ওয়েব হোস্টিং কাকে বলে?
ওয়েব হোস্টিং নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমে জানতে হবে ওয়েব হোস্টিং কাকে বলে? উইকিপিডিয়া মতে “একটি ওয়েব হোস্টিং পরিষেবা এমন একটি ইন্টারনেট হোস্টিং পরিষেবা যা ব্যক্তি এবং সংগঠনগুলিকে তাদের ওয়েবসাইটকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে অ্যাক্সেসযোগ্য করতে দেয়। “
অর্থাৎ ওয়েব হোস্টিং হচ্ছে একটি স্পেস/জায়গা যাতে ওয়েবসাইটের মালিকেরা তাদের ওয়েব কন্টেন্ট জমা রাখে। ওয়েবসাইট খুলতে গেলেই আপনার একটি হোস্টিং সার্ভিস লাগবে। আপনার সাইটের ফাইলগুলো সেখানে জমা থাকবে।
ওয়েব হোস্টিং কেন প্রয়োজন?
আপনি ওয়েবসাইটে যাই আপলোড করবেন তা আপনার হোস্টিং সার্ভারে সেভ থাকবে। আমাদের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক যেমন কাজ কতে হোস্টিংও ঠিক একই রকম কাজ করে।
হোস্টিং কত প্রকার?
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে হোস্টিং কত প্রকার? ওয়েব হোস্টিং কয়েক ধরণের হয়ে থাকে। নিচে হোস্টিংয়ের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো।
ফ্রী ওয়েব হোস্টিং (Free web Hosting)
ওয়েব হোস্টিংয়ের মধ্যে ফ্রী হোস্টিং (Free Hosting) অন্যতম। এই হোস্টিং প্যাক উপভোগ করতে হলে আপনাকে কোন প্রকার মূল্য পরিশোধ করতে হবেনা। সম্পূর্ণ ফ্রীতেই আপনি হোস্টিং সুবিধা পাবেন।
ফ্রী হোস্টিংয়ের সীমাবদ্ধতা
ফ্রী হোস্টিংয়ের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফ্রী সার্ভিস মানেই কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়। যার কারণেই মানুষ পেইড সার্ভিস ব্যবহার করে।
যেহেতু এটি ফ্রী সার্ভিস তাই এতে কিছু লিমিটেশন আছে। এখানে ব্যান্ডউইথ (Bandwidth), মাসিক ভিজিটর (Monthly visitor), ডিস্ক স্পেস (Disk space) ইত্যাদির লিমিট থাকে। যা অতিক্রম করে গেলেই সাইটে সমস্যা দেখা দেয়।
তখন সাইটে ভিজিট করা সম্ভব হয়না। নতুন কন্টেন্ট আপলোড করা যায়না ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল হতে পারে। কোন কারিগরি ত্রুটি হলে হোস্টিং কোম্পানি থেকে কোনো সাহায্য পাবেন না।
ফ্রী হোস্টিং কেন ব্যবহার করবেন?
সীমাবদ্ধতা থাকলেও ফ্রী হোস্টিংয়ের উপকারীতাও আছে। আপনি যদি প্রফেশনাল ব্লগিং শুরু করতে চান তাহলে আপনার সাইট পরিচালনা শিখতে হবে। আবার সাইট পরিচালনা করতে কোন সমস্যায় পড়লে তা সমাধান করতে হবে।
আপনাকে ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress) সম্পর্কে জানতে হবে এবং ওয়ার্ডপ্রেস সাইট চালানো শিখতে হবে। ফ্রী হোস্টিং সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি সেইসব দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
আপনি পরীক্ষামূলকভাবে কোন টাকা খরচ না করেই ফ্রী হোস্টিং ব্যবহার করে একটা সাইট খুলতে পারেন। সেই সাইট কয়েক মাস চালাতে চালাতে ব্লগিং সম্পর্কে আপনার ভালো একটি ধারণা হয়ে যাবে।
তখন ভালো হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং কিনে প্রফেশনালভাবে ব্লগিং শুরু করতে আপনার অনেক সহজ হবে। আর ব্লগ থেকে আয়ও করতে পারবেন। তাই ফ্রী হোস্টিং খুবই দরকারি।
ফ্রী হোস্টিং প্রোভাইডার (Free Hosting provider)
শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting)
সবচেয়ে জনপ্রিয় হোস্টিং হচ্ছে শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting)। বিশ্বের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটই শেয়ারড হোস্টিং ব্যবহার করে।
প্রফেশনাল ওয়েবসাইটে যে যে সার্ভিস বা সুবিধা দরকার প্রায় সবকিছুই শেয়ারড হোস্টিংয়ে পাওয়া যায়। এর বিশেষত্য হচ্ছে এই প্যাকে একই সার্ভারে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ডাটা বা কন্টেন্ট জমা রাখতে পারে। তাই এর মূল্য খুব কম হয়ে থাকে।
তবে শেয়ারড হোস্টিংয়েও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ফ্রী হোস্টিংয়ের মতো এখানে ইমেইল, ব্যান্ডউইথ, ডাটাবেইজ ইত্যাদি ব্যবহারের লিমিট আছে। তবে এটি ফ্রী হোস্টিংয়ের চেয়ে বেশি। আর একটা মধ্যম মানের সাইট চালানোর জন্য যথেষ্ঠ।
শেয়ারড হোস্টিংয়ে সিকিউরিটি মধ্যম মানের হয়। আপনি যেকোনো মূহুর্তে টেকনিকাল সমস্যায় পড়লে হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারবেন। তাছাড়া চাইলেই যেকোন মূহুর্তে হোস্টিং প্যাক আপগ্রেড করা যায়।
Verpex Hosting কোম্পানিও পেইড হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের থেকে শেয়ার্ড & ডেডিকেটেড হোস্টিং নিতে পারেন।
রিসেলার হোস্টিং (Reseller Hosting)
রিসেলার হোস্টিং (Reseller Hosting) মূলত নিজের ডিস্ক স্পেস অন্যের সাথে শেয়ার করা। আপনি আপনার কেনা সার্ভারে অন্য কাউকে ফাইল রাখার অনুমতি দিয়ে তার বিনিময়ে টাকা নিবেন। এটাই রিসেলার হোস্টিং।
এখানে হোস্টিং প্যাক দুইবার বিক্রি হয়। আপনি নিজে একবার কিনেন। আবার আপনি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করেন।
ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting)
ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting) খুবই ব্যয়বহুল। যদি কোন ওয়েবসাইটের আকার খুবই বড় হয় এবং সবসময়ই ভিজিটরের পরিমাণ খুব বেশি থাকে তাহলে তাদের ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভারের প্রয়োজন হয়। যেমনঃ গুগল, ফেসবুক ইত্যাদি।
ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা ভিজিটর খুব বেশি হলে শেয়ারড হোস্টিং সার্ভিজ সেই চাপ কন্ট্রোল করতে পারেনা। ফলে সাইট ডাউন হয়ে যায়। তাই ডেডিকেটেড সার্ভার দরকার হয়।
এই সার্ভারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই কঠোর হয়। তবে মেইন্টেনেন্স অনেক ঝামেলার হয়ে থাকে। ওয়েব সম্পর্কে অনেক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। ডেডিকেটেড হোস্টিং আবার ২ প্রকার।
ম্যানেজড হোস্টিং (Managed Hosting)
আপিনি যদি ম্যানেজড ওয়েব হোস্টিং ব্যবহার করেন তাহলে হোস্টিং কোম্পানিই আপিনাকে সব করে দিবে। আপনার তেমন কিছু করতে হবেনা। যেমনঃ সার্ভার মেইনটেনেন্স, কনফিগারেশন, সার্ভার স্টোপ, সফটওয়্যার ইন্সটল ইত্যাদি।
আনম্যানেজড হোস্টিং (Unmanaged Hosting)
আনম্যানেজড হোস্টিং সার্ভিসে আপনার কাছে সার্ভারের ফুল কন্ট্রোল থাকবে। মেইনটেনেন্স, কনফিগারেশন, সার্ভার স্টোপ, সফটওয়্যার ইন্সটল ইত্যাদি আপনার নিজেকেই করতে হবে। এতে আপনার অনেক খরচ বেঁচে যাবে।
ভিপিএস হোস্টিং কি?
ভিপিএস হোস্টিং হচ্ছে ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (Virtual Private Server) VPS। ভিপিএস হোস্টিং শেয়ারড হোস্টিং আর ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের মাঝামাঝি। শেয়ারড হোস্টিংয়ে একই সার্ভারে হাজার হাজার সাইট হোস্ট করা থাকে।
আর ডেডিকেটেড সার্ভারে শুধুমাত্র আপনার সাইটই হোস্ট করা থাকে। ভিপিএস হোস্টিংয়ে একটা ডেডিকেটেড সার্ভার অল্প কয়েকজনকে ভাগ কিরে দেওয়া হয়।
ওয়েব হোস্টিং এর দাম
ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডাররা বিভিন্ন মূল্যে হোস্টিং বিক্রি করে থাকে। এখানে বিভিন্ন প্যাকেজ থাকে। ৫০০ এমবি প্যাক থেকে শুরু করে ১০০ জিবি পর্যন্তও প্যাক থাকে। যা বাৎসরিক ৫০০ টাকা-১০০০০ টাকাও হয়ে থাকে।
তবে হোস্টিং কিনার সময় ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে হোস্টিং কিনতে হবে। তা না হলে অনেক ঝামেলায় পড়বেন। আমার ব্লগে ইতোমধ্যেই ডোমেইন এবং হোস্টিং ক্রয় নিয়ে একটি ভালো পোস্ট আছে। সেটা দেখে নিতে পারেন। আশা করি উপকারে আসবে।
আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি হচ্ছে ব্লুহোস্ট। ব্লুহোস্ট এর হোস্টিং কিনুন আর নিশ্চিন্তে থাকুন। তাদের কোটি কোটি গ্রাহক আছে। তাই আপনিও কিনত্ব পারেন।
আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানের বাংলাদেশি হোস্টিং প্রোভাইডার হচ্ছে সাইবার ডেভেলপার বিডি। তারা খুবই ভালো মানের হোস্টিং সার্ভিস অরদান করে। আপনি চাইলে এখানে ক্লিক করে তাদের হোস্টিং প্ল্যান দেখে নিতে ও কিনতে পারেন।
লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। তাহলে আমরা উৎসাহ পাব। আর কোনো প্রশ্ন থাকলেও জিজ্ঞেস করতে পারেন।
thanks bro
আপনাকেও ধন্যবাদ