ডাইনি বউ | কাল্পনিক বাংলা গল্প | মোঃ আরিফ হোসেন

গল্প- ডাইনি বউ
লেখক- মোঃ আরিফ হোসেন

হুমায়ুন আহমেদের লীলাবতী উপন্যাস পড়তেছি। অনেক চমৎকার লেখা। পড়তেই মন চায়। কখনো সখনো নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়েও পড়ি। একবার পড়া শেষ। এখন নতুন করে আরেকবার রিভাইস দিচ্ছি।

আমার কাঁধে মাথা দিয়ে পড়তেছে আরেকজন। সেই আরেকজনটা কে তা আমি বলবো না। পাঠক নিশ্চয়ই জানে কাঁধে মাথা রাখতে পারে কে। আমি একটা জায়গায় পড়তে ধরে মুচকি মুচকি হাসতেছি। বাহ্ চমৎকার এতো সুন্দর লেখা আর জীবনে পড়ি নাই।

কিন্তু এই লেখাটাতে পাশের জনের আপত্তি আছে। পাশের জন মানে যিনি আমার কাঁধে মাথা রাখছে। সে তো চোখ বড় করে তাকালো। বললো, এরকম বাজে লেখা লেখতে পারছে হুমায়ুন আহমেদ?

এমন অসভ্য আমি জীবনে দেখি নাই। ছিঃ ছিঃ ছিঃ! লেখকেরা এসব খারাপ কথাও লিখে! আমি বললাম কি এমন খারাপ লিখেছে? এতটুকু রোমাঞ্চকর লেখা তো দু একটা লাইনে আসতেই পারে। তাই বলে লেখক বাজে হলো কেমনে?

সে বললো, লেখক বাজে না হলে এরকম বাজে লেখা লিখতেই পারত না। কি অসভ্য! দেখো না এই লাইনটাতে ফুলবানু আয়নাকে বললো, ‘মুখের আর হাতের চামড়ার রঙ কোন রঙ্ না। পেটের চামড়ার রঙেই আসল রঙ্। ও নতুন বউ শাড়ির আঁচলটা টেনে পেটের চামড়া দেখাও।’

দেখছো, তোমার প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ কেমন বাজে স্বভাবের লেখক। নারীদের শরীর নিয়েও লিখতে দ্বিধা করে নাই।

আমি চোখ কটমট করে বললাম, তা যাই হোক। এখন চুপটি করে থাকো। আর আমাকে উপন্যাসের প্রথম পাঠ শেষ করতে দাও। এই বলে আমি আবার পড়া শুরু করলাম। বেশ খানিকক্ষণ পড়ার পর বইটা এক ঝটকায় বন্ধ করলাম।

না, এই লাইনটা দেখলে আমার পাশেরজন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে। আমার কাছে থেকে সেও বইটা এক ঝটকায় নিলো। যা! এই বুঝি লাইনটা পড়তেছে। না তাকে কিছুতেই পড়তে দেওয়া যাবে না।

তবুও চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। সে লাইনটা পড়বেই। অগত্যা তাকে আর বিরক্ত করলাম না। কি আছে কপালে তাই কল্পনা করতেছি। হয় আজ হুমায়ুন আহমেদের নাক ফাটবে নয় আমার দাঁত। এমনিতেই কিছুদিন আগে আমার সামনের সারির একটা দাঁত নাই করে দিয়েছে।

ডাইনি বউ
ডাইনি বউ

হয়েছিল কি, সেদিন হাটবার ছিলো। আমি হাট থেকে সংসারের যাবতীয় খরচ করে ফিরে এলাম। এসেই দেখি সে রুটি ডলতেছে। মোটামুটি মেজাজ গরম দেখলাম। তেমন কথা না বলে হাতের ব্যাগটা তার দিকে বাড়িয়ে দিতেই চোখ কটমট করে তাকালো।

‘পড়িস্ তো পড়্ মালির ঘাড়ে, সে ছিলো গাছের আঁড়ে।’ আমার বেলায় তা হলো না। সোজা মালির ঘাড়েই পড়লাম। সে চোখ দুটো সাত,পাঁচবার ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আমার পান কই? আমি তো বিদ্যুৎ শক্ খাওয়ার মত করে হকচকিয়ে উঠলাম। ইস রে! পান তো নেওয়ার কথা খেয়াল ছিলো না৷

ট্রিক ব্লগ বিডির আরো গল্প পড়ুন……

তবুও কোন কথা না বলে নীরব দর্শকের মত চেয়ে রইলাম। যা আছে আজ কপালে! সে দেখি ব্যাগের সব খরচ নামাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে খরচ গুলো ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। তা দিক্ না একটু৷ আমার তাতে আপত্তি নাই। শুধু পান না পেয়ে মাথা গরম না করলেই হয়।

সে পান পেলো না৷ হরিণ শিকারে ব্যর্থ হওয়া বাঘের মত এবার সে ফুলে উঠলো। শুধু ফুলে নয়, এক প্রকার গর্জেই উঠলো৷ এক্ষুণি আমার পান চাই৷ আমি মাথা নিচু করে আছি। সে উঠে দাঁড়িয়ে আমার শার্টের কলার ধরে বললো, মিনসে কথা কানে যায় না? পান কই?

বললাম, কালকে এনে দিবো৷ এই শুনে সে হাতে ধরা রুটি ডলা বেলন দিয়ে আমার মুখ বরাবর এক বারী। ব্যস! কেল্লা ফতে। মানে সেদিনের পর থেকে আমার সামনের সারির একটা দাঁত নাই। এবার নিশ্চয়ই পাঠক বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলতেছি? হ্যাঁ, আমি আমার একমাত্র গিন্নির কথাই বলতেছি৷

সেই সিংহ রাশির গিন্নিসহ হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস পড়তেছি। আর হুমায়ুন আহমেদ এমন লেখক আগে জানতাম না। হুদাই আমাকে এতগুলো কথা শুনলো। এবার এই লাইনটা পড়ে যে কি হয় আল্লাহ জানে।

আমার তো ধারণা এবার হুমায়ুন আহমেদের নাক ফাটবে। বউ ইতিমধ্যে লাইনটা পড়া শুরু করছে, ফুলবানু সিদ্দিকুর রহমানের দ্বিতীয় বউ রমিলাকে বলতেছে, ‘ও নাতবউ শুনো, ঘোড়ার চেট দেখছো? দেখো নাই? না দেখে থাকলে গফ যেটা করতেছি তা বুঝবা না। সিদ্দিকরে কইয়ো একটা মর্দ ঘোড়া কিনতে। মর্দ ঘোড়ার পাছায় ঝাড়ু দিয়া খোঁচা দিলে ছলাৎ করে ঘোড়ার চেট বাহির হয়। এইটা একটা দেখনের মত জিনিস। হাহাহাহা।’

সর্বশেষ পোস্টগুলো পড়ুন……

এই লেখা পড়ে কিঞ্চিৎকাল আগে আধমরা সাপের মত বউ আমার ফুঁসে উঠলো। কয়েকবার জোরে নিঃশ্বাস ফেললো৷ গর্জে উঠে বললো, আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। পাঠক এবার শেষদৃশ্য বুঝে নিবেন।

ডিসক্লেইমার

এই গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এই গল্পের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে আঘাত করা লেখক ও ট্রিক ব্লগ বিডির উদ্দেশ্য নয়। এরকম কিছু হয়ে থাকলে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এব্যাপারে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

1 thought on “ডাইনি বউ | কাল্পনিক বাংলা গল্প | মোঃ আরিফ হোসেন”

  1. দারুন একটা গল্প
    ইন এ রিলেশনশিপ১-৩০(ধারাবাহিক রোমান্টিক গল্প)মোর্শেদা হোসেন রুবী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top