মাছের মায়ের পুত্রশোকে, কুমির কাঁদে অষ্টপ্রহর
(শিশুতোষ গল্প)
মোঃ আরিফ হোসেন
নদীটার দু’ধারে ঘন জঙ্গল। জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসে বাঘ, ভালুক, হরিণ, বানর, বুনো হাতি, মহিষ আরো কত কি। বুনোহাঁস তো সবসময় নদীর জলে সাঁতার কাটেই। বনের পশুপাখি অনেক সুখে দিন কাটায়। বন থেকে খাদ্য গ্রহণ করে নদীর জলে তৃষ্ণা মেটায়।
নদীটা খুব গভীর। নানান প্রজাতির মাছ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন: চিতল, ফলি, মাগুর, কৈ, শিং, পাবদা, গুলশা, কটকটিয়া, বালিয়া, পুটিতোর, শংক, উপরচৌখা ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির শামুক তো আছেই। এছাড়াও ছোট ছোট কিছু হাঙ্গর আর কুমিরও মাঝে মাঝে মাছেদের ভিতরে ঢুকে বড় বড় মাছ শিকার করে।
বনের পশুপাখিরা যেমন সুখে শান্তিতে দিন কাটায়, মাছেদের তেমন সুখ নাই। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকতে হয়। মাঝে মাঝে কিছু মাছ নদীর দু’ধারে এসে বুনো হাতি, বানর, সিংহ আর মহিষের কাছে তাদের দুঃখের কথা বলে।
মাছদের সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো কুমির। একটা বড় কুমির আছে। সে হয়তো দলের প্রধান। সে আর তার দল নিয়ে আসে মাছ শিকার করতে। বনের পশুরা মাছেদের দুঃখের কথা শুনে সামান্য হাহুতাশ করে চলে যায়। কিন্তু কোন সমাধান দিতে পারে না৷
নদীতে ছিলো ইয়া বড় দুটো গজার মাছ। একটা বাবা গজার মাছ আর একটা মা গজার মাছ। তাদের একশো ছেলেমেয়ে।
কিন্তু কুমিরের দল প্রায় এসে বাচ্চাদের খেতে খেতে এখন এগারোটা মেয়ে বাচ্চা আর একটা ছেলে বাচ্চা আছে। তাই বাবা গজার মাছ আর মা গজার মাছ অনেক চিন্তায় আছে।
আরো গল্প পড়ুন…..
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ৪র্থ পর্ব
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ৩য় পর্ব
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মোঃ আরিফ হোসেন | ২য় পর্ব
- ধারাবাহিক ভৌতিক গল্প “ভয়ংকর পাতালপুরী” | মো: আরিফ হোসেন | ১ম পর্ব
- রক্ত হিম করা ভূতের গল্প “গায়েবি দোকান” | মো: আরিফ হোসেন
গজার মাছের শরীর চিকচিক করে বলেই কুমির তাদের তাড়াতাড়ি ধরতে পারে। তারা অন্যান্য মাছদের সাহায্য চায়। বনের পশুদের কাছে সাহায্য চায়। কিন্তু কেউ তাদের সাহায্য করে না। করবে কি করে? সবার জীবন তো অতিষ্ঠ হয়ে আছে কুমিরের জ্বালায়।
বাবা গজার মাছ মাঝে মাঝে শোল, টাকি, মাগুর আর বোয়াল মাছদের একজন করে লিডার নিয়ে মিটিং করে। কিন্তু কিছুতেই কিছু আসে যায় না। দেখা যায় তাদের মিটিং চলাকালে কুমির এসে হামলা চালায়। সবার একটাই কথা, এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না৷ যে করেই হোক কুমিরের হাত থেকে নিস্তার পেতেই হবে।
অবশেষে কুমির তার দল নিয়ে মাছ শিকার করতে করতে এগিয়ে আসে। মাছেরা ছুটোছুটি করে পালাতে থেকে। এমন সময়, গজার মাছের ছেলে বাচ্চাটি পড়ে যায় কুমিরের সামনে।
কুমিরও ঝোপ বুঝে কোপ মারে। টুপ করে গিলে খায় বাচ্চা মাছটিকে। তাই দেখে মা গজার মাছ কান্নায় ভেঙে পড়ে।
এদেকে কুমিরের দল কিনারায় পৌঁছে গেলে হাতি তার লম্বা শুঁড় দিয়ে কুমিরকে ডাঙ্গায় তুলে আনে। শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে কুমিরকে উপরে তুলে দেয় এক আছাড়।
বাপরে বাপ! সেকি শব্দ। কুমিরের মেরুদন্ড মটাশ করে ভেঙে যায়। সাথে সাথে কুমিরের দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। এই অবস্থায় কুমির দৌঁড়ে পানিতে নামে। কিন্তু তার চোখে পানি ঝরতেই থাকে।
এদিকে মা গজার মাছ পুত্র শোক ভুলতে পারে না। অন্যান্য সব মাছের কাছে গিয়ে তার শোক প্রকাশ করে। আর কুমির যখন খুব খুশি হয় তখনো কাঁদে। খুব রাগ হলেও কাঁদে।
গল্পটির সম্পর্কে কিছু কথা
মাছ ও কুমিরের একটি শিশুতোষ গল্প “মাছের মায়ের পুত্রশোকে কুমির কাঁদে অষ্টপ্রহর”। গল্পটি একটি রুপক গল্প। এই গল্পটি লিখেছেন মোঃ আরিফ হোসেন।