ইলিশ ধরা বন্ধ করতে পুলিশরা নিয়মিতই অভিযান চালান। এরকমই একটি ঘটনার কথা নিজের ফেসবুকে জানিয়েছেন ড়িগ্রামের পুলিশ সুপার। তার সেই স্ট্যাটাসটি নিছে তুলে ধরা হলো।
দুইদিন ছুটি আর একদিন রংপুরে মিটিংয়ে কাটিয়ে গতকাল যখন অফিসে গেলাম, তখনও অফিসের ব্যস্ততা শুরু হয়নি। ভাবছিলাম কোন থানায় যাবো। তখনই শুরু হল ম্যারাথন ফাইল দেখা, একাউনন্টস এর ঢাউস হিসাব মেলানো, চেকবই , ক্যাশ বইয়ে একগাদা স্বাক্ষর; প্রতিদিনের মত একগাদা পাসপোর্ট আবেদন এর ভেরিফিকেশন ফাইল বগলদাবা করে ডিএসবির হেড এসিসটেন্ট হাজির।
তাকে বিদায় করতে না করতেই আরও২ ,ব্যতিব্যস্ত হয়ে মেজাজটা তার উপরই ঝাড়লাম। এর মধ্যে তো অচেনা নম্বরের ফোন আছেই। তেমনই একটা ফোনে একজন অভিযোগ করলো ব্রক্ষ্মপুত্র নদীতে অবাধে জেলেরা জাল ফেলে ইলিশ ধরছে।
এর আগেও এ দিন প্ল্যান করেছিলাম নদীতে মাছ শিকার বন্ধ করতে যাবো। ফোন করলাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ দাদা খেলা। দাদা আর আমি পিএটিসি কোর্সমেট। বললাম, চলেন আজকে যাই অভিযান করি। দাদা সাথে সাথে রাজি। বললাম ১২ টায় বের হবেন, কিসের কি?
হরর হাতের কাজ শেষ করতে করতে দুপুর ১টা। ওসি কে লোক রাখার জন্য কল করে ছুটলাম চিলমারী রমনা ঘাটের দিকে। ঘাটে মাঝিসহ নৌকা রেডিই ছিল।নৌ পুলিশের ফোর্স, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা সহ ছুটলাম ছইওয়ালা নৌকায়। ইলিশ নিধন বন্ধ করতে এসে পড়লাম ইলশেগুড়ি বৃষ্টির কবলে।
নৌকা চলছে বিশাল ব্রক্ষ্মপুত্রের বুকে। পাকা শিকারীর মত সকলের চোখ কোথায় জেলেদের নৌকা? একটা পেতেই পুলিশের বাঁশি বাজানো দ্বিগুন উৎসাহে বেড়ে গেল।
বললাম কাউকে আতংকিত না করতে। গরীব লোকগুলো নিতান্ত পেটের দায়ে ঘন্টার পর ঘন্টা জাল নিয়ে নদীতে কাটায়। পুলিশবাহী নৌকা দেখেও দেখলাম কিছু নৌকা জাল ফেলে এক জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে (নাকি বসে?) আছে ।
জিজ্ঞেস করলাম ওরা পালাচ্ছে না কেন? নৌকায় থাকা অন্য জেলেরা জানালেন, এগুলো কারেন্ট জাল না , বাগুইড় (বাঘা আইড়) ধরার জন্য। বাহুইড় শিকারী এরকম একজনের সাথে কথা বললাম। তারা বাড়ী থেকে ৬-৭ দিনের জন্য বের হন। থাকা, খাওয়া সবই নৌকায়। দেখলাম নৌকায় সোলার এনার্জির ব্যবস্থা আছে।
মাছ কেমন পায় প্রশ্নের জবাবে জানালেন সারাদিনে একটা কি দুইটা, ওজন ২০ কেজি বা তারও বেশী। আমি ঢাকায় থাকতে বাঘা আইড়ের অনেক গল্প শুনেছি, খেয়েছি কালেভদ্রে; ব্রক্ষ্মপুত্রের কল্যানে এই এলাকায় অনেক দাওয়াতেই পাতে জোটে বাঘা আইড়।
নৌকা চলছে , ইলশেগুড়িও। তবে দালাল পেলেও ইলিশের দেখা নেই। দুইঘন্টা চলে গেছে, নদীর বাতাসে ক্ষুধাও পেটের ভেতর জানান দিচ্ছে। কালীপদ দা পমনাঘাট থেকেই খাবার নিয়ে নিয়েছিলেন, পিকনিকের মত করে খেয়ে নিলাম।
বেলা পড়ে আসছে, আমাদের কথায় মাঝি নৌকার হাল ঘোরাল , রমনার দিকে। যেতে যেতেই পথে ,মানে নদীতে দেখা মিলল বিশাল এক জালের, মালিক নিরুদ্দেশ (দেশেই আছে হয়তো কোন চরে ঘাপটি মেরে নজর রাখছে)।
জাল গুটাতে প্রায় ১৫ মিনিট লাগল। তুলতেই ছেীচ ছোচ কিছু মাছ। অভিজ্ঞ মৎস্য কর্মকর্তা বললেন এচা পুরুষ, সবচেয় বড়টা পেলাম মা ইলিশ, ডিম ছাড়ার সময় হয়ে এসেছিল। এই প্রথম জীবন্ত, দুই তিন মিনিট থাকে ডাঙ্গায় তোলার পর, দেখার সূ্যোগ হল।
আরো পড়ুন……
- আজকের আবহাওয়া লাইভ | LIVE Weather
- ১লা অক্টোবর থেকে বন্ধ হলো সকল অবৈধ ফোন | রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম কি?
- সব দোষ আসলে সরকারের! তাই দেশের আজ এই অবস্থা!
- ২৫২ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিলো ব্লাড সেন্টার নদোনা নোয়াখালী
- ইলিশ ধরা বন্ধের অভিযানের বর্ণনা দিলেন কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার
কপড়িগ্রাম জেলা এদেশের দরিদ্র জনপদগুলোর একটি। অধিকাংশ জেলে দু্র্গম চরে বাস করে। অনেকে এখনো হয়তো জানেই না , ইলিশ কোন সময়ে ধরা নিষেধ। সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের চাল দেয়া হচ্ছে এই মৌসুমে ইলিশ না ধরার জন্য।
গত কয়েক বছরে এ ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের পেছনে মৎস্য বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই অবদান আছে। ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই নিষেধাজ্ঞা, তারপর জেলেদের জালে ধরা পড়ুক রুপালী ইলিশ, সচেতন হোক সকলে।
লেখকঃ মহিবুল ইসলাম খান
পুলিশ সুুুপার,কুড়িগ্রাম
(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগ্রহীত)
ভালো লাগল!
এটা আমাদের কাছেও ভালো লাগলো। জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আশা করি এভাবেই আমাদের সাথে থাকবেন।