বিড়াল (ছোট গল্প)- মোঃ আরিফ হোসেন

গল্প-বিড়াল
লেখক-মোঃ আরিফ হোসেন

প্রিয় বিড়ালটা কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। রাজা মশাইও কাজে ব্যস্ত। তাই নিজে খোঁজ করে দেখার সময় তো নাই বরং কাউকে দিয়ে খোঁজ করারও জুড়ি মেলা ভার। দু চারদিনে একটু কাজ কম হলে রাজা মশাই একজন পাহারাদারকে বললো বিড়ালটার খোঁজ নিতে। সে অনেক খুঁজেও পেলো না। তবে, সেও কয়েকজনকে বলে রাখলো বিড়ালের খোঁজ করতে।

বিড়াল
বিড়াল

অবশেষে একদিন বিকালে বিড়ালের খোঁজ মিললো। পাশের একটা নিচু বংশীয় হিন্দুর ঘরে বিড়ালটা বাচ্চা প্রসব করেছে। যে প্রথম দেখেছে সে এসে খবর দিলো পাহারাদারকে। বিকালের স্নিগ্ধ ছায়ায় রাজা মশাই তখন বাগানে দোলনায় দোল খাচ্ছে। এমন সময় পাহারাদার হাঁফাতে হাঁফাতে এলো।

পা:: মহারাজের জয় হোক। আপনার পালিত প্রিয় বিড়ালটির সন্ধান মিলছে।
রাজা:: কোথায়? চলো দেখবো।
পা:: কিন্তু মহারাজ, বিড়ালটা পাশে এক তাঁতি বাড়িতে বাচ্চা প্রসব করেছে। আপনি যাবেন সেখানে?
রাজা:: তাহলে থাক। তবে তুমি দেখে আসো বিড়ালটা কয়টা বাচ্চা প্রসব করেছে।
পা:: আজ্ঞে মহারাজ।

রাজার হুকুম পেয়ে পাহারাদার চলে গেলে সেই বার্তাবাহকের কাছে। এবং তাঁতির বাড়িতে দেখে আসতে বললো বিড়ালের কয়টা বাচ্চা হয়েছে।
যথাসময়ে বার্তাবাহক তাঁতির বাড়িতে গেলো এবং বিড়ালের বাচ্চার খবর নিয়ে ফিরে এলো।
সে এসে জানালো বিড়ালটার চারটা বাচ্চা হয়েছে।
খবর পেয়ে পাহারাদার ছুটলো রাজা মশাইয়ের কাছে।

পা:: মহারাজের সুনাম হোক। মহারাজ, আপনার প্রিয় পালিত বিড়ালটির চারটা বাচ্চা হয়েছে।
রাজা:: ও আচ্ছা। চারটা বাচ্চার মধ্যে কয়টা ছেলে আর কয়টা মেয়ে?
পা:: মাফ করবেন মহারাজ, আমি তা দেখি নাই। আমি এক্ষুণি দেখে আসছি।
রাজা:: ঠিক আছে যাও।

রাজার পূনরায় হুকুম পেয়ে পাহারাদার গেলো বার্তাবাহকের কাছে। তাকে বললো বিড়ালের চারটি বাচ্চার মধ্যে কয়টি ছেলে আর কয়টি মেয়ে তা দেখে আসতে।

কিছুক্ষণ পর বার্তাবাহক ফিরে এসে জানালো বিড়ালটার দুইটা বাচ্চা হয়েছে ছেলে আর দুইটা বাচ্চা হয়েছে মেয়ে। এই শুনে পাহারাদার খুশিতে গদগদ হয়ে ছুটলো রাজার কাছে।

পা:: মহারাজের জয় হোক। মহারাজ, আপনার পালিত প্রিয় বিড়ালটির চারটা বাচ্চার মধ্যে দুটো হয়েছে ছেলে আর দুটো হয়েছে মেয়ে।
রাজা:: ভালো ভালো। তবে তো অনেক ভালো হলো। জোড়ায় জোড়ায় গলায় গলায় মিল হলো। আচ্ছা, বাচ্চাগুলোর গায়ের রঙ দেখতে কেমন?
পা:: দোষ নিবেন না মহারাজ। এটা খেয়াল করিনি। আমি বরং এক্ষুনি দেখে আসতেছি।
রাজা:: তাই করো।

আবারও হুকুম পেয়ে পাহারাদার ছুটলো বার্তাবাহকের কাছে। এবং তাকে বললো, তুমি বিড়ালের বাচ্চাগুলোর গায়ের রঙ দেখে আসো। সেই সাথে তাদের কি নাম-ধাম, নাক, কান, চোখ, মুখ সব দেখে আসো। তাঁতি পরিবারের সবার খোঁজখবর নিয়ে আসো। দেখো তারা কি চায়, কি খায়।
হুকুম পেয়ে বার্তাবাহক চলে গেলো তাঁতির বাড়ি।
এবার আর ভুল হওয়ার নয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বার্তাবাহক সব দেখে যাচ্ছে।

এদিকে তাঁতি পরিবারের গৃহবধূ বিড়ালের বাচ্চা প্রসব হওয়ার সাথে সাথেই বাচ্চার সাথে বিড়ালের পেট থেকে বের হওয়া ফুলটি সরিয়ে রাখে। কে যেনো বলছি এটা নাকি গোপন সম্পদ। যার বাড়িতে থাকবে সে বড়লোক হবে।
অবশেষে সব খবর নিয়ে বার্তাবাহক গেলো পাহারাদারের কাছে।
পাহারাদার গেলো রাজার কাছে।

পা:: মহারাজ দীর্ঘজীবী হোন। খবর এনেছি মহারাজ।
রাজা:: আচ্ছা বলো তবে।
পা:: আপনার পালিত প্রিয় বিড়ালটির চারটা বাচ্চার মধ্যে একটা বাচ্চা কালো কুচকুচে। একটা ধূসর রঙের একটা কালো সাদার মিশ্রণ আরেকটা, মহারাজ দেখতে আপনার প্রিয় বিড়ালটির মতই হয়েছে।

খবর শুনে মহারাজ খুব খুশি। প্রসন্ন মনে বললো, যাও সেই হিন্দু বাড়ির অভিভাবককে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বিড়ালটিকে বাচ্চাসহ নিয়ে আসো।
পাহারাদার একশত স্বর্ণমুদ্রা তাঁতি পরিবারকে দিয়ে বিড়ালটি নিয়ে আসলো। আর বাকি নয়শত স্বর্ণমুদ্রা নিজের থলিতে।

এদিকে একশত স্বর্ণমুদ্রা পেয়ে তাঁতিও খুব খুশি। তখনকার সময় মুদ্রার বাজারমূল্য থাকায় তাঁতিও বড়লোক হলো। তারা ভাবলো সবকিছু বিড়ালের ফুলের কেরামতি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top