন তার নির্দেশনা ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে।
- আপনার আবেদন অনলাইনে জমা দিন এবং BREB থেকে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করুন। ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই আপনার আবেদনের অবস্থা ট্র্যাক করতে পারেন।
- আবেদন অনুমোদিত হলে, BREB আপনার কাছে মিটার প্রদানের জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করবে। আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ এবং সময় জানিয়ে দেওয়া হবে SMS এর মাধ্যমে।
নিচের দেয়া ছবিটিতে ভালোভাবে লক্ষ্য করুন যেখানে যেখানে লাল রঙের স্টার চিহ্ন দেওয়া রয়েছে সেই ঘরগুলোকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
এই পর্যায়ে আপনার এলাকা অনুযায়ী জেলা ভিত্তিক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং জোনাল অফিস লিস্ট থেকে একটি সিলেক্ট করুন।
আপনার বাড়িটি যদি একক ব্যবহারের জন্য হয়ে থাকে তবে এলটিএ সিলেক্ট করুন আর আপনার বাড়িটি যদি বহুতালা কিংবা ফ্লাট আকারে হয়ে থাকে তবে এমটিএ সিলেক্ট করুন। অতঃপর ফরমেট দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্যগুলো এক এক করে পূরণ করুন।
এবার “প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সংযোগস্থলের বিবরণ” অংশে আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দেয়ার পাশাপাশি আবেদনকারী যে স্থানের জন্য বৈদ্যুতিক মিটার নিতে চাচ্ছে সেই স্থানের তথ্য প্রদান করতে হবে।
এই পর্যায়ে লোড সেকশনে আপনি আপনার বাসাতে যে সকল আইটেম ব্যবহার করবেন সেগুলো সিলেক্ট করুন সেগুলোর সংখ্যা এবং ওয়াট সম্পর্কে তথ্য প্রদান করুন। পাশাপাশি নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের স্ক্যান কপি অথবা সফট কপি আপলোড করুন।
বিঃদ্রঃ আপলোডকৃত ডকুমেন্টসের ক্ষেত্রে
ছবি (300*300 পিক্সেল) সর্বোচ্চ 150 KB
জাতীয় পরিচয়পত্র (600*475 পিক্সেল) সর্বোচ্চ 300 KB
খারিজ বা জমির উত্তরাধিকার সনদ, সর্বোচ্চ 700 KB
সবশেষে শর্তাবলির বিস্তারিত তথ্যের অংশে টিক মার্ক দিয়ে আবেদনটি সম্পন্ন করুন।
হাউস ওয়ারিং নিশ্চয়ন
আবেদন করার শেষে আবেদনরত পত্রটি সংরক্ষণ করে রাখুন এক্ষেত্রে আবেদনে থাকা ট্রাকিং নাম্বার ও পিন নাম্বার পাবেন যেগুলো ছবি তুলে অথবা প্রিন্ট আউট করে নিজের কাছে রাখতে পারেন।
সংরক্ষিত ট্রাকিং নাম্বার এবং পিন নাম্বার ব্যবহার করে আপনার আবেদনের হাউজ ওয়ারিং নিশ্চিত করুন। এক্ষেত্রে একই ওয়েবসাইটের মেনু অপশন থেকে হাউজ ওয়ারিং নিশ্চিত করুন লিংকে ক্লিক করে ট্রাকিং নাম্বার এবং পিন নাম্বার দিয়ে সাবমিট করুন।
এরপর গ্রাউন্ড রডের ক্যাশ মেমরিটি আপলোড করতে বলা হবে। সেটাতে প্লটের পর বাড়ির ঠিকানা লিখুন এবং ক্যাপচা কোড কমপ্লিট করে সম্পন্ন বাটনে ক্লিক করুন। হয়ে গেলে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
সংযোগ ফি পরিশোধ করার নিয়ম
সবশেষে আপনাকে মিটারের আবেদনের Fee পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে নগদ অর্থ পরিশোধ করতে পারেন অথবা রকেটের মাধ্যমেও করতে পারেন। নিম্মে দেয়া ছবিটিতে রকেটে কিভাবে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার এর ফি প্রদান করবেন তার বিস্তারিত দেওয়া রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ফি কত
মূলত পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ফি মাত্র ১১৫ টাকা; যা রকেট একাউন্ট থেকে বিল পে অপশন থেকেই পরিশোধ করা যাবে।
ইতিকথা
এই ছিলো পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন প্রক্রিয়া। যেখানে কেবল আবেদনের নিয়মই নয় বরং তার সাথে আনুষাঙ্গিক তথ্য যেমন: আবেদন করতে কি কি কাগজ লাগবে? আবেদন ফি এবং তা জমা দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কেও জানানো হয়েছে। আশা করি, আপনি নিয়মটি অনুসরণ করে খুব সহজেই একটি মিটারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ধন্যবাদ।