কৃমি একটি অতি পরিচিত ও সাধারণ নাম। কিন্তু কৃমির সমস্যাকে ছোট বা সাধারণভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কৃমির কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সময়মতো এর চিকিৎসা করানো জরুরি। আর তাই আজকে আমরা কৃমি কি? এর লক্ষণ, ক্ষতিকর দিক ও কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
কৃমি কি?
কৃমি মানুষের দেহে বসবাসকারী একটি পরজীবি। এরা সাধারণত মানুষের অন্ত্রে বাস করে। একইসাথে এরা মানুষের শরীরের পুষ্টি ও রক্ত শোষণ করে বংশবিস্তার করে।
কৃমি কি ক্ষতি করে?
ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, কৃমি একটি ক্ষতিকারক পরজীবি। এটি মানবদেহের মারাত্মক রকমের ক্ষতি করতে পারে। কৃমির কারণে মানুষের শরীরে যেসব সমস্যা হতে পারেঃ
- বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া
- রক্তশুন্যতা দেখা দেওয়া
- শরীর দুর্বল লাগা
- পেট ব্যথা
- ডায়রিয়া
- পেটব্যথা
- ক্ষুধামান্দ্য
- ওজন কমে যাওয়া
- পেটফাঁপা
- অজীর্ণ
- ক্ষুদ্রান্ত্রকে বন্ধ করে দেওয়া
- অন্ত্রনালিকে ছিদ্র করা
- জন্ডিস
কৃমি কিভাবে পুষ্টিহীনতা ঘটায়?
শরীরের পুষ্টিহীনতার জন্য কৃমি ভীষণভাবে দায়ী। কৃমি শরীরের পুষ্টি উপাদান শোষণ করে শরীরকে দুর্বল করে দেয়। একইসাথে কৃমি শরীরের রক্ত শোষণ করে শরীরে রক্তস্বল্পতা তৈরি করে। যা রোগীর প্রাণ নাশের কারণও হতে পারে।
কৃমি কি কারনে হয়?
এমনি এমনি পেটে কৃমি হয়না। এর নির্দিষ্ট কিছু কারণও আছে। কৃমি বিভিন্ন উপায়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে বংশবৃদ্ধি করে।
কৃমির ডিম বিভিন্ন স্থানে যেমন বাতাস, বাথরুম, খাবার, পানি, দরজার হাতল, পশুপাখির শরীর ইত্যাদি স্থানে ছড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে নাক, মুখ ও পায়ুপথের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। আবার কৃমির লার্ভা মানুষের ত্বকের মধ্য দিয়েও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। শরীরে প্রবেশের পর এগুলো ব্যাপকভাবে বংশবিস্তার করে।
আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় ও কমে যাওয়ার কারণ
খালি পায়ে হাঁটাচলা করলে, অপরিষ্কার পরিবেশে থাকলে কৃমিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও ফল, শাক-সবজি ভালোভাবে পানি ফিয়ে না ধুয়ে খেলেও কৃমি সংক্রমণ হতে পারে।
কৃমি হওয়ার লক্ষণ
অনেক সময় আমাদের পেটে ব্যথা হলে আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়ে আমাদের সমস্যার কথা বললে, ডাক্তার আমাদেরকে তৎক্ষনাৎ বলে দেয় যে আপনার কৃমি হয়েছে। এরকম অনেক উপসর্গ রয়েছে যা আপনে দেখে বলে দিতে পারবেন আপনার কৃমি হয়েছে কি না? চলুন সেগুলো জেনে নিই।
প্রত্যেক রোগের আগে কোনো না কোনো উপসর্গ থাকে। তেমনিভাবে কৃমি হলে কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেট মোটা বা ভারি হওয়া, মুখে থুথু উঠা, খাবারে অরুচি, রক্ত স্বল্পতা, শিশুর নাক, মুখ দিয়ে কৃমি বাহির হওয়া, নাক-মুখ বা পায়ুপথে কৃমি বের হওয়া ইত্যাদি। আবার কোনো কোনো কৃমির কারনে পায়খানা রাস্তার পাশে চুলকানি হতে পারে।
কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?
ইতিমধ্যেই আপনারা জেনে গেছেন কৃমি খুবই ক্ষুদ্র একটি বিষয় হলেও এটি আমাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই কৃমি সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে।
- অপরিষ্কার ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।
- স্যান্ডেল বা জুতা পরে চলাফেরা করতে হবে।
- খাবার ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
- ফল ও শাকসবজি ভালো করে ধোয়ার পর খেতে হবে ও রান্না করতে হবে।
- নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
- পায়খানা ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
- নিয়মিত হাত পায়ের নখ কাটতে হবে।
- শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
ট্যাবলেট খেয়েও কৃমির সমস্যা দূর করা যায়। বেশিরভাগ মানুষই কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম কানুন ভালোভাবে জানেনা। তাই এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত জানানো হলো।
কৃমির ঔষধের নাম কি?
কৃমির জন্য Albendazole ও Mebendazole জেনেরিকের ঔষধ দেওয়া হয়ে থাকে। দুইটিরই খাওয়ার নিয়ম আলাদা। আমরা নিচে সাধারণ নিয়মগুলো তুলে ধরছি। যেকোনো ঔষধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আমরা শুধুমাত্র সাধারণ নিয়মগুলো তুলে ধরছি।
আরো পড়ুনঃ যেকোনো ঔষধের দাম জানার উপায়
অ্যালবেনডাজল (Albendazole): পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক সকল ব্যক্তি প্রত্যেক তিন মাসে ১ টি করে অ্যালবেনডাজল ট্যাবলেট রাতে খাওয়ার পর খেতে পারে।
মেবেনডাজল (Mebendazole): প্রত্যেক তিন মাস পরপর মেবেনডাজল ট্যাবলেট খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে পরপর ৩ দিন এই ট্যাবলেট খেতে হয়।
[বিঃদ্রঃ ঔষধ খাওয়ার নিয়মটি প্রথম আলো থেকে সংগ্রহীত]
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
কৃমি একটি নিয়মিত সমস্যা। শিশুদেরও এই সমস্যা হয়ে থাকে। সেজন্য শিশুদেরকেও নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হয়। এক্ষেত্রে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে।
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে না পরে খেতে হয়?
কৃমির ট্যাবলেট ভরা পেটে খাওয়া ভালো। এটি সাধারণত রাতে খাবার খাওয়ার পর খেতে হয়।
কৃমির ঔষধ নিয়ে ভুল ধারণা
কৃমির ঔষধ নিয়ে অনেক প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন গরমকালে কৃমির ঔষধ খাওয়া যাবেনা। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। গরমকালে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।
তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে অনেকেই মনে করে গরমকালে কৃমির ঔষধ খেলে কৃমিগুলো চাকা চাকা হয়ে শরীর ফুলে যায়। এটিও ভুল ধারণা। প্রকৃত অর্থে কৃমির ঔষধে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ফ্রীতে ডাক্তারের পরামর্শ
সাধারণ বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এখন খুব সহজ। 16263 তে কল করে ফ্রীতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়। সেখান থেকে পরামর্শ নিয়ে কৃমির ট্যাবলেট খেতে পারেন।
কৃমি সংক্রান্ত সবচেয়ে কমন বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছি। একইসাথে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম কানুন জানানোর চেষ্টা করলাম। অবশ্যই মনে রাখবেন, সকল প্রকার ঔষধ শুধুমাত্র রেজিস্টারড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।
Thanks for this useful post
amar cheler khub krimi hoy. post ti pore onek upokrito holam.
কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।