ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ৩য় পর্ব

ভয়ংকর পাতালপুরী” একটি ভৌতিক গল্প। এটি মোঃ আরিফ হোসেনের একটি বিশেষ ধারাবাহিক গল্প। ট্রিক ব্লগ বিডিতে এই গল্পটির একেকটি পর্ব প্রতি শনিবার দুপুর ২ টায় প্রকাশিত হবে। আজকে হচ্ছে ভয়ংকর পাতালপুরী ৩য় পর্ব

ভৌতিক গল্প- ভয়ংকর পাতালপুরী (৩য় পর্ব)
লেখক- মোঃ আরিফ হোসেন

…পাতাল সুরঙ্গের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। কি জানি কি আছে সামনে। এমন এক জায়গায় এলাম, এখান থেকে ফেরার রাস্তাও নাই।

হঠাৎ করেই চিলির সান খোসের স্বর্ণখনির কথা মনে পড়ে গেল। আস্ত বুর্জ খলিফা ধরে যাবে এই খনির মধ্যে। প্রায় ২,৭২২ ফুট গভীর এই খনি। ২০১০ সালে ৫ আগষ্টে এই সোনার খনির দুর্ঘটনায় ৩৩ জন কর্মী ৬৯ দিন পর্যন্ত আটকা পড়েছিল এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে তাঁদের সফল ভাবে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদেরকেও কি কেউ উদ্ধার করবে?
নানান চিন্তা মাথায় আসছে।

ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী”

আমরা সুরঙ্গের অপর মাথা দিয়ে বেরিয়ে যাই। কি চমৎকার গ্রাম! চোখ ঝলসে যায়। পাতালপুরীতে মেঘরাজ্য থাকবে, ফুলবাগান থাকবে, বাগানে ছোট ছোট শিশুরা খেলা করবে, এমনকি বরফগলা নদী থাকবে তা কখনো কল্পনাও করি নাই।

আমরা বাগানে ঢুকে পড়লাম। কে জেনো বলেছিল, যদি জোটে একটি ফল
তবে ছিঁড়ে খেও ক্ষুধার লাগি।
যদি জোটে দুটি ফল
তবে একটি খেও আর একটি
পরে খাওয়ার জন্য রাখিও হে অনুরাগী।
কে বলেছিল এই কথা? এখন ক্ষুধার্ত। তাই মাথাটাও এলোমেলো লাগছে। রাকিবকে কি জিগ্যেস করবো? না থাক্। আমরা ফলের বাগানে ঢুকে গেলাম।

কিন্তু একি! এখানে বাচ্চারা খেলার পরিবর্তে মারামারি করছে। এইতো হাত দুই সামনেই একটা বাচ্চা মার খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। গলা ফেটে সাদা কিছু বের হচ্ছে। কি ওগুলো? রক্ত নাকি? হতে পারে। শুনেছি দেবতাদের রক্ত সাদা হয়। রাকিব পড়িমরি করে বাচ্চাটাকে তুলে দাঁড় করালো। অবাক কান্ড! বাচ্চাটা দাঁড় হয়েই রাকিবকে বেধড়ক প্রহার। তার দেখাদেখি ছুটে এলো আরো কয়েকজন বাচ্চা।

পালা পালা, শিগগির পালা। তিনজনে প্রাণপণে ছুটছি। কি আজব এক দুনিয়ারে বাবা। না দুনিয়া না। পাতালপুরী। আজব আর ভয়ানক পাতালপুরী। এখানে সবকিছু উল্টো চলে। বাচ্চারা শান্তশিষ্ট স্বভাবের হয়। অথচ, এখানে বাচ্চারা মারমুখী। উপকারীর উপকার স্বীকার না করে উপরোক্ত তার ক্ষতি করে।

অনেক দূরে দৌড়ে গেলাম। সামনে ছোট একটা কুঁড়েঘর। দেখতে আড়াই চালা। আড়াই চালা মানে দুদিকে দুটো বড় চাল আর একপাশে ছোট চাল। অন্যদিকে খালি। ঘরটাতে ঢুকে জোরেশোরে শ্বাস নেই। কি অস্বাভাবিক কান্ডকারখানা।

“মোহন শোন, রাকিব শোন। আমি জোরে শ্বাস নিয়ে কথা বলা শুরু করি।
বাগানের ওগুলো আসলে বাচ্চা নয়। হতে পারে বাচ্চার মতো। দুষ্ট দেবতার দল। আমাদেরকে ওঁরা যেভাবে তারা করলো তাতে মনে হলো ওরা বাচ্চা নয়।”

মোহন: হতে পারে। কারণ দেবতাদের মাঝে ভালোমন্দ থাকে। দুষ্ট দেবতা থাকে, নষ্ট দেবতা থাকে, কষ্ট পাওয়া ধধদেবতা থাকে, ভালো দেবতা থাকে। এমনকি আমাদের দুনিয়ার মতো মাতাল দুচারটা দেবতাও থাকে।
রাকিবের সবসময় খাই খাই স্বভাব। এই কুঁড়েঘরে ছোট একটা টেবিল সাজানো নানান ফলমূল দিয়ে। তবে একেক ফলের রঙ একেক। কোনটা বাদামি লাল তো কোনটা কালচে সবুজ। তবে কোন ফলই বেমানান নয়৷ কি জানি, কার জন্য সাজানো এই ফল।

রাকিব সাতপাঁচ না ভেবে যেই না ফলে হাত দিচ্ছে, ও বাবা রে, ও মারে, মরে গেলাম রে বলে অস্থির। আমি আর মোহন তাড়াতাড়ি ওর কাছে যাই। গিয়ে তো চক্ষু ছানাবড়া। রাকিব খরমুজা আকৃতির একটা ফলে যেই হাত দিছে অমনি তা ছাইয়ে পরিনত হয়েছে। আর রাকিবের হাত ব্যথায় অবশ হয়ে গেছে। অবশ হওয়ার কারণ হলো, ছাইগুলো তো ছাই নয়, আস্ত বোলতার হুল। বোলতার হুল বিঁধলে যেমন ব্যথা হয়, জ্বালা করে, তেমনি ব্যথা পেয়েছে রাকিব।

আগেই অনেকবার দেখেছি, এখানে সবকিছু অস্বাভাবিক। একটু খাওয়ার ফলমূল। সেগুলোও কেমন জানি বিদঘুটে।
আমরা কুঁড়ে থেকে বের হই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, হাজারটা চোখ আমাদের গিলে খাচ্ছে। কোন অজানা শক্তি যেন আমাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।

এখান থেকে যেভাবেই হোক বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে।
আমরা খুব ধীরে, পা টিপে টিপে হাঁটছি। যেমন করে বিড়াল হাঁটে। তবে বিড়াল দৌঁড়ালেও তার পায়ের কোন শব্দ হয় না। কারণ তার পায়ে আছে আলাদা মাংসপিণ্ড। যা নরম আর তুলতুলে।

সামনে একটা বটগাছ। না বটগাছ না। বটগাছের মতই দেখতে। শিকড়গুলো বটগাছের শিকড়ের মতো। আর গাছের শাখাপ্রশাখা সহ পাতাগুলো বিভিন্ন গাছের মতো। এইরকম গাছ দুনিয়ার কোথাও হয়তো নাই।
গাছটার কাছে যেতেই যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।

গাছের শিকড়ে ছড়িয়ে আছে রুপোর কাচা টাকা। চকচকে টাকাগুলো থেকে রুপোর ঝলক ঝলমলে পড়ছে। রাকিব কুড়াতে গেল।
‘এই রাকিব এই, থাম্। এগুলো টাকা নয়।’ আমি জোরে তাকে থামলাম।
‘তাহলে কি এগুলো? টাকাই তো’।

না ওগুলো টাকা নয়৷ একটু খেয়াল করে দ্যাখ্ এখন পর্যন্ত এই দেবতার পাতালপুরীতে এসে আমরা দেবতার সামনে পড়ি নাই। আর ওরাও আমাদের সামনে আসে নাই। অথচ ওরা আমাদেরকে তুরুপের তাস বানিয়ে রেখেছে। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই কোন না কোন খেলা খেলছে আমাদের সাথে। ওখানে বাচ্চাগুলো আমাদের তাড়া করলো। হতে পারে দেবতারাই বাচ্চার সুরত ধারণ করেছে। এবার আর আমরা ওদের পাতানো ফাঁদে পা দিব না। আয় আমার সাথে।

রাকিব আর মোহন কথা না বলে আমার পিছে পিছে হাঁটে। কিন্তু কোথায় যাবো?

৩য় পর্ব এখানেই শেষ। ৪র্থ পর্ব আসবে আগামী শনিবার দুপুর ২ টায়

অন্যান্য পর্বের লিংক-

ডিসক্লেইমার

“ভয়ংকর পাতালপুরী” একটি কাল্পনিক ভৌতিক গল্প। বাস্তবের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যদি কোনো ব্যক্তি, স্থান, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সাথে মিলে যায় এটি নেহাতই কাকতালীয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top