ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ২য় পর্ব

ভয়ংকর পাতালপুরী” একটি ভৌতিক গল্প। এটি মোঃ আরিফ হোসেনের একটি বিশেষ ধারাবাহিক গল্প। ট্রিক ব্লগ বিডিতে এই গল্পটির একেকটি পর্ব প্রতি শনিবার দুপুর ২ টায় প্রকাশিত হবে। আজকে হচ্ছে ভয়ংকর পাতালপুরী ২য় পর্ব

ভৌতিক গল্প- ভয়ংকর পাতালপুরী (২য় পর্ব)
লেখক- মোঃ আরিফ হোসেন

আমরা কতো নিচে নেমে এলাম কে জানে? কিন্তু বুঝতেছি অনেকটা দূরেই নেমেছি। কমচে কম ২০০০ ফুট তো হবেই। আর পায়ের তলায় যেটাকে মাটি মনে করছি তা মাটি নয়। মালাকাইট পাথরের আস্তরণ। এই মালাকাইট আছে বলেই মাটির এতো গভীরেও আমরা পানিতে না ভেসে দাঁড়িয়ে আছি কিছু একটার মধ্যে। দুনিয়াজোড়া খ্যাতি এই মালাকাইটের। অথচ আজকে আমার পায়ের নিচে।

পাবেল বাঝোভের লেখা ‘মালাকাইটের ঝাঁপি’ বইয়ে পড়েছিলাম এই মালাকাইট নিয়ে। বইটাতে তামা ঠাকুরুনের পাহাড়ের তলায় মিলে এই মালাকাইট। শ্রমিকরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মাটির গভীর থেকে মালাকাইট বের করে । আজকে আলুটিলা গুহার ভেতরে, পাতালপুরীতে মিলেছে এই মালাকাইট।

না জানি প্রত্নতাত্ত্বিকরা এটার সন্ধান পেলে কি করবে।
আমরা তিনজনই অক্ষত অবস্থায় আছি। আর মজার বিষয় হলো, এতো নিচে নামার ফলেও আমাদের অক্সিজেন প্রবাহের সমস্যা হচ্ছে না।
রাকিব বললো, ‘মোহন দ্যাখ্ কত ছোট ছোট ঘর। তাছাড়া দ্যাখ্ এখানেও আমাদের বাহিরের জগতের মতই। বটগাছ, তুলসীগাছ, কদমগাছ আর ওই পাথুরে ঢিবিটার দিকে তাকা, একটা উজ্জ্বল গাছ দেখা যাচ্ছে।’ আমি বললাম, ‘তবে চল ওই গাছের কাছেই যাওয়া যাক।’

ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ২য় পর্ব

গাছটা আমাদের এলাকার সোনালেসু গাছের মতো। লতানো ডাল। আগায় গোলাপি রঙের ফুল। তবে ফুলের আকার সূর্যমুখী ফুলের মতো। গাছটাকে দেখে বিস্ময় বেড়ে গেলো। লতানো গাছ, অথচ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তাও আবার কতোবড় একটা ফুল নিয়ে।

-এই মোহন এই,
হ্যাঁ বলো।
-এই আমরা কি সেই দেবতার পাতালপুরীতে চলে আসছি নাকি রে?
হতে পারে। দ্যাখ্ এখানে সবকিছু অদ্ভুত। আমার খুব ভয় লাগছে রে।
-ভয় করিস না। মনে সাহস রাখ। আমাদের কপালে যা আছে তাই হবে। এতক্ষণও যেহেতু অক্ষত আছি। আরো কিছুক্ষণ থাকবো হয়তো। তার আগে আমাদের খুঁজতে হবে এখান থেকে বেরোবার পথ।

কিভাবে বের হবি? আমরা তো উপর থেকে সোজা টুপ করে পড়ে গেছি।
-নিশ্চয়ই একটা পথ আছে। আশেপাশে খুঁজে দেখতে হবে।
মোহন আর আমার কথা প্রায় শেষ। এর ভিতরে রাকিব ঘটালো আহম্মকি ঘটনা। সে যেয়ে ফুলটা ছিঁড়তে ধরছে, অমনি থরথর করে কেঁপে উঠলো পাতালের মালাকাইটের জমিন। বড় বড় মালাকাইটের চাই ছুটে আসতেছে আমাদের দিকে। আর মেঘের গর্জনের মত কানফাটা শব্দ ছুটে আসছে।
‘পালা শিগ্রী পালা, নয়তো মারা পড়বি।’ আনমনে চেঁচিয়ে উঠলাম।

মোহন কাছেই ছিল। বলল, ‘কই পালাবো’?
‘আমাকে ফলো করো।’
আমি আগে আগে দৌড়াচ্ছি। পিছনে মোহন আর রাকিব।
অনেকক্ষণ দৌঁড়ানোর পর মস্ত একটা সুরঙ্গ। এটার মুখটাও আলুটিলা গুহামুখের মতই। সাতপাঁচ না ভেবে তিনজনে হুড়মুড় করে ঢুকে যাই সুরঙ্গে।
ভিতরটা অন্ধকার হওয়ার কথা। যেমন অন্ধকার আছে আলুটিলা গুহায়। কিন্তু কই! এখানকার সবকিছুই যেন উল্টো। এই সুরঙ্গে অন্ধকারের পরিবর্তে উজ্জ্বল আলো। তবে আলোটা ফুটে উঠছে জমিন থেকে। সুরঙ্গের বাহিরে ছিলো কালো মালাকাইট। কিন্তু ভিতরে এগুলো কি? নিজের মুখটা দেখা যাচ্ছে জমিনে। হীরা নাকি? প্রশ্ন করলো মোহন।

আরে না। হীরা কি আর এখানে আছে? এগুলো হয়তো কাঁচ জাতীয় কোন কিছু। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখ, যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই এগুলো। এতো হীরা কি আর দুনিয়ায় আছে? আমার কথা শেষ না হতেই রাকিব বললো, আরে কি বলিস? আমরা কি আর আমাদের দুনিয়ায় আছি? এটা ভয়ঙ্কর পাতালপুরী। এখানে নানান উদ্ভুত জিনিস দেখবি।

ইস! এসময় যদি আমাদের কাছে একটা ‘লোপ’ থাকতো? লোপ হলো বিশেষ ধরনের ম্যাগনিফাই গ্লাস। যা মহামূল্যবান পাথর পরিক্ষা করতে সাহায্য করে। লোপ না হয় নাই পেলাম। একটা মূল্যবান জিনিস আমার রুমেই আছে। শিরিষ কাগজ।

শিরিষ কাগজ দিয়ে হীরা ঘষলে কোন দাগ পড়ে না। এটা খুব কঠিন পদার্থ। কিন্তু এখানে কোথায় পাব সেই মূল্যবান কাগজ?
তবে বর্তমান একটা পরীক্ষা আছে। হীরা তাপ ধরে রাখে না। এই সূত্রে একটা পরীক্ষা করা যায়। আমি নিচু হয়ে হীরার চাইয়ের উপর জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লাম। এখানেই আসল হীরা আর নকল হীরা চেনার উপায় আছে।

হীরার উপর আমাদের নিশ্বাস এক ধরনের কুয়াশা তৈরি করে। যদি নকল হীরা হয় তাহলে কুয়াশা বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। আর আসল হীরা হলে কুয়াশা লেগেই থাকবে অনেকক্ষণ। আমার এক্সপেরিমেন্ট সাকসেস। তার মানে এটা আসল হীরা। আমরা তিনজনের চোখ ছানাবড়া।

রাকিব বললো, দ্যাখ্ এখান থেকে এক কেজি হীরা আমরা দুনিয়ায় নিয়ে যাবো। তারপর আর আমাদের পায় কে? রাকিবের কথা শুনে মোহন মাথায় একটা টুক করে থাপ্পড় দিয়ে বললো, এই হারামি। আগে তো এখান থেকে বের হ। এই পাতালপুরী হয়তো আমাদের শেষ ঠিকানা। হতে পারে আর কখনোই এখান থেকে বের হবো না।

আমি বললাম, এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। কারণ পৃথিবীর বেশিরভাগ রহস্য লুকিয়ে থাকে হীরার মধ্যে। যা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেও বুঝতে পারে না। দেখবি আর কতক্ষণের মধ্যেই আমরা এই হীরার তাপে গলে হীরার সাথে মিশে গেছি। অথবা ধারালো হীরার চাইয়ে আমরা টুকরো টুকরো হয়ে গেছি। কাজেই এখান থেকে অন্য কোথাও যেতে হবে। আর মোটকথা হলো, আমাদের ফেরত যাওয়ার পথ খুঁজতে হবে।

রাকিব বললো, বন্ধু একটু খেয়াল করে দ্যাখ্, অনেকক্ষণ ধরে আছি। অথচ, এটা প্রেতপুরী হলো আত্মারা থাকতো। বা দেবতাপুরী হলে দেবতারা বড় বড় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু কই? কিছুই তো না?
হয়তো আছে। চলো সামনে যাওয়া যাক্…

২য় পর্ব এখানেই শেষ। ৩য় পর্ব আসবে আগামী শনিবার দুপুর ২ টায়।

অন্যান্য পর্বের লিংক-

ডিসক্লেইমার

“ভয়ংকর পাতালপুরী” একটি কাল্পনিক ভৌতিক গল্প। বাস্তবের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যদি কোনো ব্যক্তি, স্থান, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সাথে মিলে যায় এটি নেহাতই কাকতালীয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top