পেঁয়াজের মত ভালোবাসা
মো: আরিফ হোসেন
এক ধনী লোকের তিনটি মেয়ে ছিল। একদিন ধনী লোকটি সিদ্ধান্ত নিলো তার মেয়ে তিনটিকে পরীক্ষা করা দরকার কে তাকে ভালোবাসে৷
যেই কথা সেই কাজ। ধনী লোকটি তিন মেয়েকে ডেকে পাঠাল। তিন মেয়ে এলে তাদেরকে সামনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোন মেয়ে তাকে কেমন ভালোবাসে।
বড় মেয়ে বললো, বাবা আমি তোমাকে হীরার মত ভালোবাসি। ধনী লোকটি মেয়ের মুখে এমন ভালোবাসার কথা শুনে তো অবাক হলো। খুশিও হলো খুব।
এবার মেজো মেয়ের পালা। মেজো মেয়ে বলল, বাবা আমি তোমাকে সোনার মত ভালোবাসি। ধনী লোকটি মেয়ের মুখে সোনার মত ভালোবাসার কথা শুনে খুব খুশি হলো।
এবারে ছোট মেয়ের পালা। ছোট মেয়ে মুখে আলতো হাসি ফুটিয়ে, নাক বাকিয়ে, গলা খেকরিয়ে, চুল ঝেড়ে বললো, বাবা আমি তোমাকে পেঁয়াজের মত ভালোবাসি।
কবিতা পড়ুনঃ পেঁয়াজ নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা “বাজাও তালি”
এই শুনে ধনী লোকটি মুখ কালো করে ফেলল। খুবই মন খারাপ করলো। মনে হল চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। ছোট মেয়ের ব্যবহারে লোকটি খুব কষ্ট পেল।
তার বাড়ির দারোয়ানকে সঙ্গে দিয়ে ধনী লোকটি তার ছোট মেয়েকে পাঠিয়ে দিল বনবাসে। ছোট মেয়েটি দুঃখ ভারাকান্ত মন নিয়ে দারোয়ানসহ বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। এদিকে ধনী লোকটি কিছুদিন পর তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিল। উপহার হিসাবে দিল অনেকগুলো হীরার মোহর,গহনা।
বড় মেয়ের বিয়ের আমেজ শেষ হতে না হতেই এবারে মেজো মেয়ের বিয়ের কথা উঠলো। যোগ্য পাত্র দেখে, ঘরবর ঠিক করে ধনী লোকটি তার শেষ মেয়ে, অর্থাৎ মেজো মেয়ের বিয়ের আয়োজন করল।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, কাসর-ঘন্টা বাজিয়ে মহা আমেজে বিয়ে দিল মেজো মেয়েটির। উপহার হিসাবে দিল অনেকগুলো সোনার গহনা।
তাতে কত কি! হাতের চুড়ি, কানের দুল, নাকের ফুল। আবার সোনার একটা পালঙ্ক। দুটো মেয়েকে মহা ধুমধামে বিয়ে দিয়ে ধনী লোকটি যেন হাঁফছেড়ে বাঁচল।
দেখতে দেখতে মাস যায়, বছর যায়, সময় ফুরায়৷ হঠাৎ এক বছর ধনী লোকটির এলাকায় নেমে এলো একটি বড় রকমের বিপর্যয়।
পেঁয়াজের সংকট শুরু হয়েছে। দামও চড়চড় করে চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে। একটা সময় দেখা দিল পেঁয়াজ আর পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি হীরার দামেও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ধনী লোকটির বড় মেয়ে তার সমস্ত হীরা বিক্রি করে দিল এক কেজি পেঁয়াজ কেনার জন্য। তবুও কোথাও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে মেজো মেয়েটিও তার সমস্ত সোনার অলংকার বিক্রি করে দিল এক কেজি পেঁয়াজ কেনার জন্য। কিন্তু কপালের নির্মম পরিহাস! কোথাও কেনার মত পেঁয়াজ নাই।
ধনী লোকটি এবার নিজেই বের হলো পেঁয়াজের সন্ধানে। তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, বন পেরিয়ে, সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে গেল মস্ত এক বনে৷
সেই বনে ঢুকতেই ধনী লোকটির নাকে লাগল পেঁয়াজের ঝাঁঝ। বাপ রে কি ঝাঁঝ। শুঁকলেই পরাণ জুড়ায়। অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে ছোট একটি অট্টালিকা। ক্ষুধার্ত পরিশ্রান্ত ধনী লোকটি ঢুকে গেল অট্টালিকায়। বাপ রে কি মায়া! কি চমৎকার কারুকাজ! কি তার শোভা! দেখলেই পরাণ জুড়ায়। এ যেন অট্টালিকা নয়। স্বর্গ!
ধনী লোকটি অনেকদিন হলো পেঁয়াজের গন্ধ পায় না। আজকে পেঁয়াজের গন্ধ পাওয়ায় মনে হচ্ছে যেন স্বর্গের কোন ফুলের সুভাস মর্ত্যে নেমেছে।
ধনী লোকটির সামনে খাবার দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজের সালাদ তো আছেই। তাছাড়াও বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সব খাবার। ধনী লোকটি মন ভরে পেট পুরে সব খাবার খেল। বাপ রে! এমন খাবার মনে হয় জন্মেও খাওয়া হয় নাই। কি স্বাদ! কি তার গন্ধ!
হঠাৎ ধনী লোকটি পুরনো স্মৃতিতে চলে গেল। তার তৃতীয় মেয়ের কথা মনে এসেছে। মেয়েটি বলেছিল তাকে পেঁয়াজের মত ভালোবাসে। তাহলে তো হীরা আর সোনার চেয়েও পেঁয়াজ খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এবং খুব দামী জিনিস।
এমন সময় ধনী লোকটির ছোট মেয়েটি সামনে এসে বললো, বাবা আমাকে চিনতে পারছো? আমি তোমার ছোট মেয়ে। ওই যে একদিন তোমাকে বলছিলাম আমি তোমাকে পেঁয়াজের মত ভালোবাসি। তাই শুনে তুমি আমাকে বাড়ি থেকে দারোয়ানসহ বের করে দিয়েছ।
আমরা এখানে এসেছি। আর দারোয়ান আমাকে বিয়ে করেছে। কিন্তু বাবা আমরা পেঁয়াজের কথা ভুলি নাই। সেদিন থেকেই বেশি বেশি পেঁয়াজের চাষাবাদ শুরু করি।
ধনী লোকটি তার সমস্ত ভুল বুঝতে পেরে ছোট মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইলো এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে ছোট মেয়েকে হীরা আর সোনার অনেক অলংকার দিতে চেয়ে বাড়িতে নিয়ে এলো৷ সেইসাথে পেঁয়াজগুলোও নিয়ে এলো এবং পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় এলাকায় নতুন করে শান্তি ফিরে এলো।
আরো পড়ুন…..
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ৪র্থ পর্ব
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ৩য় পর্ব
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ২য় পর্ব
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মো: আরিফ হোসেন | ১ম পর্ব
- রক্ত হিম করা ভূতের গল্প “গায়েবি দোকান” | মো: আরিফ হোসেন
পেঁয়াজের মতো ভালোবাসা
“পেঁয়াজের মত ভালোবাসা” গল্পটি সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে রচিত। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী। তাই আগের নুনের গল্প অনুসরণে এই গল্প রচনা করেছেন মোঃ আরিফ হোসেন।