অভাগী মেয়ে (বাংলা গল্প) ১ম-শেষ পর্ব- সোলাইমান রানা

বাংলা গল্পঃ অভাগী মেয়ে
লেখকঃ সোলাইমান রানা

অভাগী মেয়ে ১ম পর্ব

কিরে রিয়া চাউল গুলো ধুয়ে আনতে এত সময় লাগে। কথাটি রাগি গলায় বললো সৎ মা।

রিয়া ভয়ে তাড়াতাড়ি চাউল ধুয়ে পুকুর ঘাট থেকে বাড়ি আসলো। চাউল গুলো হাড়িতে দেওয়ার পরই রিয়াকে ঝাড়ু দিয়ে মারতে শুরু করলো তার সৎমা। রিয়াকে মারতে মারতে মাটিতে শুয়ে দিলো। রিয়া কোন রকম হামাগুড়ি দিয়ে রান্না ঘর থেকে উঠানে বের হলো।

আর রিয়া মাটিতে পরে ১ ঘন্টা কান্না করছে। এটা তার নতুন না। সামন্য কোন কিছু নিয়েই তাকে মারে তার সৎ মা। রিয়া মাটিতে পরে বলছে আমার কি মুক্তি নেই আল্লাহ। আমাকে মরন দাও তা না হলে এই জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো।

অভাগী মেয়ে (বাংলা গল্প)

রিয়ার মনে পরছে তার মা থাকার অবস্থার কথা,, তার মা তাকে কত আদর করতো। রিয়া রিয়া বলে সারাদিন ডাকতো তাও মারতো না। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় তাকে টাকা দিতো। আর কত কি খাইয়ে পাঠাতো স্কুলে।

রিয়া একদিন স্কুল থেকে বাড়ি এসে শুনে তার মা কাজ করার সময় জ্ঞান হারিয়ে পরে যায় পরে গ্রাম্য ডাক্তার নিয়ে তার চিকিৎসা করায়। পরে শহরের হাসপাতাল নিয়ে যায় সেখানেই মারা যায়। কথা গুলো রিয়া মাটিতে পরেই ভাবছে।

তার সৎ মা এসে তাকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়।। রিয়া কোন রকম উঠে আবার ঘরের কাজ করতে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। তার সৎ ভাই ঘরে আসছে যা তার মার বিপরীত। সারাদিন বড় বোনের কাছে থাকে মানে রিয়ার কাছে।

মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো। রিয়া নামাজ পড়ে বই নিয়ে বসলো। তখনই তার সৎ মার আগমন,,,

মা= এত পড়ে কি হবে। যা হাস মুরগি গুলোকে খাবার দিয়ে আয়।

রিয়া= আচ্ছা।

রিয়া চলে গেলো কাজ করতে তা শেষ করে ঘরে আবার আসলো এসে পড়ার টেবিলে আবার বসলো। সামনে তার এস এস সি পরীক্ষা। কোন পাইভেট পড়ায় না তার মা।

টেবিলে বসে রিয়া ভাবছে তার মায়ের মারা যাওয়ার পরের কথা। তার মা মারা যাওয়ার পর তার আপন তার বাবা। সেতো সারাদিন দোকান নিয়ে পরে থাকে। রিয়ার বয়স তখন ৮ হবে। তার বাবা নতুন বিয়ে করে আনে। আর শুরু হয় রিয়ার কষ্টের জিবন।

তবে তার সৎ মা আসার ১বছর পর। যখন সৎ ভাই হওয়ার পর। একদিন রিয়া ভাতের পাতিল চুলা থেকে নামানোর সময় হাত থেকে পরে যায় আর তার মা তাকে জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে তার পায়ে ধরে রাখে। এতে যে ক্ষত হয় অনেক দিন হাটতে পারে নি। তার বাবাকে বলায় বলে এভাবেই শাসন করে কাজ শিখাবেই।

তারপর থেকে আর কিছু বলে না। তার সৎ ভাইকে কোলে নেওয়ার সময় তার মা বলে,,,,,,তুইতো একটা অভাগী আমার ছেলেকে কোলে নিলে তারও কপাল পুড়বে।

তারপর থেকে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতো। ভাইটা হাত দেয় ধরার জন্য তাও ধরে না ভয়ে। এভাবে কয়েক বছর কাটালো। খেয়ে না খেয়ে পড়ালেখা করে যাচ্ছে।

রিয়া পড়ার টেবিলে বসেই চোখের জল ফেলে অতীত ভাবছে। তখন তার মার ডাক। পড়ার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো তার মার কাছে। আজও পড়া হলো না। রিয়ার জিবন এমনই কষ্টে যাচ্ছে। রিয়া রাতে না খেয়েই শুয়ে পরলো।

রিয়ার বাবা বাসায় এসে খাবার খেয়ে শুয়ে পরলে।
মা= রিয়াকে বিয়া দিয়ে দিলে কেমন হয়।

বাবা= মেয়েটা এস,এস,সি দেওয়ার পর বিয়ে দেবো।

মা= একটা বিয়ে আসছে। ছেলের প্রথম বউ মারা গেছে। বয়স বেশি না ৪৫বছর হবে মাত্র।

বাবা= কি বলো

মা= এর চেয়ে ভাল পাত্র কই পাবো অভাগী কোথাকার।

বাবা= ঘুমাও এসব নিয়ে পরে ভাববো।

সকালে রিয়া ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না করেরেই স্কুলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন তার মা এসে বলে,,,স্কুলে যেতে হবে। রিয়া বলে,,, কেনো।
মা বলে,,মেয়ে মানুষ পড়ালেখা করে কি হবে। তারপর রিয়া ঘর থেকে বের হয়ে স্কুলে যাচ্ছে।

রিয়াকে প্রতিদিন রাস্তায় বিরক্ত করে সিয়াম। আজ সিয়াম তার সামনে এসে,,,
সিয়াম= আমি তোমাকে ভালবাসি রিয়া।
রিয়া= দেখেন আমার আপন কেউ নাই আবার কষ্ট দিতে আসবেন না।
সিয়াম= আমি জানি তোমার সম্পর্কে।
রিয়া= কি জানেন।
সিয়াম= সব কিছু তাইতো এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে চাই ভালবেসে।

রিয়া আর কিছু না বলে চলে গেলো স্কুলে। বাড়ি ফিরার পথে,,,,

অভাগী মেয়ে গল্পের ২য় পর্ব

রিয়া বাসায় ফেরার পথে সিয়াম আবার রিয়ার পথ আটকে ধরে।

সিয়াম= কি হলো রিয়া কিছু যে বলো না।

রিয়া= আমার বলার কিছু নাই। আমি আপনার সাথে ঔসব ভালবাসা করতে পারবো না।

সিয়াম= আমি জানি তুমি কষ্টের কারনে এসব বলো দেখো আমি তোমাকে অনেক ভাল রাখবো।

রিয়া= আমারে কপালে সুখ আল্লাহ দেয় নাই আপনি আবার কিভাবে ভাল রাখবেন।

সিয়াম= আমি তোমাকে বিয়ে করে সুখে রাখবো ভালবাসবো সারাজিবন।

রিয়া= আমি ভালবাসা বুঝি না।

তারপর রিয়া সিয়ামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে রিয়া খাবার খেতে বসলো। তার মা তার থেকে ভাতের বাটি কেড়ে নিয়ে বলে,,কাজ না করে শুধু খাওয়া আর খাওয়া।
রিয়া,,,আমি সারদিন কিছু খাই নি।

তার মা বলে,,,আমি কি মানা করছি খেতে। আমি বলছি কাজ করে খাও।
রিয়া আর কি করবে চলে গেলো বাড়ি কাজ করতে। তার শরীর দিচ্ছে না। তবুও কাজ করতে হবে। কারন কাজ না করলে আবার খাবার বন্ধ।

কাজ করতে কতে আসরের আজান দিয়ে দিলো। রিয়া এসে কিছু খাবার খেয়ে শুয়ে পরলো। তখনই তার মা এসে আবার মারতে শুরু করলো। কারন আর কাজ করতে হবে।
চোখের জল মুছতে মুছতে রিয়া চলে গেলো রান্না ঘরে।
সারদিন রাত কেটে গেলো রিয়ার।

পরেরদিন সকালে স্কুলে যেতে দিলো না তার মা। স্কুলে যাওয়ার সময় তাকে বলে,, আজকে মানুষ আসবে তাকে দেখতে। রিয়া আার সাহস করে কিছু বলতে পারলো না।

দুপুর ঘনিয়ে আসলো রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সিয়াম।

দুপুরে রিয়াকে একটা নতুন শাড়ি পরালো তার মা। রিয়াকে দেখতে ছেলেও তার ছোট ভাই আসলো। তাদের একটা রুমে বসানো হলো।

রিয়া শরবত আর নাস্তা নিয়ে সালাম দিয়ে রুমে ঢোকলো রিয়া বলে,,চাচারা কেমন আছেন। রিয়াকে কিছু বলা হয়নি ছেলে কোনটা কি বিষয়।

ছেলেতো মনে মনে রাগ। রিয়ার বা কি করার আছে তারাতো রিয়ার বাবার বয়সের।ছেলেরা চলে গেলে।

তার মা তাকে অনেক মারছে আর বলছে,,চাচা কেনো বললো। আর বলে অভাগী তোকে কে বিয়ে করবে। আজ তোর জন্য এত টাকা ওয়ালা ছেলে হাত ছাড়া হলো।

রিয়াকে এতটাই মারছে যে সারাদিন শরীররের ব্যাথা নিয়ে হাটতে পারছে না।

রিয়া মনে মনে ভাবলো সিয়ামকে ভালবেসে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। পরেরদিন সকালে রিয়া বাড়ি থেকে বের হলো সিয়াম পথে দাড়ানো।

সিয়াম= গতকাল কই ছিলে।
রিয়া= আমাকে দেখতে ছেলে আসছে।

সিয়াম= দেখো আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি না পেলে মরে যাবো।

রিয়া= কি করতে পারবে আমার জন্য।

সিয়াম= সব কিছু চাইলে আজই বিয়ে করতে পারি।

রিয়া= আচ্ছা দেখা যাক।

কয়েক দিন চলে গেলো। রিয়া প্রতিদিন সিয়ামের সাথে কথা বলে।

একদিন সিয়াম রিয়াকে নিয়ে চলে গেলো তার এক বোনের বাড়ি। সেখানে তারা বিয়ে করে নিলো।

এদিকে রিয়ার বাবা মা তাকে খুজে নি বরং তার মা বললে অভাগী দুর হলো।

সিয়াম রিয়াকে নিয়ে বাড়ি গেলো। সিয়ামের বাবা মা রিয়াকে মেনে নেয়নি। যদিও রিয়া দেখতে অনেক সুন্দর। সিয়াম রিয়াকে তার বোনের বাড়ি রেখে আসলো।

কয়েকদিন পর সিয়ামের বাবা মা রিয়াকে বাড়ি নিলো। সিয়াম আর রিয়া কয়েক দিন ভালই জিবন কাটাচ্ছে।
একদিন সকালে,,,,,

৩য় পর্ব

সকালে রিয়া ঘুমানো অবস্থায়।

সিয়ামের মা-রিয়া, রিয়া, এতক্ষণ ঘুমায় জমিদারের মেয়ে নাকি?

রিয়া কোন রকম ঘুম থেকে উঠে। বাহিরে আসলো আর তাকে অনেক কথা শুনানো হলো।। রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরছে। রিয়া কিছু বলতে পারলো না। তার পর চোখের পানি মুছে। বাড়ি কাজ করতে থাকলো। কয়েকদিন ভালই গেলো।

রিয়ার শাশুড়ি তার মার মতই এটা সেটা নিয়ে গায়ে হাত তুলে। সিয়াম বাড়ি আসলে তাকে বলে।
রিয়া= আজও তোমার ম। আমাকে মারছে।

সিয়াম = মারছে ভাল করছে আমি কি করবো।
রিয়া= কিছু করার নাই?

সিয়াম আর কথা না বাড়িয়ে রিয়ার গায়ে হাত তুলে। রিয়া এবার আরো ভেঙে পড়ছে এখন সে কার কাছে যাবে।
দুপুরে না খেয়ে শুয়ে আছে। তখন তার শশুড় এসে তাকে নিয়ে খাওয়ালো। রিয়াকে বাড়িতে একজন ভালবাসে তার শশুড়।

কারন রিয়াকে ভাল করে চিনে। তার শশুড় বাড়ি থাকলে কেউ কিছু বললে পারে না।

কয়েক মাস কেটে গেলো। রিয়া অনুভব করলো তার ভিতর আরেক জন বড় হচ্ছে। এ কথা শুনে সিয়াম রেগে গেলো রিয়া ভাবলো এটা শুনে সে খুশি হবে।

তার শাশুড়িও রিয়াকে ভালবাসতে শুরু করে। কিছুদিন পরই সিয়াম রিয়াকে বলে,,,,,,

সিয়াম -আমাদেরতো সংসার বড় হচ্ছে তাই আমি শহরে যাই চাকুরী করি। বসে বসে আর কয় দিনন।

রিয়া= আমাকে নিবে না।
সিয়াম -না।তোমার এ অবস্থায় বাড়ি থাকো কিছুদিনের ব্যাপার চলে আসবো।

রিয়া আর কিছু বলতে পারলো না। পরের দিন সকালেই সিয়াম চলে গেলো শহরে।

রিয়া এখন খুব একা হয়ে গেলো। কিছুদিন পরই তার শাশুড়ি বলে বসে বসে আর কতদিন এই বাড়ি খাবি।
সিয়াম কি আমাদের টাকার বস্তা দিয়ে গেছে।

আজই পাতিল আলাদা করেরে খাবি । রিয়া চুপ করে সব কথ হজম করলো। কিছু করার নেই কারন তার কেউ নাই আপন।

সকালে সিয়ামের মা দুটা পাতিল দিয়ে বলে গেলো রিয়াকে। আজ থেকে যেনো রিয়া নিজে খরচ করে রান্না করে খায়।

রিয়ার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই।

সারাদিন না খেয়ে পরে থাকলো। সন্ধ্যায় তার শশুড় তাকে কিছু চাউল আর তরকারি দিয়ে গেলে। তার শাশুড়ির অজান্তে

এই কিছু খরচ দিয়ে রিয়ে কয়েকদিন কাটিয়ে দিলো।
সিয়ামের কোন খোজ নাই।
আর গ্রামের এখনো মোবাইল ব্যবহার এসে পৌঁছায় নাই যে মোবাইল দিয়ে। তার সাথে কথা বলবে।

রিয়া কি করবে কয়েক মাস গেলো নতুন মানুষ আসবে। তাকে কে দেখবে। সিয়ামের খুজে রিয়াও চললো শহরে।

সিয়াম যাওয়ার আগে বলে গেছে ঢাকা শহরে যাবে। আর রিয়াও অজানা শহর ঢাকার দিকে রওয়ানা দিলো

কুমিল্লা থেকে যেতে ঢাকা বেশি দুরে না ৩ঘন্টার পথই শুধু। রিয়া চলে আসলো ঢাকা শহরে
এখন যাবে কই। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার ধারর দিয়ে হাটছে।

কতটা পথ গেলে সে নিজেও জানে না। হঠাৎ রিয়া চোখ থমকে দাড়ালো দুরে একটা রিক্সা দেখলো তার কাছে গেলো গিয়ে দেখে সিয়াম একটা মেয়ের সাথে বসে আছে আর রিক্সাওয়ালা পাশের দোকান থেকে কি যেনো কিনছে।

রিয়া গেলো,,,

রিয়া= সিয়াম তুমি।

সিয়াম = আপনি কে।

রিয়া= তুমি সিয়ামই তো

সিয়াম= হ্যা।

রিয়া= তাহলে চিনতে পারছো না।

সিয়াম = না। যানতো বিরক্ত করবেন না।

রিয়ার উপর যেনো আকাশটা পরলো। কি করবে এখন। এই সব ভাবতে ভাবতে হাটতে থাকলো আর একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেলো সাথে সাথে মাটিতে পরে গেলো,

৪র্থ পর্ব

রিয়া মাটিতে পরে গেলো। গাড়ির মালিক রিয়াকে গাড়ি করে নিয়ে হাসপাতাল রেখে চলে যায়। রিয়া হাসপাতালের বারান্দায় পরে আছে। এক নার্স রিয়াকে দেখে রুমের ভিতর বেডে শুয়িয়ে দিলো।

এটা একটা সরকারি হাসপাতাল তাই চিকিৎসার খরচ লাগে না। কোন লোক থাকলে হয়। নার্সের কারনে রিয়াকে ডাক্তার দেখে। রিয়া জ্ঞান ছিলো না। জ্ঞান হারায় তখন পেটে গাড়ির ধাক্কা লাগলে।

ডাক্তার রিয়াকে বাচানোর অনেক চেষ্টা করে সফল হয়। রিয়ার জ্ঞান ফিরলে সে দেখে পেটে বাচ্চা নাই। রিয়া নার্সকে ডাকে,,,
রিয়াআমার বাচ্চা কই। নার্স তা তোমার পেটে মরা ছিলো।
রিয়া আর কিছু বললো না। কারন রিয়া জানে গাড়ির ধাক্কার কারনে তার পেটেই বাচ্চা মারা গেছে।

অনেকদিন পর রিয়া সুস্থ হলো। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ভাবছে কই যাবে। রিয়া হাসপাতাল থেকে বের হয় সন্ধ্যায়।
রাস্তার পাশ ধরে চলছে গন্তব্যহীন ভাবে।

রাস্তার পাশে একটা মেয়ে দেখে রিয়া তার সামনে গেলো

রিয়া= আমাকে একটা কাজ খুজে দিবেন।

মেয়ে= এই ঢাকা শহরে কাজের অভাব নাই। আমার সাথে যাবে।

রিয়ার যাওয়ার জায়গা নাই তাই তার সাথে চললো। তারা হাটছে আর কথা বলছে ।
রিয়া= তোমার নাম কি?
মেয়ে= কেয়া।তোমার।

রিয়া= রিয়া নাম আমার।

তারা পরিচিত হচ্ছে আর হাটছে। হাটতে হাটতে তার একটা রাস্তার মোড়ে এসে দাড়ায়। কেয়া বলে এখানেই দাড়াতে হবে। দুজনই দাড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে।

পুলিশ আসতে দেখে,,, কেয়া বলে রিয়া পালা।

রিয়া কিছু না বুঝায় দাড়িয়ে থাকে। পুলিশ রিয়ার সামনে আসে,,,

পুলিশ= টাকা দে।

রিয়া= কিসের টাকা। আমার কাছে কোন টাকা নাই।
পুলিশ= পতিতার কাজ করস আবার টাকা নাই।

রিয়া= কিসের পতিতা। কে পতিতা।

পুলিশ রিয়াকে ধরে নিয়ে গেলো। থানায় রিয়াকে অনেক প্রশ্ন করলো। রিয়া বলে আমি ওই সব করি না।

জেলে আটকে রাখলো রিয়াকে।রাত অনেক গভীর হলো রিয়া বসে আছে অন্ধকারে। তখন দরজা খোলার শব্দ পেলো। সে ভাবলো তাকে ছেড়ে দিবে।

পুলিশ অফিসার ভেতরে আসলো।

রিয়া= স্যার আমি কোন অপরাধ করি নাই। আমাকে ছেড়ে দেন।

পুলিশ= ছেড়ে দিবো। সকাল হউক
এ কথা বলেই রিয়ার উপর হায়নার মত ঝাপিয়ে পরলো। পুলিশ রিয়ার বুকের উপর থেকে উড়না একক টান দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো।
রিয়া চিৎকার করে বলে,,আমাকে ছেড়ে দেন। আমাকে এমন করবেন না।

কে শুনে কার কথা। পুলিশ রিয়াকে ধর্ষন করলো।রিয়া জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে থাকে।
সকালে রিয়ার জ্ঞান ফিরলো মাহিলা পুলিশের ডাকে

পুলিশ= চলেন মহিলা জেলে।

রিয়া= কেনো।

পুলিশ = আমরা আসতে দেরি হলো তাই এখানে ১ঘন্টা ছিলেন।

রিয়া মনে মনে ভাবলো তাহলে ওদের বলছে সকালে ধরে আনছে। রিয়া আর কাউকে তার ধর্ষনের কথা বললো না।

মহিলা জেলে নিয়ে রিয়াকে রাখা হলো। দুদিন পর কেয়া এসে রিয়াকে ছাড়িয়ে নিলো।

রিয়া কেয়ার বাসায় চলে আসলো,,,,,,

৫ম পর্ব

কেয়া রিয়াকে বলছে দেখ জিবন মানেই কষ্ট এতে যদি সব দিতে হয় দেবো বেচে থাকতে হবে। রিয়া বলে কি করবো এখন। কেয়া বলে রোজ রাতে কারো সাথে রাত কাটালে ২-৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
রিয়া বলে আচ্ছা করবো। তা লোক পাবো কই।

কেয়া বলে সন্ধ্যা হলে রাস্তার পাশে দাড়ালে লোক এনে রুমে নিয়ে থাকবি।

সন্ধ্যায় রিয়া চলে যায় রাস্তার পাশে দাড়ায়। নানা লোক আসে বলে কত টাকা। কেউ বলে,, ২০০,৩০০,আবার কেউ ৫০০ টাকা বলে ।

রিয়া অপেক্ষা করছে বেশি টাকার কেউ আসে কিনা।

রিয়া অনেকক্ষণ দাড়ানোর পর একটা লোক আসলো রিয়াকে বলে ২হাজার দেবে। রিয়া লোকটাকে বাসায় নিয়ে চলে আসে।

এদিকে এসে দেখে কেয়া আরেকজন নিয়ে বিছানায়। তাই রিয়া পাশের রুমে নিয়ে চলে গেলো লোকটাকে।

লোকটা রিয়ার হাতে ২হাজার টাকা দিয়ে রিয়ার কাপড় খুলছে। রিয়া মনে মনে ভাবছে সিয়ামের কথা। সিয়ামও রোজ রাতে এমন করতো। যেনো কোন ভালবাসা নাই। লোকটা রিয়াকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।

সকালে খুশি হয়ে রিয়াকে আরো ১০০টাকা হাতে দিয়ে লোকটা চলে গেলো।

রিয়া সবগুলো টাকা নিয়ে ভাবতেছে আজ এইই টাকার কারনে তার এমন পরিনতি। রিয়া গোসল করে খাবার খেয়ে ঘুম দিলো।।

বিকালে কেয়া আর রিয়া বসে আড্ডা দিচ্ছে।

কেয়া_ জানি অনেক কষ্ট হইছে তবুও কিছু করার নেই।
রিয়া_ জিবন যুদ্ধে পরাজিত হবো না। জয় হবেই। এখানে অনেক ভাল আছি সৎমার কাছ থেকে। এই সব করে যদি ভাল জিবন মিলে এটাই ভাল।

রিয়া আর কেয়া বসে আড্ডা দিলো সারাবিকাল। সন্ধ্যা হতেই আবার তারা বের হয়ে পরলো রাত কাটানোর লোক খুজতে।

রিয়া কত কালের মত আজও বসে আছে। রিয়া দুর থেকে সিয়ামকে আসতে দেখলো। রিয়া তার মুখ ঢেকে নিলো।। সিয়াম রিয়ার কাছেই আসলো।

সিয়াম_ কত লাগবে।

রিয়া চুপ করে আছে।

সিয়াম_ বলো কত টাকা লাগবে। মুখটা দেখাও

রিয়া_ আমি যাবো না।

সিয়াম_ গলটা পরিচিত মনে হলো।

রিয়া চুপ করে আছে। সিয়াম আর কিছু না বলে রিয়ার থেকে দুরে যারা আছে তাদের কাছে গেলো ।

রিয়া সিয়ামের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,,,বউ রেখে রাস্তার মানুষ খুজে।

রিয়ার ভাবনা ভাঙলো একটা লোকের ডাকে। তার সাথে দামাদামি করে তাকে বাসায় নিয়ে আসলো। আজ ৩হাজার ফেলো।

সকালে রিয়া কেয়াকে নিয়ে একটা চিঠি দিলো তার বাড়িতে।

কিছুদিন পর চিঠির উত্তর আসলো। তার বাবা মারা গেছে। রিয়া চিঠিটা হাতে নিয়ে কাদতে কাদতে বাসায় আসছে পথে সিয়াম,,,,

৬ষ্ঠ পর্ব

সিয়াম রিয়ার সামনে এসে দাড়ালো। রিয়া তাকিয়ে আছে সিয়ামের দিকে।

সিয়াম_ রিয়া কই যাও। আর থাকো কই।

রিয়া_ কেনো।
সিয়াম_ আমার বাচ্চা কই।

রিয়া_ মারা গেছে।

সিয়াম_ চলো আমরা আবার একসাথে থাকি।

রিয়া_ কেনো।শরীররে চাহিদা মেটাতে নাকি।

সিয়াম_ তুমি না আমার বউ।

রিয়া_ আমি কারো বউ না এখন। আমি এক পতিতা। আর আমাকে বিরক্ত করবে না।
এ কথা বলে রিয়া চলে যাচ্ছে। সিয়াম তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে।
রিয়া বাসায় গিয়ে অনেকক্ষন বসে কাদলো। তার আপন আর কেউ নাই বাবা ছিলো সেও মারা গেছে। পৃথিবীতে একা হয়ে গেলো সে।

কয়েকদিন আর লোকের সাথে থাকলো না। তারপর তালাকনামা পাঠিয়ে দিলো সিয়ামকে। কিছুদিন পর আবার রিয়া সন্ধ্যায় বের হয় লোক খুজতে। জিবন চলছে এভাবে তার।

একদিন রিয়া দাড়িয়ে আছে লোকের জন্য। তখন সে পুলিশটা আসলো।

পুলিশ_ আজ টাকা নেবো না। আজ রাত কাটাবো।

রিয়া_ রাত কাটাতে টাকা লাগবে।

পুলিশ_ টাকা র চিন্তা নাই। দেবো।

রিয়াকে দাড় করিয়ে অন্য মেয়েদের থেকে টাকা নিলো। তারপর রিয়াকে সাথে করে। রিয়ার বাসায় আসলো। রিয়াকে পুলিশ টাকা দিলো। সারারাত রিয়ার সাথে কাটালো। সকালে পুলিশ যাওয়ার আগে রিয়া পুলিশকে শরবত খাওয়ালো। আর বলে আবার আসবেন।

পুলিশ আনন্দে চলে গেলো।

রিয়া দুপুরে ঘুম থেকে উঠে শুনে । কেয়া বলে পুলিশ মারা গেছে । রিয়া আর কিছু বলে না। কারন পুলিশ মরার কারন সে জানে শুধু। রিয়া পুলিকে যাওয়ার আহে পটাশিয়াম সায়ানাইড খাইয়ে দিছে শরবতের সাথে। এটা এমন একটা বিষ যা খাওয়ার ৭-৮ঘন্টা পর কাজ করে। বিষের প্রভাব ফেলে। আজ রিয়া একটু খুশি।

সারাদিন ভালই গেলো রিয়ার। সন্ধ্যায় আবার গেলো আজ একটা লোক আনলো। রিয়া রুমে এসে টাকা চাইলো লোকটা দিলো।

লোক_ আপনার নাম কি।

রিয়া_ কেনো যা করতে আসছেন তা করে যান।

লোক_ আমার নাম রাজু।

রিয়া_ আমার নাম রিয়া।

রাজু_ আপনি এসব কেনো করেন।

রিয়া_ টাকার অভাবে।

রাজু_ টাকা পেলে কি সারাজিবনের জন্য বিক্রি হয়ে যাবেন।
রিয়া চুপ করে আছে।

রাজু _ আপনার অতীতটা জানতে পারি।

রিয়া সব বললো রাজুকে।

রাজু _ আমার জিবনী শুনবেন।

রিয়া_হুম।

রাজু_ আমার টাকা পয়সার অভাব নাই। বিয়ে করালো মা বাবা। মেয়ে নাকি আরেক ছেলেকে ভালবাসে। বিয়ের ২বছর পর আমার ছোট দুধের শিশু ফেলে চলে গেছে প্রেমিকের সাথে।। শিশুটা মারা গেছে আর বিয়ে করি নাই ভয়ে আবার চলে গেলে তাই।

রিয়া_ তাহলে দেখে করেন

রাজু_ আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমিই কোনদিন ছেড়ে যাবে না কারন তোমার প্রেমিক নাই।

রিয়া চুপ।

রাজু অনেক কষ্টে রিয়াকে বিয়েতে রাজি করালো। পরের দিন সকালে কেয়া, রিয়া রাজু কাজি অফিস গেলো রিয়াও রাজু বিয়ে করে নিলো।

৭ম পর্ব

রাজু রিয়াকে বিয়ে করে গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে আসলো। রাজুও রিয়া গাড়ি থেকে নামলো। রিয়া চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এত বিশাল দালান, বাড়ির সামনে এত সুন্দর বাগান আরও একটা গাড়ি আছে।

রাজু রিয়াকে বললো এই যে সামনে যা দেখছো সব আমার শুধু রাণী নাই। আজ রাণীও আসলো। সব তুমিই দেখে রাখবে এখন থেকে। রিয়া মনে হয় এখনো স্বপ্নে আছে।

রাজু রিয়াকে নিয়ে ঘরে ঢোকলো। রিয়া রাজুর মাকে সালাম করলো। রাজুর মা মুখখানা মলিন করে আছে। রিয়া কিছু বলেনি যদিও বুঝতে পারলো।

রিয়াকে রাজু রুমে নিয়ে গেলো। আর রিয়া নিজের বিয়ে শাড়ি খুলে সাধারন কাপড় পরলো।

রাজু রিয়াকে কিছু ফল এনে দিলো। রিয়া খাচ্ছে ,,, অনেক তৃপ্তি সহকারে কারন এই সব ফল রিয়া জীবনে প্রথম খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে রিয়া রান্না ঘরে গেলো। তার শাশুড়িও আছে কিছু বলছে না।

রিয়া তার শাশুড়িকে বললো,,, আমি কি কাজ করে দিবো মা। তার শাশুড়ি বলে,,, তুমি কিছু করতে হবে না। বাড়িতে কাজের লোক আছে। আর কোন কিছু আনতে চাইলে দারোয়ানকে বলো এনে দিবে।

রিয়া রান্না ঘর থেকে বের হয়ে রাজুর কাছে আসলো।
রিয়া_ আপনার মা আমাকে মাননতে পারে নি।
রাজু_ আগেরজনকে মা অনেক আদর করতো তারপর কি হলো। তাই হয়তো তোমাকে এমন ভাবে ভাবতে চায় না। ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। রিয়া_ আচ্ছ। মাকে আমার মত করে নিবো।

রাজু ও রিয়া খাবার খেয়ে ঘুম দিলো দুপুরে। বিকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলো রিয়া। আর আল্লাহর কাছে তওবা করতেছে। নিজের চোখের পানি ছেড়ে।। নামাজ শেষ করে রিয়া ফুল গাছ গুলোতে পানি দিলো।

কিছুক্ষণ পর রিয়া নিজের রুমে বসে আছে। তার শাশুড়ি তার পাশে এসে বসলো। রিয়ার জীবনের সব কিছু জানতে চাইলো।

রিয়া তার অতীত বললো। তার শাশুড়ি তাকে আর কিছু বলে নি।

রাজু বিকালে বের হয়ে ফিরে আসলো রাতে। রাজু আসলে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো
সকালে রিয়া নাস্তা করে বের হলো গেটের কাছে এসে দেখে দারোয়ান দাড়িয়ে আছে। গতকাল তাকে দেখেনি।

দারোয়ানকে দেখে রিয়ার চোখ কপালে কারনে সিয়ামই তার বাড়ির দারোয়ান। রিয়াকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিয়াম কিছু বলার সাহস নাই।

রিয়া রাজুকে ডাক দিলো। রাজু আসলে রিয়া বলে এই দারোয়ান আমার দিকে কেমনে জানি তাকিয়ে থাকে তাকে এখনই বের করে দাও। রাজু সিয়ামের পাওনা টাকা দিয়ে তাকে চলে যেতে বলে।

সিয়াম আর কিছু বলতে পারলো না। সিয়াম তার সব জিনিস নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে ভাবতে ভাবতে হাটছে সিয়াম তখনই একটা গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিলো। সিয়াম মাটিতে পরে গেলো।তাকে হাসপাতাল নিলে ডাক্তার চিকিৎসা করে তার দুটা পা নষ্ট হয়ে গেলো।

রিয়া রাজু সাথে মার্কেটে গেলো। অনেক কেনা কাটা করলো।

কিছু দিন পর রিয়া রাজুকে বলে গ্রামে যাবে।
রাজুও আরকিছু বলে নি। একদিন তাদের গাড়ি নিয়ে চলে গেলো গ্রামে। তার মা তাকে দেখে অবাক। এত দামি গাড়ি দামি পোশাক। গ্রামের সবাই অবাক। সিয়ামের বাবা মাও আসলো রিয়াকে দেখতে তারা অসহায়র মত তাকিয়েই আছে। রিয়ার মা অনেক সুন্দর ভাবে কথা বলে যা গত ১৫বছরে বলে নি। তাদের জন্য অনেক খাবারের আয়োজন করলো তার মা।

৮ম পর্ব

অনেক ধরনের খাবারের আয়োজন দেখে রিয়া অনেক খুশি। রিয়া ভাবছে রাজুকে তেমন হয়তো ভাল কিছু খাওয়াবে না। রাতের খাবার খেয়ে রিয়া রাজু ঘুমিয়ে পরলো। সকালে তার মার ডাকে তাদের ঘুম ভাঙলো। তারা নাস্তা করে আবার চললো শহরের দিকে।

গাড়ি চলছে গ্রামের ভিতর দিয়ে। পথের মধ্যে সিয়ামকে দেখে গাড়ি থামিয়ে সিয়ামের সামনে গেলো রিয়া। সিয়াম হুইল চেয়ার দিয়ে চলাচল করে। রিয়াকে দেখে সিয়ামের চোখ দিয়ে পানি পরছে অবিরাম। রিয়া কিছু না বলে দাড়িয়ে আছে।

সিয়াম_ আমাকে আপনি মাফ করে দেন।
রিয়া চুপ।
সিয়াম_ আমার অপরাধের শাস্তি আমি পাইছি।
রিয়া_ তাহলে আর কি আমি আর কিছু বলতে চাইনা। ভাল থেকো। রিয়া গাড়ি করে চলে আসলো শহরে। বাড়ি এসে ভাবছে কি সিয়ামের কথা কি ছিলো কি হলো।

রিয়ার আর রাজু অনেক ভালই কাটছে তাদের জিবন। কয়েকদিন পর রাজু অফিস থেকে বাসায় আসলে,,

রিয়া_ আজ একটা ভাল সংবাদ দেবো।
রাজু_ কি তা বলো
রিয়া_ আমাকে কি দিবে বলো আগে।
রাজু _ যা চাইবে।
রিয়া_ আমাদের সন্তান হবে।

রাজু এ কথা শুনে আনন্দে কি করবে বুঝতে পারছে না।

রিয়া_ কি দিবে বলো।

রাজু_ কাছে আসো।
রাজু রিয়াকে একটা কিস দিলো

রিয়া_ এটা শুধু।
রাজু_ সব কিছুই তোমার আমার কাছে কিছু নাই ভালবাসা ছাড়া।
রিয়া_ এটা দিলেই হবে।

সন্ধ্যায় রিয়াকে নিয়ে মার্কেট গেলো রাজু। অনেক কেনাকাটা করে দিলো রাজু রিয়াকে। মার্কেট থেকে বের হয়ে আসতেই।

মেয়ে_ রাজু কেমন আছো

রাজু _ ভাল তুমি।
মেয়ে_ ভাল।

রাজু_ এত বছর পর। তা কি করো এখন।

মেয়ে_ কি করবো একটা ছোট চাকুরী করি।এটা দিয়েই জিবন চালাই।
রাজু_ কেনো তোমার স্বামী কই
মেয়ে_ বিয়ে কয়েক মাস পরই ও ছেড়ে চলে গেছে।

রাজু_ ওহ্
মেয়ে_ ওনি কে।
রাজু_ আমার স্ত্রী।
মেয়ে,_ বিয়ে করলেন কবে।
রাজু_ কয়েক মাস হলো। আমাদের সন্তানও হবে।
মেয়ে_ আমার মেয়েটা কই।
রাজু _ ছোট শিশু আমি বাচাতে পারি নাই।
এ কথা বলে রাজু চলে এসে গাড়িতে উঠে গেলো। এতক্ষণ যার সাথে কথা বলছে সে রাজুর আগের বউ।

বাড়ি এসে রিয়া খুব ক্লান্ত তাই রাতের খাবার না খেয়েই শুয়ে পরলো। আর কিছু দিন চলে গেলো রাজু আর রিয়ার। রাজু একদিন অফিসে যাওয়ার সময় গাড়ি দুর্ঘটনায় পরে। তাকে হাসপাতাল ভর্তি করানো হয়।

কয়েকদিন পর রাজু মারা যায়। রিয়া এ কথা শুনা মাত্রই জ্ঞান হারিয়ে পরে যায় জ্ঞান ফিরলে রিয়া জানতে পারে ৪দিন কেটে গেছে আর রাজুকেও মাটি দেওয়া হয়ে গেছে। কথায় আছে অভাগীর কপালে সুখ সহয় না। আর রিয়ারও তাই হলো। হাসপাতাল থাকে বাড়ি ফিরতেই দেখে,,

৯ম পর্ব

রিয়া বাড়ি গেলে দেখে তার দেবরা সবাই বাড়িতে। তাকে দেখে সবাই বলে এই বাড়িতে এখন আর রাজু নাই তাই এখান থেকে যেনো চলে যায়। রিয়া যেতে না চাইলে তাকে মেরে বের করে দেয়। রিয়া পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ সব শুনে ডাইরি করে। রাজুর ভাইদের ধরে আনে। তারা অনেক টাকা দিয়ে দেয় পুলিশকে তাদের ছেড়ে পুলিশ উল্টো রিয়াকে মেরে থানা থেকে বের করে দেয়।

ওখান থেকে বের হয়ে রিয়া চলে যায় নদীর উপর ব্রিজে আত্মহত্যা করতে। রিয়া ভাবছে আর বেচে কি হবে।

তখন এক রিক্সা চালক রহিম মিয়া রিয়াকে বাচিয়ে বলে কি হয়েছে।
রিয়া সব বলে তাকে।

সব শুনে রহিম মিয়া রিয়াকে বোন বলে ডাকে। তারপর বস্তিতে নিয়ে যায়। রিয়ার জন্য একটা থাকার ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়।

রিয়া তারপর একটা কম্পানির দিনমজুরের কাজ করে। আর নিজের খরচ করার পর কিছু টাকা জমায় বাচ্চার জন্য।

দেখতে দেখতে বাচ্চা হওয়ার সময় হয়। তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করায় রহিম মিয়া ও তার বউ।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বলে রিয়ার ছেলে হয়েছে।।
তারা সবাই খুশি,

রিয়া তাকিয়ে আছে তার বাচ্চার দিকে। সে ভাবছে বাচ্চা বড় হয়ে তার পিতার কথা জানতে চাইলে কি বলবে। রিয়ার চোখ বেয়ে পানি পরছে।

মনে মনে ভাবছে। বাচ্চার নাম ওটাই রাখবে যা রাজু সাথে বলতো যে ছেলে হলে নাম রাখবে রিয়াজ । রিয়া তাই করলো নাম রাখলো রিয়াজ।
কিছু দিনের মধ্যেই রিয়া সুস্থ হয়ে যায়।

তারপর বাচ্চাটাকে রহিম মিয়ার বউয়ের কাছে রেখে কাজ করতে যায়।
কিছুদিন পর রিয়া কাজ থেকে ফিরছে এক লোক তাকে বিয়ে করবে বলে রিয়া কিছু না বলে চলে আসে।

এভাবে প্রতিদিন লোকটা বলে। তারপর একদিন রিয়া বলে আমার বাচ্চা। লোকটা বলে আমি তারপরও বিয়ে করবো।
রহিম মিয়ার সাথে কথা বলে বিয়ে ঠিক করে। লোকটার সাথে রিয়ার বিয়েটা হয়ে যায়।
তখন রিয়াজের বয়স ৩ বছর।

এখন রিয়া তার বাচ্চা নিয়ে স্বামীর বাড়িতে থাকে। তার স্বামী তার বাচ্চা ও তাকে অনেক ভালবাসে। কিছুদিন পর রিয়া জানতে পারে তার স্বামীর আরেকটা বউ আছে ।

এ কথা তাকে জিঙ্গেস করলে তাকে মেরে বের করে দেয়।
রিয়া আবার চলে আসে বস্তিতে।
আবার কাজ খুজে রিয়া, একটা বাসায় কাজ নেয়। বাসার লোক গুলো ভাল। একদিন বাসার সবাই বাহিরে গেলো। রিয়া একা বাসায় থাকে। বাড়ির মালিক সবার আগে বাসায় ফিরে আসে।

আর রিয়ার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু পারে নি রিয়াকে কাজ থেকে বের করে দেয়। ও সব না করায়।

এবার কি করবে রিয়া ভাবতে ভাবতে বস্তিতে চলে আসে এসে বাচ্চাকে কিছু খেতে দিয়ে ও ভাবছে। এখন ছেলের বয়স প্রায় ৪বছর। স্কুলে ভর্তি করাবে কিন্তু টাকা কই,,,

রিয়ার এখন চিন্তা ছেলে কে স্কুলে ভর্তি নিয়ে।
রিয়া কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে স্কুলে ভর্তির জন্য নিয়ে যায়।
আর ভর্তি করায়

কিছুদিনের মধ্যেই আাবার কাজ বের করে নেয়। সে দিন কাজ করে বাসায় ফিরতে ছিলো একটা গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।
তাকে হাসপাতাল ভর্তি হয় এবার ঔষধের টাকা কই পাবে। রহিম মিয়া কিছু দেয় যা পারে।

১০ম ও শেষ পর্ব

দুদিন পর,
রহিম মিয়া অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা ঋণ করে জোগাড় করে,রিয়ার চিকিৎসার জন্য। রহিম মিয়ার কাছে থাকতো রিয়াজ। রিয়া ভাল হতে প্রায় ২সপ্তাহ লেগে যায়। রিয়া বস্তিতে এসেও রহিম মিয়ার বাসায় খেতো কারন তার ঘরে কোন খাবার ছিলো না।

কয়েকদিন পর রিয়া তার ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি আসে। তার সৎ ভাইটাও বড় হয়ে গেছে। রিয়াকে দেখে তার মা অনেক খুশি ভাবছে রিয়ার অনেক টাকা আছে
।রিয়ার মা ও ভাই অনেক কষ্টে জিবন কাটাচ্ছে।
রিয়া গ্রামে আসছে তার বাবার জমির ভাগ নিতে।

রিয়া চাওয়া মাত্রই দিয়ে দিলো তার মা। গ্রামের জমি বিক্রি করে ৫লাখের মত। ওখান থেকে যাওয়ার আগে তার মাও ভাইকে ১লাখ টাকা দিয়ে চলে আসে শহরে।

এত টাকা তার কাছে রহিম মিয়াও জানে না।

বস্তিতে এসে রিয়া তার ঘরেই টাকা রেখে দিলো। আর রহিম মিয়ার পাওনা টাকা সব দিয়ে দিলো। এবার রিয়া কি করবে তার কাছে আরো ৩লাখের উপরে আছে। রিয়া ভাবছে যদি রাজুর টাকা পেতো তাহলে কোন ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাড়াতে পারতো।

বস্তিতে একজন শিক্ষক ছিলো তার কাছে গেলো জানতে যে কি করা যায়।রিয়া সব কিছু বলে তাকে। সব শুনে শিক্ষক রিয়াকে বলে রাজুর ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করতে তার পর আদালত তাকে সম্পদ বুঝিয়ে দেবে।

রিয়া তাই করলো রাজুর ভাইদের নামে মামলা করে দিলো। আর কিছু টাকা দিলো পুলিশকে যেনো তাদের। ধরে আনে। পুলিশও টাকা পেয়ে রিয়ার কথা মত চললো। রাজুর ভাইদের আদালতে আনলে বিচার করে রাজুর সব টাকা রিয়াও রিয়াজের নামে দিলো।

রিয়া প্রায় সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টাকা পেলো।রিয়া সব টাকা নিয়ে এই শহর ছেড়ে চলে যায় আর সাথে রহিম মিয়াকেও নিয়ে যায়। কারন তাদের কারনেই আজও সে বেচে আছে। নতুন শহরে এসে একটা বাসা নিলো যেখানে সবার জায়গা হবে।

রিয়াজকে ভর্তি করিয়ে দিলো একটা ভাল স্কুলে। আর রিয়া তার টাকা দিয়ে দুটা দোকান ভাড়া নিলো। রহিম মিয়াও তার স্ত্রী কে কাজ হিসেবে বেতন দেবে বলে একটা দোকানে তাদের রাখলো রিয়া।

আরেকটায় রিয়া কিছু লোক নিয়ে দেখাশোনা করতে দিলো। রিয়া দুটাই দেখে। সেতো মালিক দোকান দুটার
।কয়েক বছর পর রিয়া তার ব্যবসা ভালই চলছে। তার ব্যবসায় উন্নত হয়ে আরো চার দোকান রাখলো।

কিছুদিন পরই সব দোকানের আয়ে রিয়া একটা বাড়ি করলো যা নিজের নামেই। রিয়াজও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে পড়ালেখাও করতেছে।

রিয়া এখন অনেক টাকা পয়সার মালিক। আর তার জীবনের সব কষ্ট চলে গেলো। রিয়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেবে হয়তো। এখন রহিম মিয়াও অনেক টাকার মালিক হলো। সবাইকে নিয়ে রিয়ার আরেক সুখের জীবন কাটতেছে। অভাগীর কপালে এখন শুধু সুখ আর সুখ।।।

সমাপ্ত

আরো গল্প পড়ুন

4 thoughts on “অভাগী মেয়ে (বাংলা গল্প) ১ম-শেষ পর্ব- সোলাইমান রানা”

    1. এই গল্পগুলো কপিরাইটের অধীনে। তাই আপনি চাইলেই এটি নিতে পারবেন না। তবে হ্যাঁ, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিতে পারেন। অবশ্যই এটি বিক্রি, শেয়ার, বিতরণ দণ্ডনীয় অপরাধ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top