অবাক বাজি | বাংলা গল্প | মোঃ আরিফ হোসেন

গল্প- অবাক বাজি
লেখক- মোঃ আরিফ হোসেন

মতিন আর বারেক ভালো বন্ধু হলেও তাদের মধ্যে সবসময় মতের বেমিল দেখা যায়। ধরে নিলাম মতিন বাজারে যাবে প্রধান সড়ক দিয়ে। কিন্তু বারেক? বারেক হচ্ছে বিপরীত ভাবুক ছেলে। সে যাবে মেঠোপথ দিয়ে।

সবসময় দুজনের মাঝে এ নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকে। তা স্বত্বেও দুজনে একইসঙ্গে নানান কাজ করার চেষ্টা করে। সবশেষে দেখা যায় দুজনে একই কাজ সঠিকভাবে করতে পেরেছে। কিন্তু কাজ করতে ধরলেই যত প্যাঁচ।

অবাক বাজি
অবাক বাজি

একদিন সাপ্তাহিক হাটবারের কথা। বারেক আর মতিন গেছে হাটে। দুজনে বাজার সদাই করার পর দেখা হলো ফজলে করিমের সাথে। নানান কথা হলো। ফজলে করিমের হাতে ছিল চিঁড়ার টোপলা। তা দেখে বারেক বললো, ‘এতটুকু চিঁড়া তো আমি একাই একবারেই খেতে পারি।’

এ শুনে ফজলে করিমের পায়ের রক্ত চড়চড় করে মাথায় উঠে গেলো। ‘কি এত বড় কথা! তুমি যদি খাইতে পারো তাহলে চিঁড়ার দাম তো নিবই না বরং আরো পাঁচ হাজার টাকা পুরষ্কার দিবো। তবে শর্ত হলো একবারই খেতে হবে। কিন্তু পানি খেতে পারবে না। শুকনা চিঁড়া খেতে হবে।’

আরো গল্প পড়ুন…..

বারেক শর্তে রাজি হলো। তা দেখে মতিন তো হা। এতো চিঁড়া সে খাবে কেমনে? আর একবার গলায় লাগলেই সোজা কেওড়াতলায়। মানে মরণ।

মতিন একবার ফিসফিসিয়ে বারেককে বললো, দোস্ত, তুই বাদ দে পারবি না। আর যদি না পারিস তবে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। আর তোর বা আমার কাছে এতো টাকা নাই। বারেক তখন মতিনকে বললো, দ্যাখ্ না কি হয়। এই বলে ফজলে করিমের হাত থেকে চিঁড়ার টোপলাটা নিলো।

টোপলাটা খুলেই কয়েকটা মুঠ্ করলো। বাহ্ এতগুলো চিঁড়া তবু পাঁচ মুঠ্ মাত্র! এটা তো বারেকের নিমিষের ব্যাপার মাত্র। তবুও বারেক সাবধানি ছেলে। একটু এদিক ওদিক হলেই কেল্লাফতে৷ বারেক প্রথমে একমুঠ্ নিলো। গপাগপ গিলে ফেললো। পরের একমুঠ্ নিতেই কাম সারা! সোজা আটক হলো গলায়। এবার বুঝি মরণ হয়!

কিন্তু না। বারেক অতি সংগোপনে ঢোক গিলে চিঁড়াগুলো চিবোতে লাগলো। যা! এই মুঠ্টাও শেষ। এভাবে দেখা গেলো চতুর্থ মুঠ্ চিঁড়াও শেষ। বিপত্তি বাঁধল পঞ্চম মুঠে। বারেক যেই সব চিঁড়াগুলো মুখে দিলো অমনি সারা মুখে গেলো আটকে৷

একটু আগে খাওয়া চিঁড়াগুলো বারেকের মুখের সব লালা শুকিয়ে দিয়েছে। এখন সে চিবানোর শক্তিটাও পাচ্ছে না।

এক মিনিট যায়- দুই মিনিট যায়- পাঁচ মিনিট, আট মিনিট, দশ মিনিট শেষে এগারো মিনিটের পর দেখা গেলো বারেক হাত নড়ালো৷ মতিনকে হাত নেড়ে বোঝালো, দোস্ত আর পারি না৷ এবার বুঝি মরণ হবে! দেখা যাচ্ছে বারেকের নিঃশ্বাস ঘন হতে থাকে। বারবার চোখগুলো উল্টিয়ে যায়। তারপরও সে নাছোড়বান্দা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেও মতিনকে ইশারায় বললো কিছুতেই পানি খাবে না।

না আর পারা যায় না। এবার গলায় আটকে যাচ্ছে শুকনা চিঁড়া। মনে হচ্ছে এখুনি নিঃশ্বাস বন্ধ হবে। পানি না পেলে আর কিছু করার থাকবে না৷ সোজা পটল তুলতে হবে৷

ধীরে ধীরে বারেকের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কি করবে আর ভেবে পায় না। এতক্ষণে মতিন আশেপাশে খুঁজতে থাকে পানির কল। না কোথাও পানি নাই৷ কাঁদো কাঁদো হয়ে দোকানগুলোতে খুঁজতে থাকে। ফজলে করিমও খুব ভয় পেয়ে যায়। যা করেই হোক ছেলেটাকে বাঁচাতেই হবে।

সর্বশেষ পোস্টগুলো পড়ুন…….

না হলো পাঁচ হাজার টাকা। তবু একটা প্রাণ বাঁচা চাই। মতিন উপায় দেখতে পায় না। ততক্ষণে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা পিচ্চিকে কামরাঙা খেতে দেখে।

এমতাবস্থায় মতিনের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সেও কামরাঙা কিনে নেয়। সাথে কামরাঙার দোকানি একটু লবনও হাতে দেয়। মতিন তাড়াতাড়ি বারেকেরে সামনে এসে লবনে মাখিয়ে কামরাঙা খেতে থাকে। এতে করে বারেকের জিহ্বায় জল আসে।

ধীরে ধীরে চিঁড়া ভিজে যায়। এভাবে সামান্য কিছুক্ষণ থাকার পর চিঁড়া ভিজে গেলে বারেক চিবিয়ে খায়। এ যাত্রায় নিজের জীবনের সাথে পাঁচহাজার টাকা পেলেও বারেক আর কখনোই এরকম বাজি লড়ে নাই।

ট্রিক ব্লগ বিডির সার্ভার জটিলতায় আমরা সার্ভার পরিবর্তন করেছি। তারপরও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। আপনি কোন সমস্যা ফেলে দয়া করে কমেন্ট করে জানান।

হাবিব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top