যুগ আধুনিক হয়েছে। তার পাশাপাশি এই যুগের প্রতিটা ক্ষুদ্র কার্যক্রমও। তবে রেল ব্যবস্থা কেনো পিছিয়ে থাকবে। এখন থেকে ভার্চুয়াল ভাবেই অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটা যাবে। যা সময় ও শ্রম উভয় দিক থেকেই আপনাকে সুবিধা প্রদান করবে। তাই আপনিও অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম জেনে আধুনিক রেল ব্যবস্থায় নিজের শ্রম ও সময় বাচিয়ে রেল পথে যাত্রা করুন।
উক্ত আর্টিকেলটি হবে একটি কমপ্লিট গাইডলাইন, যেখানে আপনি ট্রেনের টিকেট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের পাশাপাশি কিভাবে ঘরে বসে বা বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে বসে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। সম্পূর্ণ ব্যাপারটি বুঝতে সময় নিয়ে শুরু থেকে গাইডলাইন গুলো অনুসরণ করুন। এখানে প্রতিটা পদক্ষেপ ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হবে। তো শুরু করা যাক…
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
ট্রেন ভ্রমণ সর্বদাই আনন্দদায়ক। তবে এই আরামদায়ক ভ্রমণের স্বাদ গ্রহণ করার পথে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় টিকিট কাটার মত বিরক্তকর ঝামেলা। বাংলাদেশ, ভারত সহ বেশ কিছু দেশে ট্রেন ভ্রমণের ক্ষেত্রে টিকেট সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচুর ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। তবে ২০২২ সাল থেকে যেন মিলেছে এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি। এখন অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার মত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশেই।
বলে রাখা ভালো যে এতোদিন ট্রেনের টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাপনায় সিএনএস থাকলেও এই বছরের মার্চ মাসের ২০ তারিখ থেকে এই ট্রেন্ডার হস্তান্তর করা হয়েছে সহজ.কম এর কাছে। যার জন্য মার্চের আগ অব্দি যে নিয়মে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা হতো সে নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে যেই নিয়মে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটা হচ্ছে সেই নিয়মই তুলে ধরছি।
১) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রথমেই বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এজন্য https://eticket.railway.gov.bd লিংকে ক্লিক করুন।
তবে ইন্টার করার পর যে ড্যাশবোর্ড দেখাবে তা প্রথমেই প্রয়োজন নেই। আপনি যদি প্রথম বারের মত অনলাইনে টিকিট কাটতে এসে থাকেন তাহলে আপনাকে উক্ত সাইটে নতুন একাউন্ট করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিচের নির্দেশনাটি অনুসরণ করুন।
২) নতুন একাউন্ট খুলুন বা রেজিস্ট্রেশন করুন
হোম পেজের মেনু অপশনে থাকা Registation নামক অপশনে ক্লিক করুন। নতুন একাউন্ট করার জন্য যা করতে হবে তা দেখানো হবে। এখানে একাউন্ট করার জন্য যে তথ্য গুলো প্রয়োজন হবে তা হলো :
- Name
- Mobile Number
- Password
- Birth Certificate / NID Number
- Post Code
- Address
এবং এসকল তথ্য পূরণ করার পর Submit বাটনে ক্লিক করার পর উক্ত সাইটে আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। তবে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আপনার মোবাইল নাম্বারে একটা OTP আসবে, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেখানে সাবমিট করতে হবে।
এবার আপনাকে আপনার একাউন্টে লগিন করতে হবে। তার নিয়ম নিম্মে দেয়া হলো…
৩) একাউন্টে লগিন করুন
eTicket Login লিংকে এ ক্লিক করলে সরাসরি লগিন অপশনে চলে যাবেন, যেখানে নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন সম্পন্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ও লগিন হয়ে গেলো। মানে আপনি ইতিমধ্যে প্রথম ধাপ সম্পন্ন করে ফেলেছেন। এবার ট্রেনের টিকিট ক্রয় ও সেই সংক্রান্ত ব্যাপারে জানতে হবে, যা নিচের ধাপ গুলোতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
৪) আপনার যাত্রা শুরুর স্থান ও গন্তব্য সিলেক্ট করুন
এই পর্যায়ে আপনাকে যে সব তথ্য দিতে হবে তা হলো, আপনি কোন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠবেন এবং কোন স্টেশনে গিয়ে নামবেন। যার জন্য ওয়েবসাইটের হোম পেজেই যে সকল অপশন পাবেন সেগুলো হচ্ছে…
From : আপনি কোথা থেকে ট্রেনে চড়তে চাচ্ছেন সেই লোকেশনটা এখানে দিতে হবে। এক্ষেত্রে একটা লক্ষ্যনীয় বিষয় রয়েছে। যা হচ্ছে এখানে স্থানের নাম লেখার ক্ষেত্রে কোনো স্পেস ব্যবহার করা যাবে না, স্পেস এর স্থানে আন্ডারস্কোর ( _ ) ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ Dhaka_kamalapur
To : এখানে মূলত আপনি কোথায় যাবেন সেই স্থানের নাম লিখবেন। অবশ্যই এমন এরিয়ার কথা উল্লেখ করবেন যেখানে রেইলওয়ে সার্ভিস চালু রয়েছে। যেমনঃ Chittagong
Date of Journey : এখানে ক্লিক করার পর আপনার সামনে একটা ক্যালেন্ডার ওপেন হবে। সেখানে আপনি আপনার ভ্রমণের তারিখ সিলেক্ট করতে পারবেন।
Choose Class : এই পর্যায়ে আপনি যে ক্লাসের টিকিট কাটতে চান সেই ক্লাসের নাম উল্লেখ্য করবেন। ট্রেনে সাধারণত ৮ ধরণের টিকিট বিক্রি করা হয়। আপনি যখন ক্লাস সিলেক্ট করবেন তখন একটা ব্যাপার মনে রাখবেন। সব ট্রেনে সব ধরণের ক্লাস থাকেনা, তাই পরবর্তী ধাপে যে ট্রেনের লিস্ট দেখাবে তা আপনার ক্লাস নির্ধারণ এর উপর নির্ভর করবে।
এই সকল তথ্য গুলো দেয়া হয়ে গেলে নিচে Search Train নামক বাটনে ক্লিক করলে আপনার দেয়া লোকেশন ও তথ্য অনুযায়ী যেসকল ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে, সেসব ট্রেনের নাম ও বিবরণ দেখাবে, যা সম্পর্কে পরের ধাপে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
৫) ট্রেন ও সিট নির্বাচন করুন
এ পর্যায়ে আপনার লিস্টে থাকা ট্রেন গুলোর মধ্যে যেই ট্রেনে আপনি যেতে চান সেই ট্রেনের পাশে View Seats নামক অপশনে ক্লিক করুন। ট্রেনের পাশে যাত্রার সময় খেয়াল করুন। নিম্মে দেয়া ছবির মত ইন্টারফেস আসবে।
বিঃদ্রঃ কোন ট্রেন খুঁজে না পেলে আপনার সিটের ক্লাস পরিবর্তন করে আবার চেষ্টা করুন।
এখানে ট্রেনটির কোন কোন সিট খালি আছে তা সাদা রংয়ে দেখাবে। যেখান থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত সিট সিলেক্ট করলে তা সবুজ রঙ ধারণ করবে। যেসব সিট গুলো ছাই রঙের দেয়া আছে সেগুলো সিলেক্ট করতে পারবেন না, কারণ সেগুলো ইতিমধ্যে বুকিং করা হয়ে গেছে। উল্লেখ্য যে, একবারে আপনি সর্বোচ্চ ৪ টি সিট বুক করতে পারবেন, এর বেশি নয়। সব শেষে নিচে থাকা Continuing Purchase অপশনে ক্লিক করে পরের ধাপে চলে যান।
৬) যাত্রী যে হবে তার তথ্য প্রদান করুন
আপনি যখন একটি টিকিট ক্রয় করবেন তখন অটোমেটিকভাবে আপনার নাম ও যাবতীয় ডিটেইলস সিলেক্ট হয়ে যাবে। তবে যখনই আপনি একাধিক টিকেট ক্রয় করবেন তখন এক এক করে যাত্রীর তথ্য প্রদান করতে হবে। যেখানে থাকবে যাত্রীর নাম ও যাত্রীর ধরণের অপশন। যাত্রীর নামের স্থানে তো যাত্রীর নাম থাকবে আর যাত্রীর ধরণের ড্রপবক্সে দুইটা অপশন থাকেঃ ১) বয়স্ক ২) শিশু।
উল্লেখ্য যে, ৩ থেকে ১২ বছর অব্দি সকলকে রেল কর্তপক্ষ শিশু হিসেবে গণ্য করে। এক্ষেত্রে ট্রেন ভ্রমণে কোনো প্রকার টিকিট খরচ দিতে হবেনা। তবে বয়স যদি ১২ এর থেকে বেশি হয় তবে অবশ্যই পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
৭) অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের মূল্য পরিশোধ করুন
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমেই টিকিটের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে অনলাইন পেমেন্টের জন্য Debit Card, Credit Card এবং Mobile Banking এর মাধ্যমে পেমেন্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে Mobile Banking এর মাধ্যম গুলোর মধ্য থেকে কেবল বিকাশের মাধ্যমেই ট্রেনের টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।
এর জন্য একই পেইজের নিচের দিকে স্ক্রোল করলে পেমেন্ট ডিটেইলস নামক অপশন দেখাবে। সেখান থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সিলেক্ট করলে বিকাশের লগো দেখাবে। বিকাশে পেমেন্ট করার জন্য বিকাশ নাম্বার দিয়ে কনফার্ম করুন। OTP আসলে সেটা সাবমিট করুন। এরপর পিন কোড দিয়ে Confirm করুন। পেমেন্ট কনফার্মের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
বলে রাখা ভালো যে, এই পুরো প্রসেসে আপনাকে কেবল ৩ মিনিট সময় দেয়া হবে। যদি এই ৩ মিনিটের মধ্যে পেমেন্টের কাজ শেষ করতে না পারেন তবে আবার প্রথম থেকে পুরো প্রসেস শুরু করতে হবে।
৮) টিকিট সংগ্রহ ও ভেরিফাই করুন
ট্রেনের টিকেট ক্রয় সংক্রান্ত সকল প্রসেস শেষ। এবার আপনার ক্রয়কৃত টিকিটটি সংগ্রহ করার সময়। Print your ticket now বাটনে ক্লিক করে টিকেট ডাউনলোড করে নিন।
সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো আপনার মেইল চেক করা। কারণ আপনার টিকিটের মূল্য পরিশোধের ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনার মেইলে টিকিটের পিডিএফ ভার্সন চলে যাবে। সেখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। ইনবক্সে মেইল না পেলে স্প্যাম বক্সে চেক করতে ভুলবেন না।
তবে আপনার কাছে যদি কোনো কারণ বশত মেইল না আসে তবেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। ওয়েবসাইটের Purchase History ট্যাব থেকে আপনার টিকিট ডাউনলোড করতে পারবেন। Upcoming Journeys অংশে টিকিটের পিডিএফ থাকে। PDF টিকেটটি কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিন।
এবার আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই পিডিএফই কি যথেষ্ট হবে টিকিটের পরিবর্তে? জী হ্যা, এটা দেখালেই হবে, তবে আপনার যদি তাও নিরাপদে খেলতে চান তাহলে ট্রেনের সময়ের ৩০ মিনিট আগে কাউন্টার থেকে পিডিএফ দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন। যদিও এর কোনো প্রয়োজন হবে না।
এছাড়া আপনার টিকিট সম্পূর্ণ ভ্যালিড কিনা তা চেক করার আরেকটা উপায় আছে। আপনি যেকোনো সময়ে আপনার ক্রয়কৃত টিকিট ভেরিফাই করতে পারবেন। এই পর্যায়ে আপনাকে ওয়েবসাইটের মেনু থেকে ভেরিফাই অপশন বা এখানে ক্লিক করে সরাসরি উক্ত পেজে গিয়ে আপনার মোবাইল নাম্বার ও টিকিটের নাম্বার দিয়ে সাবমিট করলে আপনার টিকিট সম্পর্কে তথ্য দেখাবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
৯) অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সময়
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে হলে আপনাকে অবশ্যই সকাল ৮:০০ ঘটিকা থেকে ১১:৩০ ঘটিকা অব্দি সময়ের মধ্যে কাটতে হবে। উল্লেখিত সময় ব্যাতিত বাকি সময় গুলোতে টিকিট বিক্রির প্রসেস বন্ধ থাকে। আরেকটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য যে, ভ্রমণের সর্বোচ্চ ৫ দিন আগে টিকিট ক্রয়ের সুযোগ থাকবে।
শেষ কথা
পরিশেষে, এই ছিলো অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং সম্পূর্ণ প্রসেস। যা আপনাকে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করবে। আশা করি, উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে ট্রেন ভ্রমণে টিকিট ক্রয় সংক্রান্ত সকল বিষয়ে ধারণা পেয়েছেন। ট্রিক ব্লগ বিডির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
thanks