ছোট গল্পঃ গঙ্গাদেবীর পুঁটলি
লেখকঃ মোঃ আরিফ হোসেন
আমি যাদবপুরের মাধব আলী। সারাদিন ডানে যা বায়ে যা বলেই দিন যায়। গরুর হাল বোহাই। একদিন জমিতে হাল দিচ্ছি। এমন সময় একটা পুঁটলি পেলাম।…………..
আরে শুনেন আগে…
আমি তো মনে করছি রাজ রাজাদের ধন হবে হয়তো। অতি সাবধানে, পায়ের মৃদু তালে, হালের জোঁয়ালে, হেলেদুলে পুঁটলিটা বাড়িতে আনলাম।
বিপত্তি ঘটলো অন্য জায়গায়….
কে যেনো বলছিলো মেয়েদের মনে কথা থাকে না। আমার বউয়ের মুখটাও ভালো। মনটা তারচেয়ে ভালো। সবাইকে সব কথা বলে বেড়ায়।
এইতো গত কয়দিন আগে আমি গেছি কেশবপুর, দুইটা হালের গরু কিনতে। কোন হতচ্ছাড়া যেনো বউয়ের কানে কানে বলেছে আমি নাকি নিকা করতে গেছি। এই নিয়ে বউ এলাকা তোলপাড়! কান্না করতে করতে আমার জমিনের সব ধুলা তার গায়ে। যখন কেশবপুর থেকে দুটো গরু নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম, তখন পাড়াসুদ্ধ লোক অবাক!
কুড়ি ছুঁইছুঁই এক পাড়ার ভাবি তো মুখের উপরে বলেই দিলেন, ‘নে লো সই, তোর জামোই তোর জন্য দুইটা সতীন আনছে’। আজকের এই সাত রাজার ধন রক্তের বাঁধন যদি বউয়ের নজরে পড়ে তাহলে যমরাজও ভ্রু কুঁচকাবে।
আমি অতি সাবধানে সঙ্গোপনে পুঁটলিটা ঘরের পিছনের বাঁশের ঝাড়ে পাতা চাপা দিয়ে রেখে এলাম৷ তাই দিয়ে কি হয়? সত্য তো গোপন রাখার নয়। পুঁটলিটা বউয়ের সামনে পড়বে এটা যেমন সত্য তেমনি বউ সবাইকে বলে বেড়াবে এটাও তেমন সত্য।
আমি বাজার থেকে লাল টুকটুকে দেখে একটা শাড়ি, তিনখানা লাল ব্লাউজ, একটা লাল পেটিকোট আর দুইটা লাল ক্লিব আনলাম৷ তবে দোকানদারের কাছে শর্ত দিলাম যেনো কাপড়গুলোর রং উঠে।
বাড়িতে ফেরার পথে একটা খরগোশের বাচ্চা পেলাম। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধিটা এলো।
……………..???
বউতো কাপড় পেয়ে মুখ গোমরা করে বসে আছে। তার নাকি লাল কাপড় পছন্দ না। আমি তাকে বললাম, আচ্ছা গিন্নি তাহলে কাপড়গুলো দাও গঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসি গে।
এই বলে কাপড় সব নিয়ে বেরিয়ে গেলাম পুকুর ঘাটে। কাপড়গুলো সব ধোয়ার পর তার নিজস্ব রং বেরিয়ে এলো। আমিও হাসিখুশি মনে বউকে বললাম, “এই নাও গঙ্গাদেবীর উপহার। কাপড়গুলো গঙ্গায় বিসর্জন দিতে গিয়ে দেখি দেবী আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
পরে আমার দুঃখের কাহিনি শুনে কাপড়গুলো নিলো। আর এই কাপড়গুলো দিলো৷ সেই সাথে দেবীর বাহন তিলোত্তমাকে দিলো। জানো তো, তিলোত্তমা হলো দেবীর হাতির নাম।”
এই বলে খরগোশের বাচ্চাটাকে বের করে এনে দিলাম। বউতো খরগোশ দেখে চমকে উঠলো৷ এই না হলো তোমার হাতি? এই বলে বউ কটকট করে আমার দিকে তাকালো।
আমিও কম যাই কই। বউকে বললাম, “দেবী এটাকে খরগোশ বানিয়ে দিছে।” বউ তাতেই বিশ্বাস করলো।
এবার আমার আসল খেল শুরু। গুটিগুটি পায়ে হাঁটিহাঁটি গিয়ে বের করে আনলাম পুঁটলি।
বউয়ের সামনেই পুঁটলিটা খুলে দেখি চকচকে দুখান গলার হার। সোনার হার কেরোসিনের বাতির সামনে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। এই দেখে বউ বললো, “হ্যাঁ লো, তুমি এটা কোথায় পেলে গো? আমায় একটা দাও না গো? একটু পরে দেখিনি!”
আমি বললাম, “ধুত্তোরি ছাই। এটা গঙ্গাদেবীর দান। এটাকে গলায় দেওয়া যাবে না৷ দেবী বলেছে এটাকে গোপন কোথাও পুঁতে রাখতে। তাহলে আমার ক্ষেতের আবাদ বৃদ্ধি হবে।”
এই শুনে বউ কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, “বাদ দাও আবাদ। এই হার দুটো দিয়েই আমাদের সংসার চলবে। তুমি তারচে বরং এদুটোর একটি আমায় দাও। আর একটি পুঁতে রাখো।”
দেখলাম বউ পুরোপুরি পাগল হয়েছে। আমিও সটাং করে বের হয়ে বানিয়ার কাছে গেলাম। মোটা অংকের টাকাও পেলাম৷ সেই টাকা রেখে এলাম ভিনগায়ের এক মাসীর বাড়িতে।
এদিকে বউ পরেরদিন শুরু করেছে ফিসফিসানি কানাকানি। যায়দিন বাজে বীণ। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে গেলো আমি নাকি গঙ্গাদেবীর দান পেয়েছি। দলে দলে লোক এসে তলে তলে চুপিচুপি কথা বলতেছে।
কানাঘুঁষার এক পর্যায়ে এলো এলাকার মেম্বার। সাথে কিছু চেলাচামুণ্ডা। বুঝলাম বিপদ বাড়ছে আপদ। বসলো আমার নামে বিচার। আমার দোষ হলো, এতো বড় গোপন জিনিস পেয়েও এলাকার লোকদের দেখালাম না কেনো?
আমিও সাচ্চা জওয়াব দিছি। ‘শুনেন পারিষদ, আমার বউয়ের ইদানীং মাথা খারাপ হয়েছে। তার মাথায় সবসময় গঙ্গাদেবী ঘুরে। আপনারা তাকেই জিগ্যেস করেন আর কি কি পেয়েছি গঙ্গাদেবীর কাছে থেকে।’
বউ এসে সবাইকে বলল, “মিনসে মিথ্যা বলছে। আমার মাথা খারাপ নয়। উনি গত কাল দেবীর কাছে থেকে লাল কাপড়ের বদল অন্য কাপড় এনেছে। সেই সাথে দেবীর বাহন তিলোত্তমাকে এনেছে। জানেন তো তিলোত্তমা হলো দেবীর বাহন। এটা গঙ্গাদেবীর হাতির নাম। এই দেখুন সেই হাতি।”
- বোর্ড চ্যালেঞ্জ করার নিয়ম ২০২৪ | খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন
- নম্বর সহ পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার নিয়ম | সবার আগে ফলাফল দেখুন
- ডিজিটাল স্মার্টবোর্ড দিয়ে শিক্ষার নতুন দিগন্তের সূচনা!
- আধুনিক খাটের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ
- কেন গিগাবিট রাউটার ছাড়া অন্য রাউটার কেনা উচিত নয়?
এই বলে বউ সবার সামনে খরগোশের বাচ্চাটাকে দেখালো। লোকজন সবাই মাথা নিচু করে হাঁটা শুরু করলো। তাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে বউয়ের মাথা খারাপ।
মাথা খারাপের সোরগোলে বউ পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলো। বেখেয়ালি কোন কথা আর তার মুখে শুনি না। আমিও মাসীর বাড়ি থেকে টাকা এনে আবাদে মন দিলাম। এ বছর গঙ্গাদেবীর আশীর্বাদে আবাদে ভালো ফসল পেলাম। মাঁচা ভর্তি লাউ-কুমড়োর চালি, আলু, শসা আরো কত কি!
ফসল বেচে বউয়ের জন্য কিনে আনলাম একটা সোনার হার। হার পেয়ে বউ তো মহা খুশি। আর সেই খুশিটা টের পেলাম ঘুমানোর আগে। বউ বললো,’ হ্যাঁ গো, তুমি কত্ত শুকিয়ে গেছো। অনেকদিন হয় তোমার সাথে ঘুমাই না।’
বউয়ের এমন ইয়ানি বিয়ানি কথা শুনে বুঝলাম আজকে বউ অন্য কিছুতে ডুবে যাবে। মন তার বেজায় নরম। সে বললো, ‘শুনো না গো, আজকে আমাকে কিছু পচা কথা বলো না গো। কতদিন তোমার মুখে পচা কথা শুনি না!’
আমিও সুযোগ পেয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ গো গিন্নি, আমাদের আবাদে এবার বেজায় ক্ষতি হয়েছে। কিছু মিষ্টি কুমড়োতে পচা রোগ ধরেছে। কিছু আলু তো পচেই কাবাব হয়েছে।’
গঙ্গাদেবীর পুঁটলি গল্পের বিস্তারিত
গঙ্গাদেবীর পুঁটলি শীর্ষক গল্পটি লিখেছেন মোঃ আরিফ হোসেন। মূলত গল্পটিতে দাঁড় করানো হয়েছে একজন গরীব কৃষককে নিয়ে। যে রম্যকথার ছলে নিজের পরিচয় দেয়। তার স্ত্রীর পরিচয় দেয়।
গরীব কৃষকটি গুপ্তধন প্রাপ্ত হওয়ার পর তার স্ত্রী অদূরভবিষ্যৎ আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত হন। অবশেষে একটি কৌশল প্রয়োগ করে বউয়ের ছড়ানো কথাগুলোকে ধামাচাপা দেন। পরিশেষে, গুপ্তধনের বদৌলতে সুখে শান্তিতে কৃষক দম্পতির সংসার চলতে থাকে।
ভাল হইছে ভাইয়া।