ড্রাইভিং করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুমতিপত্র। সকল প্রকার ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। কিন্তু বেশিরভাগ গাড়ি চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম কানুন না জানায় দালালদের দ্বারা প্রতারিত হন। আজকের এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়লে আপনি নিজেই ঘরে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি?
ড্রাইভিং লাইসেন্স একপ্রকার অনুমতিপত্র যা থাকলে আপনি সড়কে বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য জায়গাতে গাড়ি চালাতে পারবেন। বাংলাদেশ মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী সড়কে বা যে কোন জায়গাতে গাড়ি চালাতে হলে আপনার অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।
যেসকল চালক গাড়ি চালাতে দক্ষ কেবলমাত্র তারাই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য। অর্থাৎ ড্রাইভিং লাইসেন্সকে দক্ষ চালকদের পরিচয়পত্র বলা যেতে পারে।
অপেশাদার ও পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পার্থক্য কি?
ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরণ দুইটি যথা; অপেশাদার এবং পেশাদার। এবং লাইসেন্সের শ্রেণী হল তিনটি- হালকা, মাঝারী ও ভারি। আপনি যদি ড্রাইভিং শিখে হালকা ধরণের গাড়ি নিজেই চালাতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সই যথেষ্ট।
কিন্তু যদি ড্রাইভিংকে পেশা হিসাবে নিতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই পেশাদার লাইসেন্স করতে হবে।
অপেশাদার ও পেশাদার উভয় লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া একই রকম। আপনাকে প্রথমে লার্নার করতে হবে, তারপর অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরে আপনি লাইসেন্স পাবেন। তবে মূল পার্থক্য হলো পেশাদার লাইসেন্সে শ্রেণী পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু অপেশাদার লাইসেন্সে আপনি শ্রেণী পরিবর্তন করতে পারবেন না।
অনেকেই মনে করে পেশাদার লাইসেন্স করলে একবারে ভারি লাইসেন্স পাওয়া যায়, এটি ঠিক না। শুরুতে সবাইকে হালকা শ্রেণীর লাইসেন্স দেওয়া হয়, পরবর্তীতে পেশাদার ড্রাইভারদের ভারী লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আরো দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে ৫ বছর। এর জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয় এবং বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। অন্যদিকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে ১০ বছর, পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয় না এবং বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হলেই চলে।
কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হয়?
পেশাদার বা অপেশাদার, যে কোন ধরণের লাইসেন্স প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করা। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
১। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
আপনি বিআরটিএ-র যে সার্কেলের আওতাভুক্ত সেই সার্কেলের অফিসে আবেদন করলে আপনাকে একটি শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিবে। এই লাইসেন্স নিয়ে আপনি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।
লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া হিসাবে সাধারণত ২/৩ মাস পরে আপনাকে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে অংশগ্রহণ করতে হবে। তবে এই সময়টা ক্ষেত্র বিশেষ আরো অনেক লম্বা হতে পারে।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের আবেদন করার সময় আপনাকে নিম্নলিখিত কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে-
- বিআরটিএর নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ এবং সেটি পূরণ করে আবেদন।
- রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- সদ্য তোলা ০৩ কপি স্ট্যাম্প ও ০১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- ১ ক্যাটাগরির জন্য ৩৪৫ টাকা ও ২ ক্যাটাগরির জন্য ৫১৮ টাকা নির্ধারিত ফি বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
সবগুলো কাগজ জমা দিয়ে লার্নার নেওয়ার পরে নির্ধারিত পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হলে তবেই আপনি লাইসেন্স প্রাপ্তির পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করবেন। এই সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ফি প্রদানের মাধ্যমে আপনি স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করার সময় আপনাকে লার্নারের মূল কপি সঙ্গে আনতে হবে।
২। স্মার্টকার্ড লাইসেন্স করার নিয়ম
স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং এর সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ৫ বছরের নবায়ন ফি সহ মোট ১৬৮০ টাকা এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১০ বছরের নবায়ন ফি সহ মোট ২৫৪২ টাকা প্রদান করতে হয়। এছাড়া আর যে কাগজপত্রগুলো লাগবে সেগুলো নিম্নরূপ-
- বিআরটিএ এর নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
- সদ্য তোলা ০১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- নির্ধারিত ফি বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের সময় গ্রহকের ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে কার্ড ইসু করা হয়। এর প্রিন্টিং হয়ে গেলে গ্রাহককে মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে কার্ড গ্রহণের বিষয়টি জানানো হয়।
আরো পড়ুনঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়েছে কিনা কিভাবে জানবো?
শ্রেণী অনুযায়ী পেশাদার লাইসেন্স পাওয়ার শর্তগুলো কি কি?
লাইসেন্সের শ্রেণী অনুযায়ী পেশাদার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে-
হালকা: সাধারণত ২৫০০ কেজি এর নীচের ওজনের মোটরযান গুলোকে হালকা শ্রেণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রার্থীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২০ বছর।
মাঝারি: মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি হলে সেগুলোকে মধ্যম বা মাঝারি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একটি পেশাদার মাঝারি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রার্থীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৩ বছর। পেশাদার হালকা লাইসেন্স ব্যবহারের সময়সীমা কমপক্ষে ৩ বছর হতে হবে।
ভারি: ৬৫০০ কেজি এর অধিক ওজনের মোটরযানকে ভারি শ্রেণীর মধ্যে বিবেচনা করা হয়। পেশাদার ভারি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রার্থীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৬ বছর। পেশাদার মাঝারি ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের সময়সীমা কমপক্ষে ৩ বছর হতে হবে।
এক কথায় বলা যায় একজন ব্যক্তি যদি পেশাদার ভারী লাইসেন্স করতে চায়, তাহলে প্রথমে তাকে পেশাদার হালকা লাইসেন্স নিতে হবে। কমপক্ষে এর ৩ বছর পরে পেশাদার মাঝারি এবং তারও কমপক্ষে ৩ বছর পরে সে পেশাদার ভারী লাইসেন্স পাবে।
শেষ কথা
কথা হচ্ছিল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম কানুন নিয়ে। একজন ড্রাইভারের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুমতিপত্র। সঠিক নিয়ম জেনে ড্রাইভিং লাইসেন্স করলে ভোগান্তির পাশাপাশি সময় ও খরচ দুইটাই কমে যাবে। প্রযুক্তির সাথে থাকুন, ট্রিক ব্লগ বিডির সাথেই থাকুন।